খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৪শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  কাতারের প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে নতুন বাংলাদেশ গড়তে আর্থিক ও বিনিয়োগের সহায়তা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস

কেসিসি নির্বাচনের ফলাফল বাতিল চেয়ে মঞ্জুর করা মামলার শুনানি ৪ মে

নিজস্ব প্রতি‌বেদক

খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ২০১৮ -এর প্রতিপক্ষকে উপস্থিতির জন্য আগামী ৪ মে দিন ধার্য করেছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) খুলনার যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক খুরশীদ আলম এ দিন ধার্য করেন। তবে আগামী ৪ মে প্রতিপক্ষ আদালতে উপস্থিত না হলে এক তরফা রায় হতে পারে বলে জানিয়েছেন বাদি পক্ষের আইনজীবী। আর একতরফা রায় হলে বিএনপির খুলনা নগর শাখার সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু মেয়র নির্বাচিত হওয়ার আদেশ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এর আগে ২৪ এপ্রিল একই আদালতে সমন ফেরতের দিন ধার্য ছিল।

নজরুল ইসলাম মঞ্জুর আইনজীবী এড. সৈয়দ মো. এহতেশামুল হক জুয়েল বলেন, ২০১৮ সালের ১৫ মে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রার্থী ছিলেন তালুকদার আব্দুল খালেক, ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে খুলনা বিএনপি’র প্রার্থী ছিলেন দলটির খুলনা নগরীর সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে প্রার্থী ছিলেন এস এম শফিকুর রহমান, কমিউনিস্ট পার্টির মেয়র প্রার্থী ছিলেন মিজানুুর রহমান বাবু যার প্রতীক ছিল কাস্তে, ইসলামী শাসনতন্ত্র দলের প্রার্থী মো. মুজাম্মিল হক, তার প্রতীক ছিল হাত পাখা।

তিনি আরও জানান, ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং রিটার্নিং অফিসার খুলনার নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পরিচালনা করার বিধান থাকা সত্ত্বেও কোন নিরপেক্ষ ব্যক্তি ছিলেন না। তারা ওই সময়ে ক্ষমতাসীন দল আ’লীগের নির্দেশ মোতাবেক দলের মেয়র প্রার্থীর পক্ষ অবলম্বন করেন। তফসীল ঘোষণার শুরু থেকে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত খোলাখুলিভাবে সরকার দলীয় প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেকের পক্ষ অবলম্বন করেন এবং ওই প্রার্থী স্থানীয় সরকার আইন ২০০৯, স্থানীয় সরকার সিটি করপোরেশন নির্বাচন বিধিমালা ২০১০ এবং সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আচরণ বিধিমালা ২০১৬ লংঘন করা সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে সরাসরি তার পক্ষ অবলম্বন করেন। এর কারণে নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত সকল কর্মকর্তা সরকার দলীয় প্রার্থীর পক্ষ অবলম্বন করতে বাধ্য হয়। ৩১ মার্চ কেসিসি নির্বাচনী তফসীল ঘোষণার পর নির্বাচনী এলাকার নির্বাচন সংশ্লিষ্ট আইন শৃংখলা রক্ষায় নিয়োজিত প্রশাসন ও কর্মকর্তাগণ রিটার্নিং অফিসারের নিয়ন্ত্রণ থাকা সত্বেও তারা উদ্দেশ্যেমূলকভাবে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একতরফাভাবে নির্যাতনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। যার কারণে তৎকালীন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি রিটার্নিং অফিসার বরাবর ৩ এপ্রিল আবেদন করেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন দলীয় নেতা কর্মীদের গ্রেপ্তার না করার জন্য।

আইনজীবী এড. জুয়েল আরও বলেন, ২০১৮ সালের ১৫ এপ্রিল রিটার্নিং অফিসারের নিকট মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাইয়ের সময় মৌখিক আপত্তি প্রদান করা সত্ত্বেও ওই কর্মকর্তা কোন কর্ণপাত করেনি। পরে বিভাগীয় কমিশনার বরাবর আপীল করলে তা নামঞ্জুর হয়। আচরণ বিধিমালার কোন বিধান লংঘন করলে প্রার্থীর বিরুদ্ধে জরিমানা এবং প্রার্থীতা বাতিলের বিধান আছে, কিন্তু সেই অভিযোগ করা সত্ত্বেও রিটার্নিং অফিসার তার বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

তালুকদার আব্দুল খালেক নির্বাচনে নিজের পরাজয় নিশ্চিত জেনে আচরণ বিধি লংঘন এবং পেশী শক্তির ব্যবহার শুরু করেন। ১৭ এপ্রিল রিটার্নিং অফিসারের কাছে ওই প্রার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন করে কোন ফল পাওয়া যায়নি। একই বছরের ১২ মে পর্যন্ত রিটার্নিং অফিসারের কাছে সরকার সমর্থিতদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ করে কোন লাভ হয়নি বরং বিএনপি দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর দমন নির্যাতন এবং জেল-জুলুম চলতে থাকে। নির্বাচনের দিন দুপুর ২ টার দিকে ভোট কেন্দ্রসহ নির্বাচনী এলাকার অধিকাংশ কেন্দ্র থেকে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দিতে থাকে প্রতিপক্ষ তালুকদার আব্দুল খালেকের সমর্থক এবং ক্যাডার বাহিনী। ঘটনাটি রিটার্নিং অফিসারকে অবগত করা হলেও তিনি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

কেসিসি নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যায় মেয়র পদে সর্বমোট ভোট পড়েছে ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৩৬ টি। ভোট প্রদানের হার ৬২.১৯ শতাংশ। রিটার্নিং অফিসার এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পরস্পরের যোগসাজেশে বেআইনীভাবে তালুকদার আব্দুল খালেককে নির্বাচিত ঘোষণা করা এবং উক্ত ঘোষণা অনুযায়ী ২০১৮ সালের ১৯ জুন বাংলাদেশ গেজেট ৩ নং প্রতিপক্ষকে কেসিসি মেয়র পদে নির্বাচিত ঘোষণা করা বে-আইনী ও বাতিল যোগ্য।

আইনজীবী আরও বলেন, একই বছরের ১০ জুলাই নজরুল ইসলাম মঞ্জু ১০ হাজার টাকার ১১২৬ নং চালনের মাধ্যমে ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলা চলাকালীন ওই আদালতের ৩ জন বিচারক বদলী হয়েছেন। একাধিক তারিখ পড়েছে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ২৯ আগষ্ট তৎকালীন সাব-জজ রক্ষনীয় শুনানীর জন্য মামলা গ্রহণ করেন। সমন নোটিশ জারির জন্য দিন ধার্য হয়। একই বছরের ২১ নভেম্বর সমন ফেরতের জন্য প্রতিপক্ষের কাছ থেকে দিন ধার্য করেন। এর মধ্যে প্রতিপক্ষ রিটার্নিং অফিসারের সমন জারি হয়। এ বছরের ১৯ জানুয়ারি প্রতিপক্ষ তালুকদার আব্দুল খালেক, মিজানুর রহমান বাবু এবং মুজাম্মিল হকের সমন ততবিরের জন্য দিন ধার্য থাকে। অতপর ৮ এপ্রিল আদালত নথি উপস্থাপন করেন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিকল্প সমন জারির আবেদন করেন। আদালত ধার্য তারিখ ঠিক রেখে ওই বিকল্প সমন জারির আবেদন মঞ্জুর করেন। যা ১০ এপ্রিল পূর্বাঞ্চল এবং আমারদেশ প্রতিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। আজ প্রতিপক্ষের কাছ থেকে সমন ফেরতে দিন ধার্য ছিল। কিন্তু তারা তা দেয়নি। আদালত আগামী ৪ মে জবাব দাখিলে জন্য দিন ধার্য করেছেন।

খুলনা গেজেট/ হিমালয়/এএজে /জেএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!