খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) সম্মান প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা আগামী ১১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। তিনটি অনুষদের ১৬টি বিভাগের ১ হাজার ৬৫টি আসনের বিপরীতে এবার পরীক্ষার্থী ২৪ হাজার ৫২৭ জন। অর্থাৎ প্রতি আসনের বিপরীতে পরীক্ষার্থী ২৩ জন। কুয়েট ক্যাম্পাসসহ মোট ১১টি ভেন্যুর ৪৪৭টি কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে এই পরীক্ষা। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে শুরু হয়ে পরীক্ষা চলবে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত।
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) কুয়েটের সভাকক্ষে প্রেস ব্রিফিংয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, এ বছর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা আগের যে কোনো বছরের চেয়ে বেশি। পরীক্ষার হলে মোবাইল ফোনসহ কোনো ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে যাওয়া যাবে না। পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে হলে প্রবেশ করা যাবে। পরীক্ষা নির্বিঘ্ন করতে নগরীর যানজট নিরসনসহ বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আবেদনকারীদের পরীক্ষার কক্ষভিত্তিক আসন বিন্যাস ১০ জানুয়ারি প্রকাশ করা হবে। গত কয়েক বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রকৌশল গুচ্ছের অধীনে পরীক্ষা নিলেও এবার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। পরীক্ষার ফল বা মেধাতালিকা প্রকাশ করা হবে আগামী ২৬ জানুয়ারি। সেশনজট নিরসনের জন্য দেশের মধ্যে সবার আগে কুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষা-সংক্রান্ত কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পরিকল্পনা বিভাগ নিয়ে ‘ক’ গ্রুপ; ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগগুলো, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ এবং স্থাপত্য বিভাগ নিয়ে ‘খ’ গ্রুপ গঠিত। এবারের ভর্তি পরীক্ষায় ২০২৪ সালের উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ্যসূচি অনুযায়ী গণিত, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ও ইংরেজি বিষয়ের ওপর এমসিকিউ পদ্ধতিতে ‘ক’ গ্রুপের জন্য ৫০০ নম্বর ও ‘খ’ গ্রুপের জন্য ৫০০ নম্বরের এমসিকিউয়ের পাশাপাশি অতিরিক্ত মুক্তহস্ত অঙ্কনের ১০০ নম্বরসহ মোট ৬০০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। এক্ষেত্রে গণিত, পদার্থবিদ্যা ও রসায়নের প্রতিটিতে ১৫টি ও ইংরেজি বিষয়ে ১০টি প্রশ্ন থাকবে। ‘খ’ গ্রুপের জন্য এগুলোর পাশাপাশি মুক্তহস্ত অঙ্কনের জন্য ৪টি অতিরিক্ত প্রশ্ন থাকবে। যোগ্য প্রার্থীদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয় ৩০ ডিসেম্বর। পরীক্ষার ফল বা মেধাতালিকা প্রকাশ করা হবে ২৬ জানুয়ারি। গত ৪ ডিসেম্বর থেকে আবেদন শুরু হয়ে চলে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এবার ভর্তি পরীক্ষায় ফি নির্ধারণ করা হয় ১১০০-১২০০ টাকা। এবার কুয়েট ভর্তি পরীক্ষা হবে খুলনার ১১টি প্রতিষ্ঠানে। কুয়েটের পাশাপাশি এবার যে-সব সম্ভাব্য কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে তা হলো- খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, গল্লামারীর রেভা পলস হাই স্কুল ও হোপ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, মুজগুন্নির বাংলাদেশ নৌবাহিনী স্কুল অ্যান্ড কলেজ, খালিশপুরের সরকারি হাজি মুহাম্মদ মহসীন কলেজ, বয়রার খুলনা সরকারি মহিলা কলেজ ও খুলনা সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সাউথ সেন্ট্রাল রোডের সরকারি পাইওনিয়ার মহিলা কলেজ, খানজাহান আলী রোডের সরকারি এমএম সিটি কলেজ এবং সরকারি সুন্দরবন আদর্শ কলেজ।
কোন বিভাগে কত আসন: সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং (সিই) বিভাগে ১২০, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগে ১২০, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (এমই) বিভাগে ১২০, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগে ১২০, ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিই) বিভাগে ৬০, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (আইইএম) বিভাগে ৬০।
তাছাড়া লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং (এলই) বিভাগে ৬০ জন, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং (টিই) বিভাগে ৬০, আরবান অ্যান্ড রিজিয়নাল প্ল্যানিং (ইউআরপি) বিভাগে ৬০, বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন ম্যানেজমেন্ট (বিইসিএম) বিভাগে ৬০, বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং (বিএমই) বিভাগে ৩০ জনকে ভর্তি নেওয়া হবে।
আর্কিটেকচার (আর্ক) বিভাগে ৪০ জন, ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (এমএসই) বিভাগে ৬০, এনার্জি সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (ইএসই) বিভাগে ৩০, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএইচই) বিভাগে ৩০ ও মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (এমটিই) বিভাগে ৩০ জনকে ভর্তি করা হবে। সংরক্ষিত (ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও চট্টগ্রাম বিভাগের পার্বত্য জেলার অধিবাসীদের জন্য) পাঁচটি আসনসহ তিনটি অনুষদের ১৬টি বিভাগে মোট ১ হাজার ৬৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে।
এ সময় প্রথম বর্ষ বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং, বিইউআরপি ও বিআর্ক কোর্স ভর্তি কমিটির সভাপতি এবং ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, সেশনজট নিরসনের জন্য দেশের মধ্যে সবার আগে কুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে খুলনায় প্রায় এক লাখ অতিরিক্ত মানুষের আগমন ঘটতে পারে। তাদের সার্বিক সহযোগিতার জন্য খুলনাবাসীর কাছে অনুরোধ জানান।
খুলনা গেজেট/এমএম