‘চাঁদের মত হাসিটি তার
ফুলের মত গাল,
হাঁটি হাঁটি হাঁটতে গিয়ে
খায় তবু সে টাল।
হাসিতে তার মুক্তো ঝরে
কান্নাতো নয় পান্না
টুপুর সোনা চাঁদের কণা
দুদু ছাড়া খান না।’
উপরের ওই ছড়াটি ছড়াকার জ্যোতির্ময় মল্লিকের। শিশুদের জন্য এ রকম আরো বহু ছড়া লিখেছেন তিনি। তাঁর কলম থেকে আর কখনো শিশুদের জন্য নতুন কোনো ছড়া বের হবে না। এখন সব কিছুর উর্ধ্বে চলে গেছেন তিনি।
চলে যেতে হবে-এটাই নিয়তি। সাংবাদিক জ্যোতির্ময় মল্লিকও চলে গেলেন। মাঘের আকাশভরা কুয়াশায় ঢাকা শীতের বিষণ্ন এক রাতে তিনি চিরবিদায় নিলেন। যখন এই সংবাদটি শুনলাম, আমার মনটাও কুয়াশার মতো বিষণ্নতায় ভরে গেল!
মাত্র সপ্তাহখানেক আগেও তাঁর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তখন জানিয়েছিলেন- শরীরটা তার একদম ভালো যাচ্ছে না। দো-তলা থেকে নিচতলায় হেঁটে আসতে পারেন না তিনি। জানালেন, মাঝখানে একদিন পড়ে গিয়েছিলেন। এর ওপর প্রিয় খুলনা থেকে ঢাকায় গিয়ে মনটাও ভালো যাচ্ছিল না তাঁর। হয়তো সত্তরোধ্য বয়সে প্রিয় জায়গা, প্রিয়জনদের সঙ্গ ছেড়ে সেই ধকল কাটাতে পারেননি তিনি।
সুরসিক প্রিয় জ্যোতি কাকুর সঙ্গে হাজারো স্মৃতি আছে আমার । যেন একটার পর একটা স্মৃতি মনে পড়ছে। কখনো কারো সঙ্গে কথায়, গল্পে সেই সব স্মৃতিই আলোচনা হবে। আর এভাবেই তার স্মৃতি একদিন, দুদিন করে, এক বছর, দুবছর পর হারিয়ে যাবে। যেভাবে হারিয়ে গেছে আরো অনেক সাংবাদিক বা প্রিয়জনের স্মৃতি।
সাংবাদিক জ্যোতির্ময় মল্লিক শুধু একজন সাংবাদিকই ছিলেন না। তিনি ছিলেন একজন খ্যাতিমান শিুশু সাহিত্যিক। দীর্ঘ চার দশকের বেশি সময় ধরে ছড়াসহ শিশুসাহিত্যের নানা বিষয় নিয়ে লেখালেখি করেছেন। টাপুর টুপুর, কচি ও কাঁচাসহ সেরা শিশুকিশোর পত্রপত্রিকায় লিখে ব্যাপক পাঠক পরিচিতি পেয়েছেন। হাসির ছড়া দিয়ে তার লেখার শুরু। পরে অড়–বাদ, রূপকথা এবং প্রকৃতি বিষয়ক শিশুতোষ সাহিত্য রচনায় খ্যাতি অর্জন করেছেন। দীর্ঘ দিন ধরে লিখলেও তার প্রকাশিতগ্রন্থ ডজনখানেক। লেখালেখির জন্য তিনি পেয়েছেন- অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার, গোবিন্দচন্দ্র দাশ সম্মাননাসহ নানা সম্মাননা।
লেখক : ব্যুরো প্রধান, দৈনিক ইত্তেফাক, খুলনা
খুলনা গেজেট/কেডি