খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে একদিনের ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ২১৪

কেমন হওয়া উচিত মেডিকেলে ভর্তির প্রিপারেশন?

মেহেদী হাসান বাপ্পী

যুদ্ধ! ভর্তিযুদ্ধ! আরো নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য যুদ্ধ। এ যুদ্ধে জয়ী হতে দেশের আনাচে কানাচে নীরবে নিভৃতে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে লক্ষাধিক শিক্ষার্থী। যুদ্ধের ময়দানে যাওয়ার আগে যুদ্ধের কৌশল ও পদ্ধতি জানাটা বেশ জরুরী। নইলে অনেক ভালো প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও ব্যর্থ হতে পারেন।

যুদ্ধে জয়ী হতে বা স্বপ্ন পূরণে যারা অঙ্গীকারবদ্ধ তাদের প্রস্তুতিকে আরেকটু শাণিত করতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী কে এম রাহাতুজ্জামান আকাশ এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ইমাম হোসেন খুলনা গেজেটকে জানিয়েছেন তাদের প্রস্তুতি কৌশল, ভর্তিচ্ছুদের জন্য দিয়েছেন কিছু দিক নির্দেশনা।

১.
আমরা অনেকেই একটি ভুল ধারণার মধ্যে থাকি যে, বেশি বেশি কোচিং, আর স্যারদের কাছে পড়লেই বোধহয় ভালো রেজাল্ট করা যায়। এটা আসলে ১০০% ভুল। রেজাল্ট আসে নিজের পড়া থেকে, কোচিং থেকে নয়। কোচিং এবং স্যাররা কেবল পথ দেখিয়ে দেন মাত্র। তাই অনেক কোচিং এ না দৌড়ে যেই কোচিং বা স্যারের পড়ানোর ধরণ নিজের কাছে বুঝতে সুবিধা হয় সেখানে পড়াই উত্তম। আবার অনেকে একই সাথে মেডিকেল ভার্সিটি বুয়েট সব কোচিং করতে যায়। এরকম কাজ ভুলেও করা যাবে না।

মেডিকেল ভর্তি পরিক্ষায় বায়োলজি থেকে মোট ৩০ মার্কের প্রশ্ন আসে যা অন্যান্য বিষয় থেকে অনেক বেশি। তাই অবশ্যই এই বিষয়ে অতিরিক্ত জোর দিতে হবে। আমরা তো আজমল স্যার এবং হাসান স্যারের বই কলেজে পড়ে এসেছি। এই ২টা বই ভাল করে শেষ করলেই ইনশাআল্লাহ বায়োলজির প্রস্তুতি ৯৫ ভাগ শেষ। রসায়ন এবং পদার্থ বিজ্ঞান যথাক্রমে হাজারী স্যার ও ইসহাক স্যারের বই পড়লেই যথেষ্ট।

বাকি থাকলো শুধু ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান। এই ২ বিষয়কে সাধারণত এড়িয়ে যাওয়া হয়। আর এখানেই অনেক বড় ভুল হয়ে যায়। আমার মতে অন্যান্য বিষয় থেকে ইংরেজি এবং সাধারণ জ্ঞানে জোর বেশি দেওয়া উচিত। কারণ এই দুই বিষয়েই সব থেকে বেশি ভুল যায়, তাই কেউ যদি ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞানে নির্ভুল ভাবে উত্তর করতে পারে, তবে তার নম্বর অনেক এগিয়ে যাবে এবং তার চান্স পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে।

এবার বলি আমি কীভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি। আমি এইচএসসি’র ব্যবহারিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর দিন থেকেই এডমিশনের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি। অনেকেই মনে করেন যে রাত জেগে পড়লেই বোধহয় ভালো পড়া হয়। কিন্তু না, রাতে ভালো একটা ঘুম খুবই দরকার পরের দিনের পড়াটা ভালোভাবে পড়ার জন্য। পুরো এডমিশনের সময়টায় আমার মনে হয় না কোনোদিন আমি রাত ১২ টার পর আর পড়েছি। সন্ধার পরপরই আমি পড়তে বসতাম এবং ১২ টার মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়তাম। এই সময়ে নিজে সুস্থ থাকাটাই সব থেকে জরুরী।

এডমিশনের প্রস্তুতির সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হল পড়া জমা না রাখা, যেদিনের পড়া সেদিনই শেষ করা। আমার মনে হয় না আমি যেখানে কোচিং করেছি সেখানে একটাও ক্লাস মিস দিয়েছি। যেদিনের পড়া সেদিনই আমি শেষ করে রাখতাম। কারণ এডমিশনের মাত্র এই তিনটা মাসে আমাদের সব বই শেষ করতে হয়, তাই এত অল্প সময়ে যখন নতুন পড়াই শেষ করা কঠিন, সেখানে জমানো পড়া শেষ করতে গেলে আরও পিছিয়ে পড়তে হয়। আমার পরামর্শ, যে বিষয়ই হোক একজন লেখকের বই পড়বো এবং সেই বইটিই খুব ভালো করে শেষ করবো।

এডমিশন এর শেষ এক মাস সব কোচিং বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন বাসায় বসে শুধু রিভিশন আর রিভিশন। শেষ এক মাসে আমি প্রতি ৩-৪ দিনেই প্রতিটা সাবজেক্ট এর বই একবার করে শেষ করেছি।

আসলে নিজের যেভাবে পড়তে সুবিধা হয় সেভাবেই পড়া উচিত। আমি এভাবে পড়েছি বলে যে সবাইকেই এভাবেই পড়তে হবে এমন কোনো কথা নেই। নিজের সর্বোচ্চটা দিতে হবে, দেওয়ার মালিক আমাদের সৃষ্টিকর্তা। ভালোভাবে পড়লে সাফল্য আসবেই ইনশাআল্লাহ।

 

২.
কথায় আছে কষ্ট ছাড়া কেষ্ট মেলে না। তাই ভর্তি পরীক্ষার আগের কয়েক মাস একটু কষ্ট করতে হবে। কি কষ্ট করতে হবে? বলছি আপাতত স্যোশাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকার পরিকল্পনা করুন। বন্ধুর বার্থডে পার্টি বা ট্যুর এগুলো ও ভুলে যান।

প্রথমেই সবাই টেনশনে পড়ে কোন কোচিংয়ে ভর্তি হবো, কোন ব্যাচে পড়বো, কোন ভাইয়া বেস্ট পড়ায়, বাসায় পড়াবে কে! সারাদিন যদি ব্যাচ আর কোচিং এ ছুটতে হয় তাহলে নিজে পড়বেন টা কখন! নিজে পড়ার জন্য যথেষ্ট সময় রাখতে হবে। আর পড়ার ক্ষেত্রে মূল বইকে অবশ্যই প্রাধান্য দিতে হবে। বিশেষ করে পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞানের মোট ৬ টি বইয়ের খুঁটিনাটি মাথায় রাখাটা আবশ্যক।

মেডিকেলে ভর্তির জন্য ভালো প্রস্তুতি নেওয়া যেমন গুরুত্বপূর্ণ তার চেয়ে পরীক্ষার ১ ঘন্টা মোটেই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। মনে রাখবেন এই ১ ঘন্টা আপনার ভবিষ্যত জীবনের জন্য, আপনার স্বপ্নকে ছোয়ার জন্য টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে।

পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে এমন খবরে মোটেও বিচলিত হওয়া যাবে না। অমুক ভাইয়ার কাছে চূড়ান্ত সাজেশন পাওয়া যাচ্ছে এসব খবর থেকে যথা সম্ভব দূরে থাকবেন। রাতেই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যেমন প্রবেশপত্র, কলম, পেন্সিল, ইরেজার, স্বচ্ছ ফাইল উত্যাদি গুছিয়ে রাখবেন এবং যথাসম্ভব দ্রুত ঘুমিয়ে পড়বেন। পরীক্ষার আগের দিন নিজের সিটটা কোথায় পড়লো সেটা একবার দেখে আসতে পারেন।

পরীক্ষার দিন ধীরস্থির হয়ে নির্দিষ্ট আসনে বসুন, রিল্যাক্সড মুডে থাকুন। প্রশ্নপত্র পাওয়ার পর সাবধানে নির্ধারিত ঘরগুলো পূরণ করুন। খেয়াল রাখবেন কোনো অবস্থাতেই যেনো ও.এম.আর পূরণে ভুল না হয়।

প্রশ্নের প্রথম থেকেই শুরু করুন। যেগুলো ১০০% নিশ্চিত সেগুলো দ্রুতই দাগিয়ে ফেলুন। কোনো প্রশ্ন না পারলে সেটির পিছনে অযথা সময় দেওয়া যাবে না। প্রথম ত্রিশ মিনিটে ৬০% প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবেন। এর পরের পনের মিনিটে যেগুলো আপনি ৫০% শিওর সেগুলো দাগাবেন। সম্পূর্ণ আন্দাজে কোনোভাবেই দাগানো যাবেনা। মনে রাখবেন চান্স পাওয়ার জন্য আপনাকে একশ টা প্রশ্নের উত্তর দিতেই হবে এমন টা নয়। শেষের ৫-৭ মিনিট রিভিশন এর জন্য রাখুন এবং যেগুলোর উত্তর দেননি সেগুলো মন দিয়ে বারবার পড়ে দেখুন।

বাসায় বা কোচিংয়ে যখন মডেল টেস্ট দিবেন সেগুলোর জন্য সময় নির্ধারণ করবেন ৪৫ মিনিট। মডেল টেস্ট গুলোতে যে প্রশ্নের উত্তর পারবেন না বা ভুল হবে সেগুলো সলভ করে আলাদা নোট করতে পারেন। কোনো বিষয় মনে রাখতে কষ্ট হলে আমি কয়েকবার লিখে ফেলতাম। লিখলে মনে রাখতে সুবিধা হয়। যারা একটানা বেশিক্ষণ পড়তে পারেন না তারা এক ঘন্টা পর পর ৫-১০ মিনিটের ব্রেক নিতে পারেন। ঘরের ভিতর একটু হাটাহাটি করলেন বা চা খেতে পারেন। তবে ভুলেও ফেসবুকের নোটিফিকেশন চেক বা ম্যাসেন্জারে পলক ফেলতে যাবেননা।

আপনার সাথেই হয়তো মেডিকেলের পাশে টং দোকানে চায়ের সাথে সাথে গল্প হবে আড্ডা হবে।

খুলনা গেজেট/এমএইচবি

 

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!