রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চারটিসহ মোট ৯টি ব্যাংক রেড জোনে আছে। এতে ব্যাংকগুলোর ভঙ্গুর আর্থিক দশা সামনে এসেছে। আর ইয়েলো জোনে রয়েছে ২৯টি। অর্থাৎ সেগুলোর পারফরম্যান্স মাঝারি পর্যায়ের। সবমিলিয়ে ৩৮টি ব্যাংক দুর্বল হয়েছে।
এছাড়া গ্রিন জোনে রয়েছে ১৬টি ব্যাংক।সেগুলোর অবস্থা ভালো। এর মানে এগুলোর কার্য সম্পাদন সন্তোষজনক। বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ব্যাংকস হেলথ ইনডেক্স (বিএইচআই) অ্যান্ড হিট ম্যাপ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, মোট ৫৪টি ব্যাংকের সার্বিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে এই ম্যাপ তৈরি করা হয়েছে।
রেড জোনে রয়েছে মোট ৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংক। এর মধ্যে ৪টিই হলো রাষ্ট্রায়ত্ত। সেগুলো হলো-বেসিক ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংক। এ জোনে রয়েছে সমান সংখ্যক বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক। এগুলো হলো-পদ্মা ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও এবি ব্যাংক। আর মাত্র ১টি বিদেশি ব্যাংক রেড জোনে পড়েছে। সেটি হলো ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান।
মোট ২৯টি ব্যাংক ইয়োলো জোনে আছে। এর মধ্যে ৩টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের অবস্থান রেড জোনের কাছাকাছি। সেগুলো হলো বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক।
ইয়েলো জোনে রয়েছে ৩টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, ১৯টি প্রচলিত বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং ৮টি শরিয়াহভিত্তিক ইসলামী ব্যাংক। সেগুলো হলো- সোনালী ব্যাংক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, ওয়ান ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্সিয়াল ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এনআরবিসি ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক ও পূবালী ব্যাংক।
গ্রিন জোনে পড়েছে ১৬টি ব্যাংক। সেগুলো হলো-প্রাইম ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, হাবিব ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, ব্যাংক আলফালাহ, ব্যাংক এশিয়া, সীমান্ত ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, উরি ব্যাংক, এইচএসবিসি, কমার্সিয়াল ব্যাংক অব সিলন, সিটি ব্যাংক এনএ, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বাংলাদেশ ও স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া। এর মধ্যে ৮টিই বিদেশি। অর্থাৎ গ্রিন জোনে রয়েছে মাত্র ৮টি দেশি ব্যাংক।
২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে গত বছরের জুন পর্যন্ত ৫৪টি ব্যাংকের তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। এসময়ে ব্যাংকগুলোর বিগত ছয়টি অর্ধবার্ষিক উপাত্ত আমলে নেয়া হয়েছে। এ পদ্ধতি অনুসরণ করে ব্যাংকস হেলথ ইনডেক্স (বিএইচআই) অ্যান্ড হিট ম্যাপ তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি বিভাগ।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক এবং আইসিবি ইসলামিক ব্যাংককে এই ম্যাপ থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। কারণ ব্যাংকগুলোর ডেটা পয়েন্ট নমুনা ব্যাংকের অন্যান্য পর্যবেক্ষণ থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে আলাদা। এছাড়া বেঙ্গল কমার্সিয়াল ব্যাংক, সিটিজেন ব্যাংক, কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ এবং প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংককে এই ম্যাপের বাইরে রাখা হয়েছে। কারণ, এগুলোর ঐতিহাসিক তথ্য নেই।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিদায়ী ২০২৩ সালে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে রেড জোনে থাকা ১২টি ব্যাংকের ঋণ ৯০ হাজার কোটি টাকা। মোট খেলাপি ঋণের যা ৬২ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শিল্প গড়ের তুলনায় ইয়োলো জোনের ব্যাংকগুলোর স্বাস্থ্য তুলনামূলক খারাপ। ফলে সেসব ব্যাংকে তদারকি প্রয়োজন। আর রেড জোনে পড়া ব্যাংকগুলোর দিকে বিশেষ মনোযোগ দেয়া দরকার।
খুলনা গেজেট/কেডি