পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, বিশ্বের যত শক্তিধর রাষ্ট্রই হোক না কেন, তারা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের ক্ষমতা রাখে না। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে এদেশের ১৬ কোটি মানুষ। সমস্যা থাকলে এই পার্লামেন্টে আলোচনা হবে। রাজপথে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। সেখানে এর সমাধান করা হবে।
সোমবার সংসদের বৈঠকে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে সকালে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সংসদে দাবি করেন, গত পাঁচ বছরে বিএনপি-জামায়াত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট ফার্মে কত টাকা দিয়েছে এর প্রমাণ তার কাছে রয়েছে। ২০১৫ সালে একিন কোম্পানি অ্যাসোসিয়েটসের সঙ্গে বিএনপির নয়াপল্টনের অফিসের ঠিকানা দিয়ে চুক্তি করা হয়েছে। মাসিক ৫০ হাজার ডলারের বিনিময়ে এই চুক্তি তিন বছর অব্যাহত ছিল। বছরে ছয় লাখ ডলার দেওয়া হয়েছে। তিন বছরে প্রায় দুই মিলিয়ন ডলার। এ ধরনের দশটি ডকুমেন্টস তার কাছে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি কাগজপত্রগুলো উঁচু করে সংসদে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
বিএনপি দলীয় এমপি হারুনুর রশীদের বক্তব্যের জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘পবিত্র কোরআনের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি ( হারুন) বলেছেন, জানা সত্ত্বেও মিথ্যাকে গোপন করিও না। আমি দাবি করব তার এই বক্তব্যটি তার রাজনৈতিক জীবনে পালন করছেন কি-না তা প্রমাণ করে দেখাবেন। নিজেকে সত্যিকারের মুসলমান হিসেবে যদি দাবি করে থাকেন, তাহলে সেই মিথ্যাগুলোকে যেন গোপন না করেন। অন্ততপক্ষে ভবিষ্যতে এবং এই সংসদে ২০২২ সালের শীতকালীন অধিবেশনে, তার দলের সাবেক ও বর্তমান নেতাদের কুকর্মগুলো যেন প্রকাশ করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি নাকি স্থানীয় সরকার নির্বাচন পরিহার করেছে। কিন্তু রাজশাহীতে প্রতিটি উপজেলায়ই বিএনপির প্রার্থী ছিল। তারপরেও রাজশাহীর মতো জায়গায় নৌকার প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে ৬টি স্থানে। নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে দুটি জায়গায় । একটি ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন।’
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের অভূতপূর্ব নির্বাচন হয়েছে উল্লেখ করে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আজকে থেকে অনেক বছর আগে বলেছেন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতার কথা। নির্বাচনী প্রক্রিয়া ঠিক করতে ইভিএম ব্যবহার করার কথা। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই ইভিএম আছে। ইভিএমের মাধ্যমে স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিমূলক নির্বাচন করা সম্ভব- মাহবুব তালুকদারের মতো নির্বাচন কমিশনারও কিন্তু তা স্বীকার করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘তারেক রহমানকে এখনো কিভাবে তারা ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বলেন।’ একজন দুর্নীতিবাজ, সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি কিভাবে একটি দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হয়- পবিত্র কোরআনের আলোকে তিনি বিএনপির এমপি হারুনের কাছে জানতে চান।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিটি রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনে তাদের হিসাব প্রকাশ করে। বিএনপিকে জিজ্ঞেস করতে হবে- এই টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে গেছে কিনা? তা না হলে এতিমের টাকা মেরে খেয়ে বিদেশে পাচার করা হয়েছে, সেই টাকার ব্যবহার এখানে করা হয়েছে কিনা, সেটা তদন্ত করতে হবে। এটা বন্ধ করতে হবে। চিরতরে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ হতে হবে। বিএনপি-জামায়াতের বিচার করতে হবে। তারা বলেন দেশনেত্রী, কিন্তু খালেদা জিয়া দেশবিরোধী ব্যক্তি। দেশদ্রোহিতার কারণে তার বিচার আবার হতে হবে।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সংবিধান সংশোধন করে আমরা বলে দিয়েছি বাংলাদেশে আর কখনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার হওয়ার সুযোগ নেই। এটা নিয়ে আর সময়ক্ষেপণ করবেন না।’
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সব কূটনীতিককে আইনমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার ব্যাপারে আর কোনো কথা বলার সুযোগ নেই। বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে, আইন সংশোধন করে, তাহলে খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠাতে পারবে।’