কুমিল্লার নানুয়াদিঘীর পাড়ে পূজামণ্ডপে হনুমানের পায়ের উপর কোরআন রাখার ঘটনায় সিসিটিভির ফুটেজে সন্দেহভাজন ব্যক্তিটি ইকবাল হোসেন (৩৫) বলে নিশ্চিত করেছে তার ভাই রায়হান ও মা বিবি আমেনা। পরিবারের দাবি, ইকবালের মানসিক সমস্যা আছে। সে পাগল। খাবারের লোভ দেখিয়ে তাকে যে যাই বলে সে তাই-ই করে।
জানা যায়, কুমিল্লা নগরীর সুজানগর এলাকার রবীন্দ্রচন্দ্র সূত্রধরের বাড়িতে ৩য় তলায় চার মাস যাবত ভাড়া থাকেন নূর আহমেদ আলমের পরিবার। বুধবার (২০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সেই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় বাসায় তালা দেয়া। পরে ইকবালের ছোটভাই রায়হানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের কাছে বলেন, সিসিটিভির ফুটেজের এই মানুষ আমার ভাই। সে পাগল। তবে সে নেশা করে কিনা সেটা আমার জানা নাই।
রায়হান জানান, ঘটনার এক সপ্তাহ আগে খেলার মাঠে তাকে নিয়ে ছেলেরা দুষ্টামি করায় সে সবাইকে জুতা দিয়ে মেরেছিল। তিনি বলেন, যে মানুষ মাকে পাথর নিয়ে মারতে চায় সে বুঝে শুনে এমন কাজ করার কথা না। ওকে চা-পানি, নাস্তা করালে যা বলবে তাই করবে। রায়হান বলেন, তার ভাই যদি অন্যায় করে থাকেন, যদি তা সত্য হয়, তাহলে তার শাস্তি হোক। তবে ইকবাল কারও প্ররোচনায় এমন কাজ করতে পারেন।
এ সময় কথা হয় ইকবালের মা বিবি আমেনার সঙ্গে। নিজের ছেলেকে নিয়ে তিনি অনেক বিব্রত। তার দাবি, ইকবাল মানসিকভাবে অসুস্থ। বিবি আমেনা বলেন, কিছুদিন আগেই বখাটেপনার কারণে গণপিটুনির শিকার হন ইকবাল। এরপর থেকে তার আচরণে সবাই অতিষ্ঠ। সে বিভিন্ন সময় রাস্তাঘাটে মানুষকে হয়রানি করতো। গোসলখানায় দরজা বন্ধ করে ইয়াবা সেবন করতো। ইকবাল মাজারে মাজারে থাকতো। বিভিন্ন সময় আখাউড়া মাজারে যেতো। কুমিল্লার বিভিন্ন মাজারেও তার যাতায়াত ছিল। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। ইকবালকে পেলে আপনারা বিচার করবেন। এই সন্তানের জন্য আমার পরিবারটা শেষ হয়ে গেছে।
ইকবালের নানি রহিমা বেগম জানান, ১৩ দিন আগে ঘর থেকে ইকবালকে বের করে দিয়েছি। ব্লেড দিয়ে পাঁচটি হাঁস জবাই করেছে। ইকবালের অত্যাচারে আমি অতিষ্ঠ।
এ বিষয়ে ১৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ সোহেল সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমি ১০ বছর ধরে ইকবালকে চিনি। সে রঙের কাজ করত। মাঝে মাঝে নির্মাণকাজের সহযোগী হিসেবেও কাজ করত। ইকবাল ইয়াবা সেবন করায় প্রায়ই তাকে নিয়ে অনেক দেনদরবার করতে হতো।
এদিকে বাড়ির মালিক রবীন্দ্রচন্দ্র সূত্রধর জানান, ইকবালকে তিনি চেনেন না, সে কখনও এই বাসায় আসতো না। তার বাবা ভূট্টো নামে পরিচিত। তিনি ফল ব্যবসা করেন। চার মাস ভাড়া থাকলেও ভাড়া দিয়েছেন দুই মাসের। স্থানীয় কাউন্সিলরকে বিষয়টি জানিয়েছি। ঘটনার পর থেকে ইকবালের বাবা পুলিশকে সহায়তা করছেন, তাই তিনি তাদের সাথে আছেন বলে জানান ইকবালের মা বিবি আমেনা ও ভাই রায়হান।
এর আগে, কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে ধর্ম অবমাননার ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দায়ী ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। জানা যায়, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে শনাক্ত ঐ যুবক কুমিল্লা নগরীর সুজানগর এলাকার নূর আহাম্মদ আলমের ছেলে ইকবাল হোসেন (৩৫) এবং সে বিভিন্ন মাজারে ও যত্রতত্র ঘুরে বেড়ানো (ভবঘুরে) হিসেবে পরিচিত। রাতে জেলা পুলিশের দায়িত্বশীল একটি সূত্র এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
প্রসঙ্গত, শারদীয় দুর্গাপূজার মহাঅষ্টমীর দিন গত বুধবার ভোরে কুমিল্লা শহরের নানুয়াদীঘির উত্তর পাড়ে দর্পণ সংঘের উদ্যোগে আয়োজিত অস্থায়ী পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরীফ পাওয়া যায়। এরপর কোরআন শরীফ অবমাননার অভিযোগ তুলে ওই মণ্ডপে হামলা চালায় একদল লোক। এ ঘটনার জের ধরে ওই দিন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলা করতে যাওয়া একদল ব্যক্তির সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। যেখানে হতাহতের ঘটনা ঘটে। এরপর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ ও রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের বসতিতে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে দীর্ঘ অনুসন্ধান করে ঘটনার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত করার কথা জানিয়েছে পুলিশ। তাদের সবাইকে গ্রেফতার ও জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমেই নেপথ্যে থাকা ‘মাস্টারমাইন্ড’দের শনাক্ত করা যাবে এমনটাই বিশ্বাস পুলিশের।
খুলনা গেজেট/ টি আই