খুলনা, বাংলাদেশ | ১৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনে হামলায় ৩ পুলিশ বরখাস্ত, গ্রেপ্তার ৭
  ভারতীয় সব বাংলা চ্যানেল সম্প্রচার বন্ধ চেয়ে করা রিটের শুনানি বুধবার

কুমারকে লেখা শেষ চিঠি

আয়শা আক্তার জ্যোতি

প্রিয় কুমার,

কেমন আছো? কি করছো? খেয়েছো সময়মতো? না এগুলো আজকে আর আমি তোমার কাছে জানতে চাইবো না। এখন যে তোমাকে ভালো রাখার জন্য অন্য আমি তোমাতে মিশে আছে। তোমার মনে আছে সেই দিনটার কথা? যেদিন তোমাকে বলেছিলাম- কুমার তোমার আর রবির মধ্যে পার্থক্য আমি কিন্তু দেখতে পাচ্ছি না। দেখো না ভাগ্যের পরিহাসে তোমার সাথে আমার পরিচয়। বেশ কয়েক মাসের বন্ধুত্বের পরে তোমার জন্মদিনে হঠাৎ করে বলেছিলাম – ‘দেখেন মশাই আমি টুকটাক লেখালেখি করি আর আপনাদের দোয়ায় এখন লেখিকা হিসাবে দুই চার জনও আমাকে চিনে। আর শুনেছি লেখক লেখিকার তো কত-শত প্রেম করে। তা এই লেখিকা যদি তার প্রেমের সূচনায় আপনাকে পাশে চাই?’

উত্তরে তুমি বলেছিলে- ‘প্রেম কি জিনিস বুঝতে পারিনি কখনোই। ভালোবাসাকেও খুব কাছে থেকে ছুয়ে দেখা হয়নি। তবে আমার প্রতি যে তোমার যত্ন, সম্মান, শ্রদ্ধা আর একে অন্যের উপর যে ভরসা তাকে উপেক্ষা করে দূরে রাখার শক্তি সত্যি আমার নেই। তোমাকে হয়তো বলা হয়নি, কখনোই পাছে যদি বন্ধুত্বটা নষ্ট হয়ে যায় সেই ভয়ে।’

সেই শুরু হলো আমাদের প্রেমময় কাব্যের। শুরুটা বেশ ভালোই ছিল। তোমার সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে আমার অপেক্ষার অবসান। তোমার মনে আছে কুমার চব্বিশটা ঘন্টা একে অন্যকে কিভাবে আগলে রাখতাম। তুমি সময় পেলে এসএমএস দিতে আর আমি দশ থেকে ত্রিশ সেকেন্ডের মধ্যে দিতাম রিপ্লাই। এই নিয়ে কতো বকা শুনেছি তোমার কাছে। সব কাজ রেখে আমি ফোন নিয়ে বসে থাকি। তুমি তো জানতে কুমার আমার সব কাজের মাঝে তুমি নামক ব্যক্তিটা আমার মাঝে অপলক দৃষ্টিতে আটকে থাকতো। তোমার সাথে কাটানো প্রতিটা রাতের প্রতিটা মুহুর্ত যে অন্য রকম। জানালা দিয়ে চাঁদকে নিয়ে হিংসা করা। তোমার মনে আছে কুমার হঠাৎ করে মাঝ রাতে যখন কবিতা শোনার বায়না করতাম, তখন তুমি শর্ত দিয়ে বলতে হুম কবিতা শোনাতে পারি যদি তুমি আমার মাথায় বিলি কেটে দেও। তার পর দুই কাপ চা, তোমার মাথায় বিলিকাটা সাথে আমাকে প্রথম প্রেমিক পুরুষের কবিতা শুনতে শুনতে সূর্য উদয় দেখা। সেই কথা টা মনে আছে তোমাকে বলেছিলাম –“এই পৃথিবীর সব থেকে পবিত্র সময় হচ্ছে ভোর। জোঁছনা রাতে পরীরা নেমে আসে পৃথিবীর বুকে। ভোর হলেই ফিরে যায় আর ফিরে যাওয়ার সময় ঘুমন্ত মানুষের চোখে তারা স্বপ্ন একে দিয়ে যায়। সূর্যের প্রথম কিরণ মানে আহনা। এই আহনার সাথে মিশে আমি যেনো তোমাকে সারাটাদিন জড়িয়ে রাখতে পারি “।
সেইদিন প্রথম তুমি আমার কপালে ভালোবাসার কল্পনা একেঁ দিয়েছিলে।

এইভাবে কিন্তু আমাদের যাচ্ছিল বেশ। হঠাৎ করে তুমি আমার জীবন থেকে হলে নিরূদ্দেশ। বহু খুঁজেছি তোমাকে। কোথাও পাইনি। জানো কুমার তোমার সাথে কাটানো প্রতিটা মুহুর্ত আমাকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে। তোমাকে ছেড়ে থাকাটা একপ্রকার আমাকে নিঃশেষ করে দিয়েছে। আমি এখন আর ভালো রেজাল্ট করতে পারি না। পারি না নিত্য নতুন ছন্দে কবিতা লিখতে। ভুলে গেছি অভিনয় করে মানুষকে হাসাতে, মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে কিছু মানুষের দুঃখ ভুলিয়ে রাখতে। এখন আমি বলতে রক্ত মাংসের নিথর দেহটা ছাড়া আর আমার কিছুই বাকি নেই কুমার। এইভাবে কেটে গেছে আমার জীবনের পাঁচটা বছরের এক-একটা দিন। সেদিন তোমার খবর পেলাম। জানো কুমার যখন শুনেছি তোমার শয্যাশায়ী মায়ের পছন্দে তুমি বিয়ে করেছো, সেদিন আর অভিমান বা রাগ কোনোটাই আর জমিয়ে রাখতে পারিনি। কোথায় যেনো এক নিশ্বাসে বিলিন হয়ে গেল। কুমার আজকে তোমার ভরা সংসার। সাত মাসের ফুঁটফুটে মেয়ে। নাম রেখেছো আমার আদলে। আমি হয়তো তোমার মাঝে নেই, আমাকে রেখেছো তোমার মেয়ের মাঝেই। সব ভালোবাসা যে হারিয়ে যায় না।

না কুমার এখন আর কাদম্বরীর মতো তোমার সাজানো সুখ দেখে সুইসাইড করতে ইচ্ছে করে না আমার। তোমার আর রবির মধ্যে যে আমি আকাশ পাতাল পার্থক্য দেখতে পাই। আমি কখনো ভাবতে পারিনি আমাদের সুন্দর পবিত্র ভালোবাসা টাকে তুমি এইভাবে সারাজীবন বাঁচিয়ে রাখবে। ভালো থেকো তুমি। এইভাবে বেঁচে থাকুক আমাদের ভালোবাসা।

ইতি
তোমার কথা।

খুলনা গেজেট/এমএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!