খুলনা, বাংলাদেশ | ২৫ আষাঢ়, ১৪৩১ | ৯ জুলাই, ২০২৪

Breaking News

  পিএসসির প্রশ্নফাঁস : ২ উপপরিচালক ও গাড়িচালক আবেদ আলীসহ গ্রেপ্তার ১৭
  চারদিনের সফরে চীন পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
  লক্ষীপুরে রাস্তা পারাপারের সময় বাস চাপায় দাদা-নাতনি নিহত

দেবহাটায় ভিজিডি চক্রে অনিয়ম : সেনা সদস্যের বউয়ের কার্ডে চৌকিদারের স্ত্রীর ছবি!

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার কুলিয়া ইউনিয়নে চলতি ২০২১-২২ চক্রের ভিজিডি সেবা গ্রহীতাদের তালিকা প্রণয়ন ও কার্ড বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদে ভিজিডি চক্রের সুবিধাভোগীদের মাঝে সম্প্রতি সরকারি বরাদ্দের চাউল বিতরণকালে তালিকাভুক্ত একাধিক নারীর ভিজিডি কার্ডে অনিয়ম ধরা পড়ে বলে অভিযোগ করেছেন সেখানকার নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান আ’লীগ নেতা মোঃ আছাদুল হক।

অনিয়ম ধরা পড়া ভিজিডি কার্ডগুলো পরিষদে রেখে দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে আছাদুল হক বলেন, পূর্বের চেয়ারম্যান বা মেম্বররা ভিজিডি চক্রসহ অন্যান্য সরকারী সেবা দেয়ার সময় প্রকৃত অসহায় ব্যাক্তিদের বঞ্চিত করে অনেক অযোগ্যদের নাম তালিকাভুক্ত করেছিল। ইউনিয়নে ভিজিডি কার্ডের চাউল বিতরণের সময় বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) পরিষদে চাল বিতরণের সময় উত্তর কুলিয়ার ৪নং ওয়ার্ডের আম্বিয়া খাতুন (২৯) নামের এক নারীর ভিজিডি কার্ড (কার্ড নং-০৯) আমাদের হাতে আসে। ওই সুবিধাভোগী বর্তমান সেনাসদস্য রবিউল ইসলামের স্ত্রী। অথচ ভিজিডি কার্ডে লাগানো সুবিধাভোগীর ছবির সাথে কোন মিল ছিলনা সেনা সদস্য রবিউলের স্ত্রী আম্বিয়ার। সেসময় যাচাই বাছাই করে দেয়া যায় যে, আম্বিয়া নামের ওই সুবিধা ভোগীর ভিজিডি কার্ডে যে নারীর ছবি লাগানো ছিল তিনি ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা নন। ছবিতে যে মহিলা ছিলেন, তিনি কুলিয়া ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ ইব্রাহিমের স্ত্রী সকিনা খাতুন। অথচ অনিয়মের মাধ্যমে ৫নং ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশের স্ত্রী সকিনা খাতুনের ছবি লাগিয়ে সেই ভিজিডি কার্ড দেয়া হয়েছে ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও সেনা সদস্য রবিউলের স্ত্রী আম্বিয়াকে।

চেয়ারম্যান আছাদুল হক আরোও বলেন, চাউল বিতরণকালে নাজমা খাতুন (২৪) নামের আরেকজন নারীর ভিজিডি কার্ড (কার্ড নং- ৫৭) আমাদের হাতে আসে। যেখানে তার স্বামীর নাম সৈয়দ আলী এবং তার বাড়ি কুলিয়ার ৫নং ওয়ার্ডে লেখা ছিল। অথচ ৫নং ওয়ার্ডে সৈয়দ আলী ও নাজমা খাতুন নামের কোন দম্পত্তি নেই। খোজঁখবর নিয়ে দেখা যায় যে, ওই দম্পত্তির বাড়ি ৪ নং ওয়ার্ডে এবং বিগত চক্রেও তারা ৪ নং ওয়ার্ডের তালিকায় থেকে দু’বছর ধরে ভিজিডির সুবিধা ভোগ করেছেন।

তিনি বলেন, নাজমা খাতুনের স্বামী সৈয়দ আলী ছিলেন পূর্বের প্যানেল চেয়ারম্যান আসাদুল ইসলামের আস্থাভাজন। যে কারণে গত দুবছর ওই নারী ৪নং ওয়ার্ড থেকে ভিজিডির চাউল পেয়েছেন। কিন্তু সরকারি নিয়ম মোতাবেক একজন সুবিধাভোগী পরপর দুইবার এই সেবা না পাওয়ার কঠোর নির্দেশনা থাকায় অত্যন্ত চতুরতার সাথে সৈয়দ আলী ও তার স্ত্রী নাজমা খাতুনকে ৫ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা উল্লেখ করে ভিজিডি’র কার্ড দেয়া হয়েছে। যা সম্পূর্ন বে-আইনী। এছাড়াও ইতিমধ্যেই এধরনের একাধিক অভিযোগ তিনি পেয়েছেন যা পর্যায়ক্রমে উপজেলা প্রশাসনের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে বলেও জানান আছাদুল হক।

তিনি বলেন, অনিয়মের মাধ্যমে ভিজিডি কার্ড পাওয়া এসব সুবিধাভোগীরা ইতোমধ্যেই গত প্রায় এক বছরের সরকারি বরাদ্দের চাউল তুলে নিয়েছেন। বর্তমান সময়ে ভিজিডি সুবিধাভোগীদের তালিকা প্রণয়নের আগে যাচাই বাছাই এবং সর্বশেষ কার্ডগুলো অনুমোদনের আগে স্ব স্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিসার এমনকি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সিলসহ স্বাক্ষর প্রয়োজন হয়। তাহলে কিভাবে এসব ব্যাক্তিদের ভিজিডি কার্ড ওই ইউনিয়নের পূর্ববর্তী চেয়ারম্যান আসাদুল ইসলাম, মহিলা বিষয়ক অফিসার নাসরিন জাহান এবং তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাছলিমা আক্তার স্বাক্ষর করে অনুমোদন দিয়েছিলেন তা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান আছাদুল হক।

এব্যাপারে দেবহাটা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাসরিন জাহানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কুলিয়া ইউনিয়নে এবারের চক্রে ৫৭০টি ভিজিডি কার্ড রয়েছে। যদিও আমি নিজেই ওই ইউনিয়নের ট্যাগ অফিসার ছিলাম, কিন্তু সময় কম থাকার কারণে প্রত্যেকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তো আর যাচাই বাছাই করা সম্ভব হয়না। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আমাদের কাছে যে নামের তালিকা পাঠানো হয়, সেগুলোই আমরা অনুমোদন দেই।

এবিষয়ে দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী জানান, কুলিয়া ইউনিয়নে ভিজিডি কার্ড বিতরণে অনিয়মের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। পাশাপাশি অভিযোগের সত্যতা পেলে সেসব ভিজিডি কার্ড বাতিলসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!