খুলনা, বাংলাদেশ | ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ১৯ মে, ২০২৪

Breaking News

  করোনায় একজনের মৃত্যু, শনাক্ত ১১
  তিন জেলায় বজ্রপাতে প্রাণ গেল ৭ জনের
  রাঙামাটিতে সশস্ত্র হামলায় ইউপিডিএফ সদস্যসহ নিহত ২
ঘর আছে, লোক নেই!

কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপিত কয়রার শ্যাওড়াপাড়া গুচ্ছগ্রাম ছাড়‌ছে অ‌ধিবাসীরা (ভিডিও)

তরিকুল ইসলাম

খুলনার উপকূলীয় উপজেলা কয়রার বাগালী ইউনিয়নস্থ কপোতাক্ষ নদের চরে গড়ে তোলা কোটি টাকায় নির্মিত শ্যাওড়াপাড়া গুচ্ছগ্রাম ২ বছরের মধ্যে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। নাগরিক সুবিধা না থাকায় গুচ্ছগ্রাম ছেড়ে চলে গেছেন অধিকাংশ উপকারভোগী। স্বল্পসংখ্যক পরিবার বসবাস করলেও বিভিন্ন সমস্যায় মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তারা।

উপকারভোগীদের অ‌ভি‌যোগ, আশ্রয়ণ প্রকল্পে সুপেয় পানির ব্যবস্হা নেই, বিদ্যুৎ নেই, গোসলের ব্যবস্হা নেই, কপোতাক্ষ নদের জোয়ারের পানি থেকে রক্ষা পেতে নেই টেকসই বাঁধসহ চলাচলের সুব্যবস্থা। সামান্য ঝড় হলেই পড়তে হয় চরম ঝুঁকিতে। ঘর পাওয়ার পর থেকে এসব সমস্যা নিরসনের দাবি করে আসলেও অদ্যবধি কেউ কোন ব্যবস্হা নেয়নি বলে অভিযোগ আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারী ভুক্তভোগীদের। তাছাড়া প্রকল্পটির কাজ নিয়ে শুরু থেকেই নানা অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণেই সরকারের ভাল এক‌টি প্রকল্প ভেস্তে গেছে বলে মনে করে নাগরিক সমাজ। য‌দিও নদীর চরে অপরিকল্পিতভাবে গুচ্ছগ্রামটি গড়ে তোলার কারণেই কয়েকবার বাঁধ সংস্কারের পরেও পুনরায় ভেঙে যাচ্ছে বলে মনে করেন বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

৩ মার্চ শেওড়াপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে সরেজমিন যেয়ে দেখা যায়, হতদরিদ্রদের জন্য ৬০ টি ঘর থাকলেও ১২/১৪ টি পরিবার নিয়মিত বসবাস করে আসছেন। বাকী ঘরগুলো তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। কিছু ঘর রয়েছে জরাজীর্ণ অবস্থায়। মাটির তৈরি ঘরের মেঝে নষ্ট হয়ে গেছে। ৪টি নলকূপের মধ্যে ৩টি নষ্ট। ভালোটির পানিও রান্না কিংবা পানের উপযোগী নয়। বৈদ্যুতিক পিলার থাকলেও মিটারের জটিলতায় নেই বিদ্যুৎ সংযোগ। ঘরগুলোর তিন পাশের বাঁধ জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

এসময় রিক্তাদাস, জামিলাসহ বেশ কয়েকজন বসবাসকারী জানান, বাঁধের পশ্চিম ও উত্তর পাশের ভাঙা স্থান দিয়ে দীর্ঘদিন জোয়ারের পানি ওঠানামা করায় মাঠের বালু ধুয়ে নদীতে চলে যাচ্ছে। তাছাড়া নদীতে পানি বৃদ্ধি হলে বিশেষকরে চৈত্র মাসের শেষের দিক থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি জোয়ারে ঘরের আঙ্গিনায়, এমনকি মেঝেতে পানি ওঠে।

নিলিমা, শান্ত, রূপা মিস্ট্রি নামের শিক্ষার্থীরা জানান, বিদ্যুৎ না থাকায় কেউ ল্যাম্প জ্বালিয়ে পড়ালেখা করেন, আবার কেউ সোলারের আলোতে পড়াশুনা করেন। রাস্তার সমস্যায় সামান্য বৃষ্টিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে ভোগান্তীতে পড়তে হয় তাদের।

তারা আরও জানান, একদিকে বালু দিয়ে ঘরের আঙ্গিনা ভরাট করার ফলে গাছ কিংবা সবজি চাষ ভালো হয়না। যা হয় সেটাও নোনা পানিতে ডুবে মারা যায়। হাঁস-মুরগীর ফার্ম কিংবা ছাগল পালন করে আত্মকর্মসংস্থানেরও সুযোগ হয় না তাদের।

সেখানেই কথা হয় গুচ্ছগ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়া রঞ্জিতা দাস, রেবেকা, শাহজাহান মোড়ল, রেজাউল, সবুর মোড়লসহ কয়েকজনের সাথে। তারা জানান, আমরা আগে এখানে ছিলাম। তবে থাকার পরিবেশ না থাকায় চলে গেছি। খুব কষ্টে সংসার চলছে তাদের।

সচেতন মহল জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ এলাকার হতদরিদ্র পরিবারে বসবাসের জন্য শেওড়াপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৬০ টি ঘরের ব্যবস্হা করেছেন। তবে হস্তান্তরের দুই বছরের মধ্যেই ভেস্তে যেতে বসছে প্রধানমন্ত্রীর মহৎ উদ্যোগ। ৩ পাশ দিয়ে টেকসই বাঁধ নিমার্ণ করাসহ সুপেয় পানি, বিদ্যুৎ ও পুকুরের ব্যবস্থা করতে পারলে উপকারভোগীদের ভোগান্তি কমার পাশাপাশি আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হতে পারে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে আশ্রয়ণ প্রকল্প -২ এর আওতায় ৬০টি ঘর নির্মাণের জন্য ৯০ লাখ, ৪টি নলকূপ স্হাপনের জন্য ৩ লাখ ২০ হাজার, কমিউনিটি ভবন তৈরীর জন্য ৭ লাখ ৯৩ হাজার টাকা এবং আশ্রয়ণ প্রকল্পের জায়গা ভরাটের জন্য ২৫১.৪০১ মেট্রিকটন চাউল বরাদ্দ দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে তৎকালীন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (বর্তমানে মোংলায় কর্মরত) মো: জাফর রানা বলেন, মাঠ বালু দিয়ে ভরাটের বরাদ্দ ছিল, এজন্য বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। আর নদীর তীরে পাইলিংয়ের মাধ্যমে বাঁধের ব্যবস্থা করতে পারলে জোয়ারের পানি আসতো না। তবে পাইলিংয়ের বরাদ্দ না পাওয়ায় আমরা কাজ করতে পারিনি। তিনি আরও বলেন, পুকুরের বাজেট না থাকার পরেও আমরা ঘরের ভিট তৈরিতে মাটির জন্য একটি বড় পুকুর কেটেছিলাম। সেটার সংরক্ষণ করতে পারলে মাছ চাষের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। ইচ্ছা থাকার পরেও অন্যত্র চলে আসায় সেটার ব্যবস্থা করতে পারিনি। তবে বরাদ্দের পরেও সুপেয় পানির জন্য ডিপ টিউবওয়েলের ব্যবস্থা না করে স্যালো (অগভীর নলকূপ) বসানোর বিষয়ে জানতে চাইলে সদুত্তোর মেলেনি।

বাগালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ গাজী বলেন, আমি নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। বরাদ্দ পেলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবো।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, ডিপ টিউবওয়েল বসানোর সুযোগ আছে। সাকসেস হলে আমরা এবছর বসানোর ব্যবস্থা করবো। আর বাঁধ সংস্কারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তবে নদীর তীর হওয়ায় বাঁধ থাকে না। আবার কোন প্রকল্প দিয়ে জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে বাঁধ সংস্কার করা হবে। এছাড়া গুচ্ছগ্রামগুলো ভেড়িবাঁধের বাইরে হওয়ায় সিকিউর না। গুচ্ছগ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, উপকারভোগীরা ভাসমান পেশায় জড়িত। ফলে কাজের সন্ধানে তারা বিভিন্ন স্থানে চলে যায়।

উল্লেখ্য, এ উপজেলায় ৬টি গুচ্ছগ্রাম রয়েছে। নদীর চরে স্থাপিত হওয়ায় একটু ঝড়-বৃষ্টিতে অধিকাংশ স্থানেই ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হয় বসবাসকারীদের। তাছাড়া প্রায় সবগুলোতে কমবেশি সমস্যা রয়েছে।

 

খুলনা গেজেট/এএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!