ভোজনবিলাসীদের কাছে সবচেয়ে প্রিয় মসলা হলো চুইঝাল। মাংসের স্বাদ বাড়াতে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ যুগ যুগ ধরে অন্যান্য মসলার সাথে ‘চুইঝাল’-এর ব্যবহার করে আসছে। এই অঞ্চলের মানুষের কাছে মসলাটি অনেক প্রিয়। সারাবছরই চাহিদা ও দামের দিক থেকে ওপরে থাকে মসলাটি। তবে ঈদ আসলেই ‘চুইঝালের চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুন। এই সুযোগে ব্যবসায়ীরা পকেট কাটেন ভোক্তাদের। কোরবানি সময় যত ঘনিয়ে আসছে ফুলতলায় ‘চুইঝালের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে ‘চুইঝালের ভ্রাম্যমান দোকান নিয়ে বসেছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। দোকানগুলোতে ভীড়ও বাড়ছে ক্রেতাদের। স্বাভাবিক সময়ে চুইঝাল কেজি প্রতি ৬০০ থেকে ১০০০ টাকা থাকলেও বর্তমানে আকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত।
ফুলতলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা খুলনা, নড়াইল, যশোর, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট এলাকায় চুইঝালের চাষ হয়। মসলাটি এসব জেলায় ব্যাপক জনপ্রিয়। বর্তমানে দেশের অন্যান্য জেলাতেও মসলা হিসেবে এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। চুই লতা জাতীয় গাছ। এর কান্ড ধূসর এবং পাতা পান পাতার মতো, দেখতে সবুজ রংয়ের। চুইঝাল খেতে ঝালও হলেও এর রয়েছে বিভিন্ন ধরণের ঔষধি গুন। চুই লতার শিকড়, কান্ড, পাতা সবই ভেজষ গুনসম্পন্ন। এছাড়াও মসলা হিসেবেও এটি ব্যবহৃত হয়। তবে ঝাল হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় হাঁসের মাংস ও গরুর মাংস রান্না করতে। রান্নার জন্যে চুইঝালের কান্ড ব্যবহার করা হয়। চুইঝালে দশমিক ৭ শতাংশ সুগন্ধি তেল থাকে। এছাড়াও এতে রয়েছে আইসোফ্লাভোন, অ্যালকালয়েড, পিপালারিটিন, পোপিরন, পোলার্টিন, গ্লাইকোসাইডস, মিউসিলেজ, গ্লুকোজ, ফ্রুকটোচ, সিজামিন, পিপলাস্টেরল।
ফুলতলার উত্তর বাজারের মোড়ে চুইঝাল বিক্রেতা ফরহাদ শেখ বলেন, চুইঝাল সারাবছর মোটামোটি ভালোই বিক্রি হয়। তবে কোরবানির উৎসবে চুইয়ের বিক্রি কয়েকগুন বৃদ্ধি পায়। যার ফলে পাইকারি ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দেন, আমাদেরও বাড়তি দামে বিক্রি করতে হয় ক্রেতাদের কাছে।
সোহাগ হোসেন নামের অপর এক বিক্রেতা বলেন, আগে চুইঝাল চিকন (আকারে ছোট) ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায় ও কিছুটা বড় চুইঝাল ৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতাম। কোরবানি উপলক্ষে বাজারে চাহিদা বাড়ায় পাইকারী দরে কিনতেই বেশি টাকা গুনতে হচ্ছে। তাই চুইঝালের সাইজ অনুযায়ী কেজি প্রতি ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। চুইঝাল কিনতে আসা দামোদর গ্রামের সাজ্জাদ মোল্যা বলেন, সারাবছর মাঝে মাঝে চুইঝাল খাই মাংসের সাথে। কিন্তু কোরবানির সময় গরুর মাংসের সাথে চুইঝাল না হলেই চলে না। ঈদের সময় চুইঝাল দিয়ে রান্না করা মাংস অতিথিদের খুবই পছন্দের। দাম একটু বৃদ্ধি পেলেও, মাংস খেতে চুইঝাল লাগবেই।
আলকা গ্রামের ইদ্রিস মোল্যা নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘চুইঝালের দাম ও চাহিদা ঈদ আসলেই বেড়ে যায়। তাই ভিড় এড়াতে আগেভাগেই চুইঝাল কিনতে এসেছি। আমরা শুধু গরুর মাংস না, সব ধরণের মাংস ও মজাদার খাবারেই চুইঝাল খাই। তবে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কোরবারি উপলক্ষে দ্বিগুন দামে বিক্রি হচ্ছে মসলাটি।
ফুলতলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাজিয়া সুলতানা বলেন, ব্যক্তিগত ও বানিজ্যিকভাবে ফুলতলায় চুইঝালের চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ মসলাটি কর্তমানে এলাকার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হচ্ছে। তবে কোরবানির সময়ে চাহিদা বাড়ায় এ মসলাটি একটু বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। আর ঈদ আসলে চুইঝালের কদরও বেড়ে যায়।
খুলনা গেজেট / আ হ আ