খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ ফাল্গুন, ১৪৩১ | ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস

কুয়েটে ছাত্রদলের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, আহত অর্ধশত

নিজস্ব প্রতিবেদক

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এক পক্ষ প্রতিপক্ষকে ধাওয়া করে। পরে নগরীর রেলিগেট, তেলিগাতিসহ আশ-পাশের বিএনপি নেতাকর্মীরা ছাত্রদলের সঙ্গে এবং সাধারণ শিক্ষার্থী, ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়। মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী চলা সংঘর্ষে প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। আহতদের বেশিরভাগকেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়। কুয়েটে মেডিকেল সেন্টারসহ আশপাশের বেসরকারি ক্লিনিকে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

কুয়েটের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে ও ভেতরে এবং ছাত্রদল ও বিএনপি নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাস সংলগ্ন সড়কে অবস্থান নিয়েছে। পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছে সেনা ও নৌবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরা।

সাধারণ শিক্ষার্থী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গত কয়েকদিন ধরে কুয়েট শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ম্যাসেনজার গ্রুপে ছাত্রদলের কমিটি গঠন নিয়ে প্রতিক্রিয়া চলছিল। সোমবার ছাত্রদলের পক্ষ থেকে ক্যাম্পাসে লিফলেট বিতরণ করা হয়। এর জের ধরে মঙ্গলবার সকালে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবিতে মিছিল বের করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও করলে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের সঙ্গে বাকবিতন্ডা হয়।

বেলা ১২টার দিকে একইদাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে মিছিল বের করে। তারা ‘ছাত্র রাজনীতি ঠিকানা, এই কুয়েটে হবে না’, ‘দাবি মোদের একটাই, রাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাস চাই’, ‘এই ক্যাম্পাসে হবে না, ছাত্র রাজনীতির ঠিকানা’-সহ বিভিন্ন শ্লোগান দিতে দিতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র হলগুলো প্রদক্ষিণ করে। কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে পৌছালে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা তাদের লক্ষ্য করে ভুয়া ভুয়া বলে শ্লোগান দেয়। এ সময় দু’ গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা, এক পর্যায়ে একে অপরকে ধাওয়া করে। সংঘর্ষ ক্যাম্পাসের বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্রদলের সঙ্গে আশপাশ এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীরা যোগ দেয়। তাদের অনেকের হাতেই দেশীয় অস্ত্র দেখা যায়।

দুপুর আনুমানিক দু’টার দিকে এ প্রতিষ্ঠানের পকেট গেটের বাইরে বিএনপি নেতাকর্মীরা একজন ছাত্রকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে ক্যাম্পাসের ভেতর ফেলে দেয়। এটা দেখে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মী একজোট হয়ে ক্যাম্পাসের বাইরে বের হয়ে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের ধাওয়া দেয়। শুরু হয় সংঘর্ষ। বিকাল ৫টা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে। এতে প্রায় অর্ধশত আহত হন। তাদের বেশিরভাগই ছাত্র। সংঘর্ষে আহতদের কুয়েটের অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।

কুয়েটের কয়েকজন শিক্ষক জানান, গত কয়েকদিন ধরে ক্যাম্পাসে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে ছাত্রদল। এটা বন্ধের জন্য জনমত তৈরি করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্র শিবিরের কর্মীরা। মূলত এর জের ধরেই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

কুয়েট সিভিল ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী রাহাতুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবি নিয়ে ভিসির কাছে গেলে ছাত্রদলের ছেলেরা আমাদের হুমকি দেয়। তারা সিনিয়রদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। দুপুরে আমাদের মিছিলে বিনা উস্কানিতে হামলা চালায়। আমরা তাদের ধাওয়া দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দিয়েছি। পরে আশপাশের এলাকার বিএনপির লোকজন সঙ্গে নিয়ে তারা আবার হামলা চালায়। এতে অসংখ্য ছাত্র আহত হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনা জেলা কমিটির মুখপাত্র মিরাজুল ইসলাম ইমন বলেন, বিনা উস্কানিতে ছাত্রদলের কর্মীরা ছাত্রদের রক্ত ঝড়িয়েছে। তারা কুয়েটের সদস্য সচিব জাহিদ ভাইকে রামদা দিয়ে কুপিয়েছে, জেলার আহ্বায়ক তাসনিম ও সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব রাতুলের পা ইট দিয়ে থেতলে দিয়েছে। আমাদের অসংখ্য ছাত্র আহত। তাদের চিকিৎসা চলছে।

খুলনা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ইশতিয়াক আহমেদ ইশতি দাবি করেন, ছাত্র শিবির সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করলে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা তাদের বাঁধা দেয়। পরে তারা একে অপরকে ধাওয়া করে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি আরাফাত হোসাইন মিলন বলেন, কুয়েটের ঘটনার সঙ্গে ছাত্রশিবিরের কোনো সম্পর্ক নেই। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদল ও বিএনপি নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে অনেককে আহত করেছে বলে শুনেছি। আমরা হামলার নিন্দা ও জড়িতদের বিচার চাই।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নাজমুল হাসান রাজীব বলেন, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, পুলিশ ও র‌্যাব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে একযোগে কাজ করছে। অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।

খানজাহান আলী থানার ওসি মো. কবির হোসেন বলেন, ঘটনাস্থল থেকে ৫ জন আটক করা হয়েছে।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!