কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে জমিজমা সংক্রান্ত পূর্বশত্রুতা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা ও পেট্রোল ঢেলে বসতঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ দিনু মন্ডল ও আকতার মন্ডল নামে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার (৩০ এপ্রিল) সকালে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তারা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দৌলতপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান।
নিহত আকতার মন্ডল (৪০) চিলমারী গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে এবং দিনু মণ্ডল (৬৫) একই গ্রামের দবির মণ্ডলের ছেলে।
প্রতিপক্ষের দেওয়া আগুনে দগ্ধ হয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় একই গ্রামের ফারুক মণ্ডল (২২) শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে, আব্দুর রহমান কাজীর ছেলে সাইদুল কাজী (৩০) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, বিশু মণ্ডলের ছেলে ফজলু ডাক্তার ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে এবং জখম ও দগ্ধ ১১ জন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ ঘটনায় শুক্রবার দুপুরে স্থানীয় মোজাম মণ্ডল বাদী হয়ে ৭৩ জনের নামসহ ১০০-১২০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ওই দিন রাতে ১৪ আসামিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব ও পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের রোববার দুপুরে জামিন দিয়েছেন আদালত।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কয়েকজন জানান, পুড়িয়ে হত্যার উদ্দেশে প্রতিপক্ষের লোকজন তাদের বসতঘরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং বিভিন্ন অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে প্রায় ২৫ জনকে গুরুতর আহত করে। অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঢাকা ও কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ১৫ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের চিলমারী বাজারপাড়ায় জমি সংক্রান্ত বিরোধ, পূর্ব শত্রুতা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মণ্ডল গ্রুপের লোকজনের ওপর হামলা করা হয়। সে সময় মণ্ডল গ্রুপের মুজাম্মেল, ইকবাল, রানা, ইকলাস ও জহুরুল মণ্ডলের বাড়িতে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেওয়া হয়। এতে ৫ জন গুরুতর দগ্ধসহ অন্তত ২০ থেকে ২৫ জন আহত হন। খবর পেয়ে দৌলতপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে ওই এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
এ বিষয়ে চিলমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান বলেন, প্রতিপক্ষের হামলায় অগ্নিদগ্ধ আকতার মন্ডল ও দিনু মন্ডল চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকায় মারা গেছেন। অন্যদের অবস্থাও গুরুতর। বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত খা ও শিকদার গ্রুপের শতশত সন্ত্রাসী দফায় দফায় মণ্ডল গ্রুপের লোকজনের বাড়িতে হামলা করে। এ সময় পিস্তল, ককটেল, পেট্রোল বোমা ও রামদাসহ বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষের লোকজনদের কুপিয়ে আহত করা হয়। এছাড়া কয়েকটি বসতঘরে হত্যার উদ্দেশে আগুন দেওয়া হয়। এতে প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। আমি প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে দৌলতপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান বলেন, অগ্নিদগ্ধ আকতার মন্ডল ও দিনু মন্ডল চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকায় মারা গেছেন। বর্তমানে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পূর্ব শত্রুতার জেরে হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। ১৫ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
খুলনা গেজেট/ এসজেড