খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনারের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ করেছে ছাত্র-জনতা। শনিবার (২৮ জুন) বিকাল সোয়া ৬টার দিকে খুলনা প্রেসক্লাবে সামনে ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে আন্দোলনকারীরা। এসময় খুলনা প্রেসক্লাব ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম।
এর আগে বিকেল পৌনে ৬টার দিকে তিনি প্রেসক্লাব পরিদর্শনে যান। পরে ছাত্র-জনতা খুলনা প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে। প্রেস সচিব প্রধান উপদেষ্টাকে বিষয়টি জানাবেন বলে আন্দোলনকারীদের আশ্বস্ত করেন। রাত ৮টার দিকে তিনি খুলনা প্রেসক্লাব ত্যাগ করেন।
খুলনা প্রেসক্লাবে গণমাধ্যমকর্মী ও আন্দোলনকারীরা জানান, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে খুলনার সাংবাদিকদের মতবিনিময় সভা শেষে বিকেল পৌনে ৬টার দিকে খুলনা প্রেসক্লাব পরিদর্শনে আসেন প্রেস সচিব শফিকুল আলম। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দারের অপসারণের দাবিতে প্রেসক্লাবের সামনে এসে অবস্থান নেন ছাত্র-জনতার আন্দোলনের একটি অংশ। ফলে ক্লাব থেকে কেউই বের হতে পারেননি। এ অবস্থায় প্রেস সচিবও অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে অবগত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। পরে রাত ৮টার দিকে প্রেস ক্লাব থেকে তিনি চলে যান।
খুলনা প্রেসক্লাবের অন্তবর্তীকালীন কমিটির সদস্য মো. মিজানুর রহমান মিল্টন বলেন, এসআই সুকান্তকে আটকের পর ছেড়ে দেওয়ার প্রতিবাদে কেএমপি কমিশনারের অপসারণের দাবিতে ছাত্র-জনতা আন্দোলন করছে গত চারদিন ধরে। আজও (শনিবার) কেএমপি ঘেরাও করে তাদের আন্দোলন চলছিল। বিকেলে খুলনা প্রেসক্লাবে প্রেস সচিব এসে আমাদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। এরমধ্যে আমরা জানতে পারি বাইরে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ঘেরাও করেছে এবং প্রেস সচিবের সঙ্গে দেখা করতে চায়। এরপর আন্দোলনকারীদের নিয়ে হুমায়ুন কবির বালু মিলনায়তনে যান। সেখানে বৈঠকে বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টাকে জানাবেন বলে আশ্বস্ত করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক ও খুলনা জেলা শাখার সদস্যসচিব সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি বলেন, প্রেস সচিব খুলনায় এসেছেন শুনে আমরা প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়েছিলাম। আমরা প্রেস সচিবকে খুলনার বাস্তবচিত্র জানাতে চেয়েছি, তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি। প্রেস সচিবের কাছে বলতে চেয়েছি গত চারদিন খুলনাবাসী রাজপথে আছে, অথচ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, আইজিপি, খুলনার ডিসি কেউ আমাদের খবর নেয়নি। আমরা প্রেস সচিবকে জানিয়েছি খুলনাবাসী চরমভাবে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে।
সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি আরও বলেন, ক্লাবের সামনে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করেছি। আমরা শুরু থেকেই প্রেস সচিবের সঙ্গে আলোচনা করতে চেয়েছি। কিন্তু তিনি সম্ভবত সাংবাদিকদের সঙ্গে মিটিংয়ে ছিলেন। মিটিং শেষ করে আসতে প্রায় ঘন্টা খানেক লেগেছে। তারপরই আমরা প্রেস সচিবের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন আজকে খুলনার বাস্তবচিত্র ও উদ্বুত পরিস্তিতি প্রধান উপদেষ্টাকে জানাবেন। আমরা প্রেস সচিবের আশ্বাস পেয়ে ২৪ ঘন্টা পর্যবেক্ষণে রাখছি। ২৪ ঘন্টার মধ্যে যদি সুরহা না হয় তাহলে আমরা কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করবো। কর্মসূচির মধ্যে নগরীর ৮ টি থানা, ডিসি নর্থ ও ডিসি সাউথ এবং কেএমপি ঘেরাও হবে, ব্লকেড করে খুলনা অচল করে দেওয়া হবে।
খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, আন্দোলনকারীরা চেয়েছে- তারা গত ৩/৪ দিন ধরে আন্দোলন করছে, আন্দোলনের বার্তা যেন মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার কাছে পৌঁছায়। সেটা তারা প্রেস সচিব স্যারকে সরাসরি বলতে চাচ্ছিল। আমি পরে গিয়ে ওদের সঙ্গে কথা বললাম, তাদের পাল্স বুঝার চেষ্টা করলাম। মূল চাওয়াটা ছিল তাদের প্রেস সচিব স্যার বার্তাটা যেন প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়কে গিয়ে বলেন, বার্তাটা পৌঁছান। আন্দোলনকারীরা অনেকগুলো বিষয় বলে, প্রেস সচিব স্যার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি কথাগুলো বলবেন। তিনি বলেছেন আন্দোলনকারীরা যাতে ডিসি অফিসের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর চিঠি পাঠান।
খুলনা গেজেট/এমএম