২০২২ সালে সরকারবিরোধী চ্যাটিংয়ের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে রাতভর নির্মমভাবে নির্যাতনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিদ্যালয়ের (কুয়েট) ১০ শিক্ষার্থীকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজনের বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং সনদ বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া দুই ছাত্রকে তিন বছর এবং একজনকে ৫ বছর পর্যন্ত সনদ প্রদান না করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
গত ২৭ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ সভায় সভাপতিত্ব করেন। সোমবার বিষয়টি প্রকাশ পায়। উপাচার্য সভার সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আজীবন বহিষ্কৃতরা হলেন কুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান, রায়হান আহমেদ, সাদ আহমেদ, সাজেদুল কবির, আদনান রাফি, রিজুয়ান ইসলাম রিজভী, ফায়াদুজ্জামান ফাহিম, মেহেদী হাসান মিঠু, সাফাত মোর্শেদ, ফখরুল ইসলাম। এর মধ্যে রায়হান, সাদ, সাজেদুল ও রাফির বিএসসি ইন ইঞ্জিনিয়ারিং সনদ বাতিল করা হয়েছে। তারা সবাই কুয়েট ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন।
এছাড়া মোস্তাক আহমেদকে ৫ বছরের জন্য এবং শুভেন্দু দাস ও ফারিয়ার জামিল নিহালকে ৩ বছরের জন্য কোনো ধরনের সনদ প্রদান না করা এবং কখনোই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশংসাপত্র না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জানা গেছে, মোবাইল অ্যাপে সরকার বিরোধী ‘চ্যাটিং’ এর অভিযোগে ২০২২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর কুয়েটের ড. এম এ রশিদ হলের শিক্ষার্থী জাহিদুর রহমানকে তুলে নিয়ে যায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। পরে গেস্ট রুমে নিয়ে সারারাত মারধর করা হয়। ভোরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। বেশ কয়েকদিন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন ছিলেন জাহিদ।
গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নির্যাতনের বিচার চেয়ে উপাচার্য বরাবর আবেদন করেন ওই শিক্ষার্থী। গতবছর ১৭ সেপ্টেম্বর বিষয়টি তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করা হয়।
কুয়েটের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সুলতান মাহমুদ বলেন, তদন্ত কমিটির সুপারিশ ছাত্র শৃংখলা কমিটির সভায় উত্থাপন করা হলে তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তবে কুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান দাবি করেন, তারা কেউই জাহিদুরকে মারধর করেননি। জাহিদুর হিজবুত তাহরিরের সদস্য-এ অভিযোগে কুয়েট কর্তৃপক্ষ তাকে পুলিশে দিয়েছিল। তার দাবি, যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তারা সবাই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
খুলনা গেজেট/ টিএ