কৃষকের এক ধানের খেতে
সারস পাখির বাসা
দুইটি কচি ছানা নিয়ে
কাটাচ্ছে দিন খাসা।
একদিন এক দুপুর বেলা
কৃষক ও তার ছেলে
ধানের ক্ষেতে আসে এবং
তাকায় দুচোখ মেলে।
রাশি রাশি ধান পেকেছে
কৃষক হেসে কয়-
কাটার সময় হয়েই গেছে
আর যে দেরি নয়।
তাই ছেলেকে আদেশ করে-
আগামীকাল থেকে
কেটে নিতে সব পাকা ধান
যত্নে একে একে।
ছেলে বলে, তাই হবে বাপ
চিন্তা করো না যে
কাল সকালেই আদেশ মতো
লেগে যাবো কাজে।
শুনেই সারস ছানা দুটি
ভয়েই জড়োসড়ো
আসলো বুঝি কাল সকালে
বিপদ বড়োসড়ো।
মা যে তাদের খাবার নিয়ে
ফিরবে কখন বাসায়!
বলবে মাকে সকল কথা
সময় গুনে আশায়।
বিকেল হলে সারস ফিরে
খাবার নিয়ে ঠোঁটে
মাকে দেখে বাচ্চারা যায়
মায়ের কাছে ছুটে।
খায় না খাবার ছানারা কেউ
দুঃখ-ভরা মন
মা ডেকে কয়, কী হয়েছে
বল না সোনা ধন!
সবার বড়ো ছানাটি তার
মা কে বলে, শোনো!
সামনে আছে বিপদ ভারী
নাই যে উপায় কোনো।
বল্ সোনারা কী হয়েছে?
করছে কেমন বুক!
সামলে নেবো দেখিস তোরা
যতই বিপদ হোক।
শোনো মা গো, বলছি সবই-
আজকে দুপুর বেলা
কৃষক ও তার ছেলে এসে
বললো কথা ম্যালা-
কৃষক এসে ছেলেকে তার
এমন আদেশ করে
আগামীকাল কেটে নিতে
সবকটা ধান ঘরে।
এক্ষুনি যে এই বাসাটি
ছাড়তে হবে তাই
তা না হলে বেঁচে থাকার
আর যে উপায় নাই।
মিষ্টি হেসে সারস মা কয়-
রাখিস নে মুখ ভার
ছেলে এসে কাটবে না ধান
দুর্ভাবনা ছাড়।
সত্যি সেদিন কেউ আসেনি
হয় নি কাটা ধান
ছানারা তাই সুর মিলিয়ে
আনন্দে গায় গান।
পরের দিনে কৃষক আসে
বন্ধুরা সব মিলে
কৃষক বলে, হয় উপকার
এ ধান কেটে দিলে।
বন্ধুরা সব হেসে বলে,
ভাবনা রাখো দূরে
কেটে দেবো সব পাকা ধান
রাত পোহালে ভোরে।
ছানারা সব শুনলো সবই
শুনলো আড়াল থেকে
বিকেল বেলা ফিরলে মা কে
বললো একে একে।
মা শুনে কয়, ভাবিস না রে
চিন্তা কোনো নেই
বন্ধুরা ধান কাটবে না কাল
বলে দিলাম এই।
দিন কেটে যায় রাত ও কাটে
মিষ্টি হাসে ভোর
পুবের আকাশ রঙ ছড়িয়ে
আঁধার করে দূর ;
সকাল থেকে দুপুর গড়ায়
ধান কাটেনি কেউ
সোনার ধানে বাতাস নেচে
ঢেউ খেলে যায় ঢেউ।
খানিক বাদেই কৃষক এসে
নিজেই বলে যায়-
কেউ রাখেনি কথা আমার
কষ্ট বড়ো হায়!
কাল সকালে আসবো আমি
কাটবো নিজের হাতে
সোনার ধানে ভরবো গোলা
নষ্ট না হয় যাতে।
কৃষক যা যা বললো শুনে
ছানারা সব ভাবে-
কেমন করে বিপদ থেকে
রেহাই তারা পাবে!
শেষ বিকেলে সারস ফিরে
বাসায় ছানার কাছে
ছানারা সব জানায় মাকে
যায় ভুলে যায় পাছে।
বিপদ মোটেই কাটেনি মা
করবো এখন কী যে
কাল সকালে কাটবে কৃষক
সব পাকা ধান নিজে।
শুনে সারস খানিক ভেবে
মুখটা করে ভার
বললো, মানিক সোনারা শোন
এই বাসাতে আর-
থাকবো না না চলে যাবো
সূর্য ওঠার আগে
চলে যাবো অন্য কোথাও
যেটুক সময় লাগে।
কৃষক ঠিকই কাটবে সে ধান
কাল সকালে এসে
অবহেলা করলে তবে
বিপদ হবে শেষে।
কাল সকালে আসবে কৃষক
জেনেই গেলে আগে
কেমন করে জানলে মা গো
খটকা ভীষণ লাগে!
শোন্ তবে শোন্ সোনারা ঠিক
নয় তা কঠিন জানা
নিজেই যখন আসবে কৃষক
নেই দ্বিধা নেই মানা।
পরের উপর ভরসা করে
আশায় থাকে যারা
যায় ঠকে যায় প্রতি কাজে
এমন বোকা তারা।
তাই তো কৃষক করবে না আর
এমনতরো ভুল
ভাবনা এটাই মূল।
(লেখক : শিক্ষার্থী, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।)
খুলনা গেজেট/এমএম