খুলনার আলোচিত নাম এস এম শফিকুর রহমান মুশফিক। খুলনার নগরীর আলোচিত শেখ আবুল কাশেম হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। ছিলেন নগরীর আমতলা এলাকার টুটুল হত্যা মামলার ফাসির দন্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি। তিনি নিজেকে কখনও বিএনপি আবার কখনও জাতীয় পার্টির নেতা হিসেবে পরিচয় দেন। একাধিকবার অংশ নিয়েছেন খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে। কিন্তু আশানুরুপ ভোট না পেয়ে জামানতও হারিয়েছেন তিনি।
সর্বশেষ ২০২৩ সালের খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নেন তিনি। ওই নির্বাচনে কারচুপি এবং উচ্চ আদালতের আদেশ সম্পর্কে তিনি খুলনা প্রেসক্লাবে শনিবার সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি জানান, এ শহরের আলো-বাতাসে বেড়ে উঠা তার। ব্যক্তি জীবন কখনও সহজ ছিল না। একের পর এক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন তিনি।
তিনি আরও জানান, ছাত্র জীবন থেকে রাজনীতির সূচনা হয়েছে তার। তারুণ্যের চাওয়া পাওয়া নিয়ে কাজ করেছেন তিনি। ১৯৯০ সালে খুলনা আর্ট কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে এজিএস নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে জিএস। এরপর থেকে একটি মহল তার বিরুদ্ধে একের পর এক ষড়যন্ত্র করতে থাকে। মিথ্যা মামলার কারণে তাকে ফেরারী জীবন যাপন করতে হয়। পরবর্তী খুলনার আমতলার টুটুল হত্যা মামলায় তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেন আদালত। উচ্চ আদালত থেকে তিনি ওই মামলায় খালাস প্রাপ্ত হন। কিন্তু তাতে তিনি ধৈর্য্য হারা না হয়ে মনোবল অটুট রেখেছেন তিনি। এ শহরে তার কোন পেশীবল নেই। নেই কোন টেন্ডারবাজির অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।
তিনি আরও বলেন, ২০০৮ সালে বাগেরহাট-১ আসনে উপ-নির্বাচনে অংশ নেন তিনি। এরপর ২০১৮ সালে খুলনা সিটি কর্পোরেশন মেয়র পদে নির্বাচনে অংশ নেন এবং ২০২৩ সালের ১২ জুন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আবারও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেন। ওই নির্বাচনে আ.লীগের প্রার্থী হিসেবে অংশ নেন তালুকদার আব্দুল খালেক। যিনি জনবিচ্ছন্ন নেতা হিসেবে খুলনা নগরীতে পরিচিত ছিলেন বলে শ্রুতি আছে। তাকে জনতা নর্দমায় ফেলার জন্য প্রস্তুত ছিল। কেন না সে একটি পশুর নামে বাক্য ব্যবহার করতেন।
তিনি বলেন, আমি নির্বাচিত হলে নগরবাসি হতো মানুষের বাচ্চা। আমার কর্মদক্ষতা এবং ভিশনকে তরুণ সমাজ লুফে নেয় এবং আমি বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে চলে যাই। বিষয়টি আচ করতে পেরে ফ্যাসিস্ট সরকার ডিজিটাল কারচুপির মাধ্যমে আমাকে হারিয়ে দেয়। ওই নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখান করে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে। ইভিএম মেশিনের পূর্বনির্ধারি কমান্ড অনুযায়ী ফলাফল পাল্টে দেওয়া হয় এবং জনরায় ছিনিয়ে নেয় ফ্যাসিস্ট সরকার।
তিনি আরও বলেন, ২০২৩ সালে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে না পারি সে জন্য তার মনোনয়ন বাতিল করা হয়। পরবর্তীতে উচ্চ আদালতের রায়ের মাধ্যমে মনোনয়ন ফেরত পান তিনি। ২০২৩ সালে নির্বাচনে জয়ী হয়েছি আমি। সুতরাং এ নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করতে হবে। ২০২৩ সালের নির্বাচনের পর থেকে আমি আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই আদালতের স্মরণাপন্ন হই। বিগত সরকারের আমলে কোন বিচার পাইনি। জুলাই বিপ্লবের পর ন্যায় বিচারের আশায় ২০২৩ সালে ১২ জুন জালিয়াতির নির্বাচনের বিরুদ্ধে আদালতের স্মরণাপন্ন হই। এর আগে ২০ এপ্রিল প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনের সচিব এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রাণালয়ের সচিবের নিকট পত্র দেই এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলি। কিন্তু কোন সদুত্তর না পেয়ে আদালতের স্মরণাপন্ন হই। উচ্চ আদালত ৬ মে এক আদেশ দিয়েছেন। সেখানে ২০২৩ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ফলাফল বাতিল চেয়ে নির্বাচন কমিশনে করা আমার আবেদন আগামী ৪ সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২৩ সালের খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত তালকুদার আব্দুল খালেক ৬০.৪১ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দি ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের আব্দুল আউয়াল পান ২৩.৪৪ শতাংশ ভোট। এরপর জাতীয় পার্টির (এরশাদ) শফিকুল ইসলাম মধু ৭.০৫ ভোট, এস এম শফিকুর রহমান ৬.৭২ এবং জাকের পার্টির এস এম সাব্বির হোসেন পার ২.৩৮ শতাংশ ভোট। এ নির্বাচনে চতুর্থ স্থান লাভ করে এস এম শফিকুর রহমান জামানত হারান।
২০১৮ সালের নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচন করে জাতীয় পার্টির এস এম শফিকুর রহমান মুশফিক ভোট পেয়েছিলেন মাত্র ১ হাজার ৭২ ভোট। এ নির্বাচনেও তিনি জামানত হারান।
খুলনা গেজেট/হিমালয়/সাগর