রসুন হলো পিঁয়াজ জাতীয় একটি ঝাঁঝালো সবজি যা রান্নার মশলা ও ভেষজ ওষুধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ শতকে চীন ও ভারতে রক্ত পাতলা রাখার জন্য এর প্রচলন ছিল। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক হিপোক্রেটিস রসুন ব্যবহার করেছিলেন সারভাইকাল ক্যানসারের চিকিৎসায়।
মশলা ছাড়াও রসুন কাঁচা অবস্থায় খাওয়া যায়। তাতে যেমন অনেক উপকার পাওয়া যায়, তেমনি কিছু ক্ষতিও হয়। তবে ক্ষতির চেয়ে উপকারিতাই বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, কাঁচা রসুন খেলে হার্ট অনেক বেশি সুস্থ থাকে। হৃদরোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
কাঁচা রসুন খেলে যেসব উপকার হয়
১। যে সমস্ত হৃদরোগে আক্রান্ত রোগী নিয়মিত কাঁচা রসুন খান, তারা অনেক বেশি অ্যাকটিভ থাকেন।
২। নিয়মিত কাঁচা রসুন খেলে ইস্ট্রোজেন লেভেল বেড়ে হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো হয় মেয়েদের। লেড টক্সিসিটি কমাতে কাজে লাগে। এছাড়া কাঁচা রসুন পুরুষের যৌন ক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে।
৩।কাঁচা রসুন রক্তচাপ কমায়। প্রতিদিন চার কোয়া করে কাঁচা রসুন খেলে এটি রক্তচাপ কমানোর ক্ষেত্রে ওষুধের সঙ্গেও পাল্লা দিতে পারে।
৪। টোটাল এবং এলডিএল কোলেস্টেরল প্রায় ১০-১৫ শতাংশ কমে যায় কাঁচা রসুন খেলে। তবে উপকারী কোলেস্টেরল বা এইচডিএল বাড়াতে ও ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে এর কোনো ভূমিকা নেই।
৫। অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের মাত্রাও বেশি থাকে কাঁচা রসুনে। ফলে অ্যালঝাইমার ও ডিমেনসিয়ার প্রকোপ কমে। সংক্রমণজনিত অসুখ-বিসুখ কম হয়। বাড়ে আয়ু।
৬। বিপাকীয় ক্রিয়া ও পরিবেশ দূষণের ফলে যে ফ্রি র্যাডিক্যালস তৈরি হয় তা হার্ট তথা সমস্ত শরীরের জন্য ক্ষতিকর। কাঁচা রসুনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সেই ক্ষতি খুব ভালোভাবে ঠেকাতে পারে।
কিন্তু কাঁচা রসুনই কেন?
বিশেষজ্ঞদের মতে, কাঁচা রসুনের যত উপকার, প্রক্রিয়াকরণের পরে তা আর তত থাকে না। যেমন, কাঁচা রসুন কাটলে বা বাটলে যে ঝাঁঝালো গন্ধ বের হয়, তার মূলে আছে অ্যালিসিন। শরীরে বেশি ঢুকলে সে বিষক্রিয়া ঘটায়। আর মাপ মতো হলে কাজ করে ওষুধের মতো। তাই সুস্বাস্থ্যের জন্য কাঁচা রসুন খাওয়াই বেশি উপকারি।
কাঁচা রসুন যেসব ক্ষতি ডেকে আনে
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট থেকে প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, খালি পেটে কাঁচা রসুন খেলে বুক জ্বালাপোড়া, বমিভাব এমনকি বমিও হতে পারে। অতিরিক্ত রসুন খেলে হাইফিমা হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। এছাড়া আইরিস ও কর্নিয়ার মাঝে রক্তক্ষরণ ঘটে। ফলে দৃষ্টিশক্তি হারানোর ঝুঁকি বাড়ে।
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রসুনে থাকা কিছু উপাদান জিইআরডি বা গ্যাস্ট্রোয়েসোফাজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজের অন্যতম কারণ হতে পারে।
অতিরিক্ত রসুনের কিছু ক্ষতিকর দিক তুলে ধরা হল-
ডায়রিয়া: অতিরিক্ত রসুন খাওয়ার ফলে ডায়রিয়া হতে পারে। কারণ রসুনে সালফার রয়েছে যা পেটে গ্যাস তৈরি করে। ফলে হতে পারে ডায়রিয়া।
অতিরিক্ত ঘাম: বিভিন্ন ক্লিনিক্যাল স্ট্যাডিতে দেখা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে রসুন খেতে থাকলে অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া রসুনে সালফার থাকার কারণে মুখে দুর্গন্ধও হয়।
মাথা ঘোরানো: অতিরিক্ত রসুন খাওয়ার ফলে মাথা ঘোরানোর মতো সমস্যা হতে পারে। কারণ রসুন বেশি খাওয়ার ফলে কমে যেতে পারে রক্তচাপ। আর নিম্ন রক্তচাপের উপসর্গ হিসেবে দেখা দিতে পারে দুর্বলতা, মাথা ঘোরানো বমি বা বমিভাব।
গর্ভবতী নারীর জন্য ক্ষতিকর: গর্ভবতী নারীর জন্য রসুন খাওয়া অনিরাপদ। গর্ভাবস্থায় রসুন খেলে প্রসব বেদনা বাড়তে পারে। যেসব মা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন তাদেরও রসুন খাওয়া ঠিক নয়, এতে দুধের স্বাদ বদলে যেতে পারে।
যকৃতের ক্ষতি: যকৃত আমাদের শরীরের অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে। এটি চর্বি ও প্রোটিনের বিপাক, রক্ত পরিশোধন, শরীর থেকে অ্যামোনিয়া অপসারণ ইত্যাদি কাজ করে থাকে। অতিরিক্ত রসুন খেলে এতে থাকা অ্যালিসিন নামক উপাদান যকৃতে বিষক্রিয়া তৈরি করতে পারে।
খুলনা গেজেট/ এএজে