উম্মতের দুর্যোগপূর্ণ সন্ধিক্ষণে তৎকালীন নেতৃস্থানীয় আয়েম্মা ও মুজতাহেদীনরা হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম ও তদীয় সাহাবায়ে কেরামদের ঈমান-আকায়েদ যা ছিল, তা কোরআন, হাদিস, ইজমা ও কিয়াসের মাধ্যমে নিরীক্ষণ করে অসংখ্য কিতাব সংকলন করে সমাজের সম্মুখে রেখে গেছেন। যারা তার অনুসারী তারাই আহলুস সুন্নাত আল জামায়াত নামে অভিহিত। এ দল আজ থেকে প্রায় ১৪৩৭ বছর যাবত পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছে। এ দলের মুখপাত্রগণ ঈমান আকায়েদ সংশ্লিষ্ট বিষয়াবলীর মীমাংসা করতেন দলিল চতুষ্টয়ের ভিত্তিতে। তাই আমাদের সর্বদা এ মূলনীতি স্মরণ রাখতে হবে।
বর্তমান যুগে সমাজকে বিভ্রান্তির ধূম্রজালে পতিত করতে ঈমান হারা করার জন্য কয়েকটি ক্ষুদ্রতম দল মাথাচারা দিয়ে উঠছে। তারা ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম, কিয়াম, ফরয নামাজের পর হাত তুলে দোয়া করাসহ আরো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে উম্মতে মুহাম্মদীর মধ্যে ফাটল সৃষ্টি করতেছে। তাদের এ অন্ধ চোখকে খুলে দিতে, পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লামকে সামনে রেখে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিতর্কের সমাধানকল্পে পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে আমাদের এ সামান্য আয়োজন।
অভিধানের দৃষ্টিতে মিলাদ, মওলেদ এবং মওলুদ এই তিনটি শব্দের অর্থ নির্মরূপ। আরবি ভাষায় সর্বশ্রেষ্ঠ অভিধান লেসানুল আরব ও বৃহত্তম অভিধান তাজুল আরূছ, কামুস, মুহকাম, তাহজীব, আছাছ, ছেহাহ, ও জওহরি এবং মিছবাহ প্রভৃতি লোগাতে (অভিধানে) বর্ণিত আছে যে, অলিদ, মওলুদ শব্দের অর্থ নবজাত শিশু। মওলুদুর রেজাল অর্থ মানুষের জন্মকাল, জন্মস্থান। মিলাদুর রেজাল অর্থ মানুষের জন্মকাল, জন্মদিন। মিলাদ শব্দটি জন্মকাল ও জন্মদিন ব্যতীত অন্য কোনো অর্থে ব্যবহত হয় না। সুতরাং মিলাদুন্নবী, মাওলেদুন্নবী ব্যাখ্যাই হচ্ছে হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম-এর জন্ম কাহিনী ও তৎসংশ্লিষ্ট ঘটনাবলী আলোচনা করা। (আর আমরা সকলেই জানি ঈদ অর্থ খুশি বা আনন্দ প্রকাশ করা।
ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ব্যাখ্যাই হচ্ছে প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্মদিন বা জন্মকাহিনী ও তৎসংশ্লিষ্ট আলোচনা করা বা খুশি উদযাপন করা। এ মাসেই প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম ধরার বুকে আগমন করেছেন। এ জন্যই সুন্নি ওলামায়ে কেরামগণ এ বরকতময় মাসটিকে ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম বলেছেন এবং পালন করে থাকেন।)
পবিত্র কোরআন-এর আলোকে ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম :এখানে পবিত্র কোরআনের কয়েকটি আয়াত উল্লেখ করা হলো। যা দ্বারা প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম-এর মিলাদ পালন করা শুধু বৈধ নয়, বরং উত্তম আমল হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে। যা নিচে বর্ণনা করা হলো :১ম আয়াত : মহান আল্লাহ তায়াআলা পবিত্র কালামুল্লাহ শরিফে ইরশাদ ফরমান- হে মানবকুল! তোমাদের কাছে উপদেশ বাণী এসেছে, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে এবং অন্তরের ব্যাধির নিরাময়, হিদায়েত ও রহমাত মুসলমানদের জন্য। হে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম আপনি বলুন, আল্লাহ’র অনুগ্রহ এবং তাঁর দয়ায় সুতরাং এতে তারা আনন্দিত হওয়া উচিত। এটিই উত্তম সে সমুদয় থেকে যা তাঁরা সঞ্চয় করেছে। (সুরা ইউনুস : ৫৭-৫৮)
অত্র আয়াতে কারিমায় হিদায়েত ও রহমাত পেয়ে আনন্দ প্রকাশ করতে বলা হয়েছে। এবং এটি সমস্ত আমলের চেয়ে উত্তম বলা হয়েছে। এখন বিচার এই যে, হিদায়েত ও রহমাত, দ্বারা উদ্দেশ্য কি? এ সম্পর্কে বিশ্ব বিখ্যাত ‘তাফসিরে তাবায়ী’ শরিফের মধ্যে ইমাম ইবনে জারীর আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাছ থেকে বর্ণনা করেছেন, হেদায়েত দ্বারা উদ্দেশ্য ইসলাম আর ‘রহমাত’ দ্বারা উদ্দেশ্য কোরআন।
হাফেজে হাদিস আল্লামা জালালুদ্দীন সূয়ুতি রাহমাতুল্লাহি তাআলা আলাইহি তার বিশ্বনন্দিত তাফসির ‘আদদুরূল মানসুর’ এর মধ্যে একই সাহাবি থেকে বর্ণনা করেছেন।‘রুহুল মায়ানি’তে আল্লামা নিসারুদ্দীন মাহমুদ আলুসী রাহমাতুল্লাহি তাআলা আলাইহি এরুপ বর্ণনা করেন। তাফসিরের বর্ণনায় এ স্পষ্টভাবে বোঝা যায় তোমরা মহামূল্যবান সম্পদ পেয়েছ এজন্য ঈদ পালন কর বা খুশি উদযাপন কর।
পবিত্র কোরআনের সূরা আম্বিয়ার ১০৭ নং আয়াতে আল্লাহ তায়াআলা বলেন, আর আমি আপনাকে জগৎসমূহের জন্য একমাত্র রহমাত হিসেবেই প্রেরণ করেছি। এখানে রহমাত বলতে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লামকে বলা হয়েছে। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, আর তোমরা সেই নিয়ামতের কথা স্মরণ কর। যা আল্লাহ তায়াআলা তোমাদেরকে দান করেছেন। (সূরা আল ইমরান : ১০৩)
আল্লাহ তায়াআলা দুনিয়াতে যত নিয়ামত দান করেছেন তার মধ্যে সর্বোত্তম নিয়ামত হলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম। এ দুটি আয়াতের আলোচনায় এ স্পষ্ট প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম-এর দুনিয়াতে আগমনের দিন আনন্দ উৎসব তথা ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম পালন করা সর্বোত্তম আমল।
ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম উদযাপন করা প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম-এর আনুগত্যের বহি:প্রকাশ। যেমন আল্লাহ তায়াআলা বলেন, তোমরা আল্লাহ’র কথা মান্য কর, রাসূলের আনুগত্য কর এবং তোমাদের মধ্যে যারা সৎশাসক তথা ইমাম, মুজতাহিদ সৎশাসক শরিয়াতের আইনজ্ঞ মাযহাবের ইমামগণ তাদের আনুগত্য কর।
উপরিউক্ত আলোচনায় আমরা জানতে পারি পবিত্র কোরআনে ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আলোচনা রয়েছে। এবং এটাকে উত্তম আমল বলা হয়েছে। সুতরাং এটা আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে মহান ইবাদাতে পরিণত।হাদিসের আলোকে ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম :
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম ও সাহাবায়ে কিরাম রাদি-আল্লাহু তাআলা আনহুদের যুগেও মিলাদ শরিফ পালিত হয়েছে। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মিলাদ সম্পর্কে প্রায় ২১৮টি হাদিস রয়েছে। এখানে তার কয়েকটি হাদিস আলোকপাত করা হলো।
হযরত ইবনে আব্বাস রাদি-আল্লাহু তায়াআলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম বলেছেন, আমি আদমের পৃষ্ঠদেশ থেকে পরস্পরা ধারায় বৈবাহিক সূত্রে মিলনের ফলে মানবরূপে আমার পিতা-মাতা থেকে জন্মলাভ করেছি। ব্যভিচার বা যিনার মাধ্যমে নয়। (ইবনে সাদ, ইবনে আসাকির, তাবরানী, মাসনাদে ওমর, আবু নাঈম, ইবনে আবি শাইবা, মাসনাদুল ফেরদাউস)
হযরত আনাস রাদি-আল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম ভাষণে বলেছেন, আমি মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল মোতালেব ইবনে হাশিম ইবনে আবদে মানাফ ইবনে কুশাই ইবনে মালেক ইবনে নফর ইবনে কিনানা ইবনে খুযাঅহ ইবনে মুফরিকা ইবনে ইলিয়াস ইবনে যুফার ইবনে নাযার। যে স্থানে মানুষ দু’দলে বিভক্ত হয়েছে সেখানে আল্লাহতা’আলা আমাকে উত্তম দলে রেখেছেন। আমি আমার পিতা-মাতা থেকে জন্মগ্রহণ করেছি। হযরত ইরবাদ্ব ইবনে সারিয়াহ রাদি-আল্লাহু তায়াআলা আনহু থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম বলেছেন, তখন থেকে আমি আল্লাহ তায়াআলার বান্দা এবং নবীকুলের সর্বশেষ নবী, যখন আদম আলাইহি-সসালাওয়াতু ওয়া-সাল্লাম মাটির সঙ্গে মিশ্রিত ছিলেন। আমি তোমাদের আরও জানাচ্ছি যে, আমি হলাম আমার পিতা নবী হযরত ইবরাহিম আলাইহি-সসালাওয়াতুু ওয়া-সাল্লাম-এর দোয়ার ফসল এবং নবী হযরত ঈসা আলাইহি-সসালাওয়াতু ওয়া-সাল্লামের সুসংবাদ, আর আমার মাতার স্বপ্ন। নবীদের মাতাগণ এভাবেই স্বপ্ন দেখতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লামের মাতা তাকে প্রসবের সময় এমন এক নূর প্রকাশ পেতে দেখলেন যার আলোতে সিরিয়ার মহলগুলো দেখা যাচ্ছিল। (মুসনাদে আহম্মদ, তাবরানী, হাকেম, বায়হাকি, আবু নাঈম)
হযরত আনাস রাদি-আল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম বলেছেন, আমি আমার রবের নিকট থেকে সম্মানিত যে, আমি খাতনা অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয়েছি। আমার লজ্জাস্থান কেউ দেখেনি। (তাবারানী আওসাত) “হযরত আবু কাতাদাহ আনসারী খাজরাজি রাদি-আল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লামের কাছে সোমবার রোজা রাখা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি উত্তরে বলেন, এদিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং এইদিনে আমার প্রতি নবুয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। (মুসলিম শরিফ ৩৬৪পৃষ্ঠা, মুসনাদে আবী শাইবা)
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম নিজেই নিজের মিলাদ বর্ণনা করেছেন :হযরত মুতালেব ইবনে আবু ওয়াদাহ রাদি-আল্লাহু তায়াআলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত আব্বাস রাদি-আল্লাহু তা’আলা আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম সম্পর্কে কারো কাছ থেকে যেন কিছু বিরূপ সমালোচনা ও কথাবার্তা শুনে তার কাছে এসে তা বললেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম মিম্বরের উপর বসে উপস্থিত সাহাবিদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, আমি কে? তোমরা জান কী? সাহাবিগণ বললেন, আপনি আল্লাহ’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম। আপনার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক!
তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম বললেন, আমি হচ্ছি আবদুল্লাহ’র পুত্র আব্দুল মুত্তালিবের নাতি। আল্লাহ তায়াআলা সৃষ্টিকুলকে সৃষ্টি করে আমাকে সর্বোত্তম সৃষ্টির অন্তর্ভুক্ত করেছেন। অত:পর সৃষ্টিকুলকে দু’টি দলে বিভক্ত করে আমাকে উত্তম দলে রেখেছেন। অত:পর অনেক গোত্র সৃষ্টি করে আমাকে উত্তম গোত্রে সৃষ্টি করেছেন। পরিবারে অন্তর্ভুক্ত করেছেন এবং স্বত্তাগতভাবে সম্মানীত করেছেন। (তিরমীযি হাদিসটিকে হাসান বলেছেন)
হযরত সালমান রাদি-আল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লামকে বলতে শুনেছি, হযরত আদম আলাইহি-সসালাওয়াতু ওয়া-সাল্লাম সৃষ্টির চৌদ্দ হাজার বছর পূর্বে আমি এবং অলি আল্লাহ তায়াআলার সম্মুখে একটি নূর রূপে ছিলাম। অত:পর আল্লাহ তায়াআলা দু’টি ভাগে ভাগ করেন। এর একটি ভাগ হচ্ছি আমি এবং অপরটি হচ্ছেন অলিগণ। (মাসনাদে আহমদ মানাকিব)সাহাবায়ে কেরাম ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম উদযাপন করেছেন : যদি প্রশ্ন করা হয় যে, ঈদ-ই-মিলাদুন্নবীর এত ফযিলত হয়, তাহলে সাহাবায়ে কেরাম কেন পালন করেন নাই? জবাবে বলব, আল্লামা জালালুদ্দীন সূয়ুতী রমাতুল্লাহ তার কিতাবের মধ্যে উল্লেখ করেন, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদি-আল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত।
একদা তিনি নিজ ঘরে সমবেত সাহাবীগণকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লামের বিলাদাত/মিলাদ শরিফের ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছিলেন। এতে শ্রবণকারীগণ আনন্দ ও খুশি তথা ঈদ প্রকাশ করতেছিলেন এবং আল্লাহ পাকের প্রশংসা করতেছিলেন ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লামের উপর দরুদ শরিফ পাঠ করতেছিলেন এমতাবস্থায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম সেখানে উপস্থিত হলেন এবং তাদের অবস্থা দেখে বললেন, তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব। উক্ত কিতাবে আরো উল্লেখ আছে, হযরত আবু দারদা রাদি-আল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত।
একদা তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লামসহ আবু আমের আনসারী রাদি-আল্লাহু তাআলা আনহু-এর বাসায় উপস্থিত হয়ে দেখলেন, তিনি তার সন্তানাদি, আত্মীয়স্বজন, জাতি-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশীদেরকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লামের বিলাদাত শরীফের ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছিলেন এবং বলছিলেন, এইদিন (অর্থাৎ এইদিনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম আগমন করেছেন) এতদার্শনে ও শ্রবণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা তাঁর রহমাতের দরজা তোমাদের জন্য খুলে দিয়েছেন ও সমস্ত ফিরিশতাগণ তোমার জন্য ক্ষমা চাচ্ছেন।
আর বলেন, যে তোমার মতো এরূপ কাজ করবে, সেও নাজাত পাবে। সুবহানাল্লাহ। এ হাদিস দু’টি দ্বারা প্রামাণিত হলো, সাহাবায়ে কেরামদের যুগে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লামের মিলাদ তথা জন্মদিন বা জন্মকাহিনী ও তৎসংশ্লিষ্ট আলোচনা হতো। উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বোঝা যায়, ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম সর্বোচ্চ স্তরের মুস্তাহাব আমল। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম উদযাপনের মাধ্যমে হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লামের সন্তুষ্টি অর্জন করার তৌফিক দান করুন আল্লাহুম্মা আমিন।
লেখকঃ- বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ লেখক ও গবেষক।