খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)’র সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের জনৈক্য শিক্ষক কর্তৃক একই বিভাগের দুইজন সিনিয়র প্রফেসরকে জড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা প্রোপাগন্ডা, বিভ্রান্তিমূলক এবং মানহানিকর অপপ্রচারের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) ওই বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ জরুরি সভায় মিলিত হয়ে উক্ত শিক্ষকের এহেন বিভ্রান্তিকর অপপ্রচারের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান।
বিভাগের ২৩ জন শিক্ষকের স্বাক্ষরিত ওই প্রতিবাদ লিপিতে উল্লেখ করা হয়, অতি সম্প্রতি খুলনা প্রকৌশল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এবং এর সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ সম্পর্কে অত্র বিভাগের একজন শিক্ষক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মিথ্যা প্রোপাগান্ডামূলক এটি পোস্ট করেন। বিশেষ করে উক্ত পোস্টে তিনি অত্র বিভাগের দুইজন সম্মানিত সিনিয়র প্রফেসরকে জড়িয়ে বিভাগীয় সিআরটিএস (সিভিল) এবং অত্র বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের (ICCESD) প্রসঙ্গে বেশ কিছু তথ্য প্রদান করেন, যা সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর।
উক্ত বিষয়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ এক জরুরি সভায় মিলিত হয়ে মত প্রকাশ করেন যে, বিভাগীয় সিআরটিএস (সিভিল), বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট কর্তৃক সুনির্দিষ্ট নীতিমালা দ্বারা পরিচালিত হয়। কাজেই সিআরটিএস (সিভিল) প্রসঙ্গে ওই শিক্ষকের অভিযোগটি সম্পূর্ণ অমূলক এবং ভিত্তিহীন। অধিকন্তু সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ কর্তৃক প্রতি এক বছর অন্তর যে আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে (ICCESD) আয়োজন করা হয়ে থাকে, ইতিপূর্বে যার সাতটি পর্ব সফলতার সাথে অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অষ্টম পর্ব অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বিভাগের নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক পর্বেই এর পরিচালনা পর্ষদ পর্যায়ক্রমে আবর্তিত হয় এবং বিভাগীয় সভার মাধ্যমে এর কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সুতরাং এ ধরনের একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করা সম্পূর্ণরূপে ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
অত্র বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ মনে করেন, এহেন মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ও অপপ্রচারের দ্বারা ওই শিক্ষক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সুনাম এবং অত্র বিভাগের শিক্ষকবৃন্দের সম্মানহানির অপচেষ্টা চালিয়েছেন।
সভায় উপস্থিত শিক্ষকবৃন্দ এ বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ এবং এর তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেন। শিক্ষকবৃন্দ স্মরণ করিয়ে দেন যে, ইতিপূর্বে ওই শিক্ষক অত্র বিভাগে একাধিকবার শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে অভিযুক্ত এবং শাস্তিপ্রাপ্ত হয়েছেন।
প্রতিবাদ লিপিতে উল্লেখ করা হয়, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষকবৃন্দের সমন্বয়ে গঠিত একটি ক্লোজড হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের শিক্ষকদের ব্যক্তিগত কথোপকথনের স্ক্রিনশট নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উস্কানি প্রদানের উদ্দেশ্যে শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১৩ মে ২০২৫ অত্র বিভাগের এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অভিযোগের বিষয়ে তাৎক্ষণিক তদন্তে ওই শিক্ষক দোষী সাব্যস্ত হন এবং উপস্থিত সকল শিক্ষকদের সামনে তিনি এই অপরাধ স্বীকার করেন। অতঃপর উপস্থিত শিক্ষকদের নানারকম হুমকি প্রদান করে সভা থেকে বেরিয়ে যান।
প্রতিবাদ লিপিতে শিক্ষকবৃন্দ উল্লেখ করেন, উক্ত অপরাধ ঢাকতে তিনি ফেসবুকে অত্র বিভাগের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রোপাগন্ডা, বিভ্রান্তিমূলক এবং মানহানিকর অপপ্রচার করে শিক্ষার্থীদেরকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দের মুখোমুখি দাঁড় করানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত আছেন। এর প্রেক্ষিতে বিভাগের সকল শিক্ষকবৃন্দ সম্মিলিতভাবে কর্তৃপক্ষ বরাবর তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।
২০১৭ সালে শিক্ষার্থীদের থিসিস থেকে তথ্য চুরি করে নিজের গবেষণাপত্র প্রকাশ করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠিত হয় এবং উক্ত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদনপত্র প্রেরণ করা হয়।
এ ব্যাপারে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ ওই শিক্ষকের এহেন অসাদাচরণ, মিথ্যা প্রোপাগান্ডা এবং মানহানিকর অপপ্রচারের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এছাড়া সংশ্লিষ্ট সকলকে বিভ্রান্তিমূলক কর্মকান্ডের বিষয়ে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানান।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ওই শিক্ষক প্রফেসর ড. আতাউর রহমান একদিন আগে তার ব্যক্তিগত ATaur Rahman নামের ফেসবুক আইডি’র পোস্টে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দুই সিনিয়র শিক্ষক সম্পর্কে লিখেছেন, ‘সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং চালান দুই জন শিক্ষক প্রফেসর শাহজাহান এবং উনার খুব পছন্দের মানুষ প্রফেসর হারুনুর রশিদ। এই দুইজন যা ঠিক করে আসেন, যেকোনো মিটিং সেটাই সিদ্ধান্ত আকারে আসে। সিভিলের জুনিয়র, সিনিয়র যে কাউকে জিজ্ঞাসা করলেই এর সত্যতা পাওয়া যাবে। সিভিল সিআরটিএস ‘র কনসালটেন্সির লাখ লাখ টাকা লুটপাটের সাথেও জড়িত ওনারা দুইজন। সিভিলের কনফারেন্সের (ICCESD)’র সময় স্পন্সরদের কাজ থেকে প্রায় এক কোটি টাকা পাওয়া যায়, যার বেহিসাবি খরচও করেন ওনারা দুইজন’।
এ ব্যাপারে প্রফেসর ড. আতাউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি ইউজিসি’র কাছে অভিযোগ লিখছি, যেটার কপি আপনাকে দিব।
খুলনা গেজেট/লিপু