আসন্ন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সোমবার (১৩ জুন) থেকে চারদিনের জন্য মাঠে থাকছে বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত থাকবে বিভিন্ন বাহিনীর ১৫ জনের ফোর্স।
তবে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে নিয়োগ করা হয়েছে ১৬ জনের ফোর্স। এছাড়া ভোটের এলাকা নিয়ন্ত্রণে রাখতে রয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্দেশনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক পরিপত্র থেকে বিষয়টি জানা গেছে, যা সংস্থাটিকে অবহিত করেছে মন্ত্রণালয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন স্বাক্ষরিত ওই পরিপত্রটি সরকারের অন্যান্য দফতরসহ মাঠ প্রশাসনেও পাঠানো হয়েছে।
আগামী ১৫ জুন কুসিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। পুরো নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। মোট ১০৫টি কেন্দ্রের ৬০৪টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ করবে ইসি। এতে পাঁচজন মেয়র প্রার্থীসহ ১৪০ জনের মতো কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সাধারণ ভোটকেন্দ্রে তিনজন পুলিশ, আনসার ও ভিডিপিসহ মোট ১৫ জন নিয়োজিত থাকছে। এদের মধ্যে পাঁচজনের সঙ্গে থাকবে অস্ত্র। আর ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে চারজন পুলিশ, আনসার ও ভিডিপি সদস্য থাকবে ১৬ জন। এদের মধ্যে ৬ জনের সঙ্গে অস্ত্র থাকবে।
এছাড়া ভোটের এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পুলিশ, আনসার ও ব্যাটেলিয়ন আনসারের সমন্বয়ে গঠিত প্রতি ওয়ার্ডের একটি করে মোট ২৭টি মোবাইল টিম ও ৯টি স্ট্রাইকিং টিম রয়েছে। এছাড়া রিজার্ভ টিম আছে ২টি।
এদিকে র্যাবের ২৭টি মোবাইল টিম ও ১২ প্লাটুন বিজিবি নিয়োজিত থাকছে। ভোটের এলাকায় প্রচার শুরুর আগে থেকেই বিজিবির একটি অংশ অবস্থান নিয়েছে।
ভোটকেন্দ্র পাহারায় পুলিশ, আনসার ও ভিডিপি নিয়োজিত থাকছে ভোটের দু’দিন আগে থেকে পরের দিন পর্যন্ত মোট চার দিনের জন্য। অন্যান্য বাহিনীও একই সময়ের জন্য নিয়োজিত থাকবে।
বিজিবি/আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের দায়িত্ব:
– বিজিবি/আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে
– কুমিল্লা সিটি করপোরেশনভুক্ত এলাকাসমূহে বিজিবি এবং নির্বাচনী এলাকার নিকটবর্তী নদী পথে নৌ-পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে;
– রিটার্নিং অফিসার সহায়তা কামনা করলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সহায়তা করবে;
– রিটার্নিং অফিসার ও প্রিজাইডিং অফিসারের চাহিদা ব্যতিরেকে ভোটকেন্দ্রের অভ্যন্তরে কিংবা ভোট গণনাকক্ষে কোনো প্রকার দায়িত্ব গ্রহণ করবে না;
– নির্বাচনী এলাকায়/নির্বাচনের জন্য হুমকিস্বরূপ কোন ব্যক্তি/বস্তুর যাতায়াত/চলাফেরা ইত্যাদি আইন অনুযায়ী রোধ করা; এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটকেন্দ্র সমূহের ইভিএম এবং ইভিএম এর কারিগরি সহায়তায় দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
রাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব):
– র্যাব মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে।
– নির্বাচনী এলাকায় সামগ্রিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করবে।
– রিটার্নিং অফিসার সহায়তা কামনা করলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সহায়তা করবে।
– আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনে হেলিকপ্টার ব্যবহার করতে পারবে।
রিটার্নিং অফিসার ও প্রিজাইডিং অফিসারের চাহিদা ব্যতিরেকে ভোটকেন্দ্রের অভ্যন্তরে কিংবা ভোট গণনাকক্ষে কোন প্রকার দায়িত্ব গ্রহণ করবে না
সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটকেন্দ্র সমূহের ইভিএম এবং ইভিএম এর কারিগরি সহায়তায় দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
পুলিশ বাহিনী:
নির্বাচনী এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব পুলিশ বাহিনীর। ভোটকেন্দ্রের অভ্যন্তরে শান্তি- শৃঙ্খলা রক্ষা করাই হবে ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের প্রধান কাজ।
এছাড়া নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট সকল সরঞ্জাম ও দলিল দস্তাবেজ আনা-নেয়ার সময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; নির্বাচন কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, নির্বাচন কার্যালয়সমূহ, রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় এবং সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ের নিরাপত্তা বিধান করা, স্থানীয় জননিরাপত্তা, ভোটকেন্দ্রে ভোটারগণকে সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড় করানোসহ স্থানীয় শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা, ভোটারগণের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করা, সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোট কেন্দ্রসমূহের ইভিএম এবং ইভিএম-এর কারিগরি সহায়তায় দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও পুলিশের দায়িত্ব।
আনসার ও ভিডিপি:
পুলিশ বাহিনী কর্তৃক নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবে এ বাহিনী।
এদিকে নির্বাচনী অপরাধ আমলে নিয়ে বিচারকাজ সম্পন্ন করার জন্য দায়িত্ব পালন করছেন মোট ৪৮ জন হাকিম। এদের মধ্যে ৩৯জন নির্বাহী হাকিম ও ৯ জন বিচারিক হাকিম।
কুসিক নির্বাচনে মেয়র পদে মেয়র পদে ছয়জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। এরা হলেন- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত আরফানুল হক রিফাত, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. রাশেদুল ইসলাম, স্বতন্ত্র হিসেবে কামরুল আহসান বাবুল, মো. মনিরুল হক সাক্কু (বিএনপি নেতা ও দুইবারের মেয়র), মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন ও মাসুদ পারভেজ খান।
এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাসুদ পারভেজ খান মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। অর্থাৎ মেয়র পদে ভোটের লড়াইয়ে থাকছেন পাঁচ জন প্রার্থী। কাউন্সিলর পদে লড়াই করছেন ১৪০ জনের মতো প্রার্থী।
২০১৭ সালের ৩০ মার্চ সর্বশেষ কুসিক নির্বাচন হয়েছিল। নির্বাচিত করপোরেশনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ওই বছর ১৭ মে। এক্ষেত্রে ভোটগ্রহণ করার শেষ সময় ছিল চলতি বছরের ১৬ মে। কিন্তু বিগত কমিশন বিদায়ের সময় ঘনিয়ে আসায় আর তফসিল দেয়নি। ফলে অতি অল্প সময়ের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে এই সিটি পরিচালনায় দায়িত্ব দিতে হয়েছে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে। নির্বাচনের পর নতুন মেয়র দায়িত্ব গ্রহণ করা পর্যন্ত তিনি করপোরেশন পরিচালনা করবেন।
২০১৭ সালের নির্বাচনে বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু দ্বিতীয়বারের মতো এ সিটিতে নির্বাচিত হয়েছিলেন। কুসিকের প্রথম নির্বাচনে ২০১২ সালে তিনিও জয়লাভ করেছিলেন। প্রথমবার বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় সাক্কু স্বতন্ত্র থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন। পরেরবার বিএনপির টিকিটে ধানের শীষ প্রতীক নিয়েও জয়লাভ করেন। এবারও বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছে এবং আজীবন দল থেকে বহিষ্কার করায় সাক্কু হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
দু’টি পৌরসভাকে একীভূত করে ২০১১ সালে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন গঠন করে সরকার।