সময়টা ছিল ১৯৮৯ সাল। আমার পোস্টিং ছিল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানায়। এই থানার একটি লোমহর্ষক কাহিনী এখানে তুলে ধরছি। ঘটনাটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার কারণে কিছু কিছু তথ্য গোপন করবো, আবার কিছু কিছু তথ্য পরোক্ষভাবে তুলে ধরবো। সচেতন পাঠকের জন্য ‘ঈশারায় কাফী’; আর সর্বসাধারণের কাছে আমার ক্ষমা চাওয়া ছাড়া উপায় নেই। পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে সব কথা সবসময় প্রকাশ্যে বলা যায় না।
কোতোয়ালি থানার বাদামতলী এলাকা দেশের সবচেয়ে বড় ফলের আড়ৎ। এখানে প্রতিদিন ভোরে কোটি কোটি টাকার ফল বেচাকেনা হয়। ভোরবেলায় দূর দূরান্তের পাইকারী ও খুচরা ক্রেতা-বিক্রেতার ভীড়ে এলাকা সরগরম থাকে। আড়ৎদার ও ক্রেতা বিক্রেতার কাছে প্রচুর পরিমাণ নগদ টাকা থাকে। ব্যাংক খোলার আগেই বাদামতলী এলাকার কেনাবেচা শেষ হয়ে যায়। সকাল দশটায় ব্যাংক খোলার পর আড়ৎদার ও বেপারীরা যার যার ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার পর নিশ্চিন্ত হন। এখানকার ব্যবসায়ীদের শক্তিশালী সংগঠন আছে। তারা সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ রাখেন।
বাদামতলী এলাকায় পুলিশ ডিউটি জোরদার করার পরও বেশ কয়েকটি বড় ধরণের ছিনতাই হয়ে গেল। সকালের প্রকাশ্য আলোয় চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা ছিনতাই করতে লাগলো। একই দল বার বার ছিনতাই করায় তাদেরকে সকলেই চিনে ফেললো। পুলিশের খাতায় তাদের নাম আগেই ছিল, কিন্তু কোনোভাবেই তাদের পাকড়াও করা যাচ্ছিলো না। এই সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান ছিল জাবের (ছদ্মনাম)। এই জাবের বাদামতলী এলাকার সবার পরিচিত। তার পিছনে বেশ কিছু রাজনৈতিক ইন্ধনদাতা ছিল। আবার বাদামতলীর ব্যবসায়ীদের মধ্যে দ্বিধা বিভক্তির কারণে একে অপরের বিরুদ্ধে এইসব সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করতেন। কেউ কেউ আবার এইসব সন্ত্রাসীদের সাথে আঁতাত করে নিয়মিত বখরা নিতেন। পরবর্তীতে এইসব বখরাখোরদের অনেকে বড় বড় নেতা হয়ে সংসদ কাঁপিয়েছেন। কেউবা স্থানীয় নেতা হয়েই তৃপ্ত থেকেছেন। অনেকে অকালেই ঝরে গেছেন প্রতিপক্ষের আঘাতে।
বিভিন্ন কারণে জাবের ও তার চেলা-বেলাদের গ্রেফতার করা পুলিশের পক্ষে দুঃসাধ্য হয়ে পড়লো। বাদামতলী এলাকার ব্যবসায়ীরা সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে যেমন যোগাযোগ রাখতেন, তেমনি পুলিশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে তাদের যাতায়াত ছিল। তাই বাদামতলীতে পরপর কয়েকটি ছিনতাই ও সন্ত্রাসী ঘটনা সংঘটিত হওয়ায় কোতোয়ালি থানায় চাকরি করা কঠিন হয়ে পড়লো। রাজনৈতিক ও পুলিশের উপর মহলের চাপে থানার ওসি, জোনাল এসি রীতিমতো হেনস্তা হতে লাগলেন। থানায় কর্মরত সকল অফিসারের খাওয়া ঘুম হারাম হয়ে গেল।
ওসি জনাব শ ম আছাব হোসেনের চোখেমুখে হতাশা দেখতে পেলাম। তিনি অত্যন্ত চৌকশ অফিসার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু কোনো কেরামতিতে সফল হতে পারছিলেন না।
একদিন জাবেরের দলের একজন ছোট চেলাকে ধরা হলো। তাকে কয়েকদিন থানায় আটক রেখে মোটামুটি কব্জা করা হলো।
সে বললো- “ভোরবেলায় জাবের এলাকায় এসে তার কয়েকজন বিশ্বস্ত সহযোগীকে খবর দিয়ে টার্গেট ঠিক করে সকাল দশটার ভিতর কাজ সেরে মোটরসাইকেল করে এলাকা ছেড়ে চলে যায়। সারাদিন কোথায় থাকে তা দুই একজন ছাড়া অন্য কেউ জানে না”।
তার কথা বিশ্বাস করে আমরা তাকে কিছু টাকা পয়সা দিয়ে এবং আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখার পরামর্শ দিয়ে ছেড়ে দিলাম। সে আমাদের কথা রক্ষা করে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে থাকলো এবং আমাদের পরামর্শ মোতাবেক জাবেরের সাথে ঘনিষ্ঠ হতে লাগলো। কয়েকদিনের মধ্যে সে জাবেরের একান্ত ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠলো। জাবের তাকে নিয়ে ভোরবেলায় এলাকার কাজ সেরে মোটরসাইকেলে করে ধানমন্ডি এলাকার একটি রাজনৈতিক দলের অফিসে গিয়ে থাকতো। আমাদের নিযুক্ত ছেলেটিকেও সে বিশ্বাস করে দুই একদিন তার সাথে থাকতে দিলো। অবশ্য দুই দিন পর তাকে সেখান থেকে বের করে দেওয়ায় সে একদিন আমাদের সাথে দেখা করলো। তার মুখে ঐ রাজনৈতিক দলের অফিসের ভিতরের বর্ণনা শুনে আমরা রীতিমতো বিস্মিত হলাম। অবশ্য সামান্য সময়ে তাকে ভিতরের সবকিছু তারা দেখতে দেয়নি বলে জানালো। তবে সে যেটুকু দেখেছিল তার বর্ণনা শুনে তাতেই আমরা রীতিমতো ঘাবড়ে গেলাম।
সে জানালো- ঢাকা শহরের অনেক গুণ্ডা, ডাকাত, ছিনতাইকারী, সাজাপ্রাপ্ত আসামি, সন্ত্রাসীরা ঐ অফিসে ‘ফ্রী’ খায়, থাকে। প্রতিদিন সকাল -বিকাল তাদের হাজিরা নেওয়া হয় এবং ট্রেনিং করানো হয়। তাদের প্রত্যেককে বিভিন্ন প্রকার অস্ত্র সম্বন্ধে ধারণা দেওয়া হয়। সেখানে শুধুমাত্র যেসব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আছে তাদেরকে আশ্রয় দেওয়া হয়। মামলা ছাড়া কেউ থাকতে চাইলেও দুই একদিনের বেশি রাখা হয় না।
আমাদের নিযুক্ত ছেলেটির বিরুদ্ধে মাত্র একটি মামলা বিচারাধীন ছিল। তাও সামান্য চুরি মামলা। সেই কারণে জাবেরের শত অনুরোধ সত্ত্বেও অফিসে তাকে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়নি। অবশ্য সে আমাদের কথামতো সেখানে আরো বেশিদিন থাকার জন্য তার বিরুদ্ধে আরো ডাকাতি মামলা আছে বলে তাদেরকে মিথ্যা বলেও থাকার অনুমতি পায়নি। কারণ, কাগজপত্রে প্রমাণ ছাড়া তার উপর তারা আস্থা করেনি।
নিরুপায় হয়ে সে আমাদের কাছে ফিরে এসেছিল। তাই আমরাও সাথে সাথে বুদ্ধি করে ঐ ছেলের বিরুদ্ধে একটা ভূয়া ডাকাতি মামলার চার্জশিট তৈরী করে একটা ফটোকপি তাকে দিলাম। সে ঐ চার্জশিটের কপি নিয়ে জাবেরের মাধ্যমে অফিসে হাজির হলে, তারা তাকে থাকার অনুমতি দিলো। আমরা তাকে শিখিয়ে দিয়েছিলাম- সে জাবেরকে নিয়ে ভোরবেলায় অথবা সন্ধ্যায় কৌশলে অফিসের বাইরে আসবে। তখন আমরা তাকে ধরে নিয়ে আসলে কোন সমস্যা হবে না।
আমাদের কথায় রাজি হয়ে সে ঐ রাজনৈতিক দলের অফিসে থাকতে লাগলো। আমরাও কয়েকজন অফিসার মিলে কয়েকদিন ভোরে ঐ অফিসের আশেপাশে সাদা পোশাকে অবস্থান নিলাম। কিন্তু কোন ফল হলো না। জাবের এবং ঐ অফিসের লোকজন ছিল অত্যন্ত সচেতন।
আমরা এক প্রকার নিরুপায় হয়ে পড়লাম। তখন আমার মনে পড়লো একজন স্বনামধন্য অধ্যাপক সাহেবের কথা (নাম গোপন রাখলাম)। তাঁর বাসায় আমার যাতায়াত ছিল। তাঁর স্ত্রীও ছিলেন অধ্যাপক। তাঁকে আমি ‘চাচিমা’ বলে সম্বোধন করতাম। তিনি কথায় কথায় একদিন আমাকে বলেছিলেন- ঐ রাজনৈতিক দলের তিনি প্রেসিডিয়াম সদস্য।
আমি এই কথা ওসি সাহেবকে জানালে তিনি ঐ মহিলার সাথে দেখা করার জন্য ভীষণ আগ্রহ প্রকাশ করলেন। সুতরাং আমি মহিলার বাসায় ফোন করে তাঁর অনুমতিক্রমে ওসি সাহেবকে নিয়ে তাঁর বাসায় গেলাম। ওসি সাহেব সব ঘটনা তাঁকে খুলে বললেন। তিনি সব কথা শুনে অফিসের বসের (নাম গোপন রাখলাম) কাছ থেকে অনুমতি পেলে সব ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দিলেন। কিন্তু পরদিন তিনি বসের সাথে আলাপ করে অনুমতি না পেয়ে আমাদের কাছে অপারগতা প্রকাশ করে ফোন করলেন। আমরা ভীষণ হতাশ হলাম।
কথায় আছে, ‘রাখে আল্লাহ মারে কে’। ঐদিন বিকালে একটা কাকতালীয় ঘটনা ঘটে গেল। কোতোয়ালি থানার চৌকস এ এস আই মফিজুর রহমান রায়সাহেব বাজার মোড়ে ফোর্স নিয়ে চেকপোস্ট ডিউটি করছিলেন। এমন সময় একটা মোটরসাইকেল চালককে থামার সিগনাল দিলে সে সিগনাল অমান্য করে চলে গেল। ট্রাফিক জ্যামের মধ্যে মোটরসাইকেল চালক বেশিদূর যেতে পারলো না। এ এস আই মফিজ তাকে দৌঁড়ে ধরে ফেললেন। সাথে সাথে ঐ মোটরসাইকেল চালক কোমর থেকে গুলি ভর্তি পিস্তল বের করে এ এস আই মফিজের দিকে তাক করলো। এ এস আই মফিজ পিস্তলসহ ঐ লোককে জাপটে ধরলেন। ডিউটিরত অন্যান্য পুলিশ ও জনগণের সহায়তায় এ এস আই মফিজ ঐ মোটরসাইকেল চালককে আটক করে থানায় নিয়ে গেলেন। কিন্তু অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রসহ পুলিশের কাছে ধরা পড়ার পরও আসামির চোখেমুখে তেমন ভয় সংকোচ দেখা গেল না। বরং সে জোর গলায় বলতে লাগলো- ‘আমাকে আটকে রাখা এত সহজ না’।
ওসি সাহেব তার কথা শুনে একটু চিন্তিত হলেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে সে তেমন কোন তথ্য দিলো না। অস্ত্র বা মোটরসাইকেলের স্বপক্ষে কোন কাগজপত্র দেখাতে পারলো না। সুতরাং ওসি সাহেব একটু ধৈর্য্য ধারণ করে একজন অফিসারকে বললেন, ‘আগামীকাল সকালে বিআরটিএ অফিসে গিয়ে আটককৃত মোটরসাইকেলের মালিকের তথ্য সংগ্রহ করে যেকোন প্রকারে তাকে গ্রেফতার করে থানায় আনবে। তারপর সব ব্যবস্থা হবে। আপাততঃ এই আসামীকে কিছু বলার দরকার নেই’।
যে কথা সেই কাজ। পরদিন সকালে বিআরটিএ অফিস থেকে তথ্য নিয়ে একজন মারকুটে এস আই সাহেব জড়সড়ভাবে ওসি সাহেবকে ফোন করে মোটরসাইকেলের মালিকের তথ্য দিলেন। ওসি সাহেব সব কথা শুনার পর তিনিও জড়সড় হয়ে পড়লেন।
সুতরাং ‘মোটরসাইকেলের মালিকের কী দোষ’ কিছুটা এমন মনোভাব প্রকাশ করে শুধুমাত্র আসামিকে হালকাভাবে কোর্টে চালান করে দেওয়া হলো।
এখানে বলে রাখি- ঐ মোটরসাইকেলটি যার নামে রেজিষ্ট্রেশন করা ছিল তিনি আর কেউ নন; আমাদের সেই মোস্ট ওয়ান্টেড জাবের যে রাজনৈতিক দলের অফিসে আশ্রয় নিয়েছিল সেই দলের সর্বোচ্চ পদের মানুষটিই ছিলেন ঐ মোটরসাইকেলের মালিক।
কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো, ঐ আসামীকে ছাড়ানোর জন্য বা মোটরসাইকেল ফেরৎ নেওয়ার জন্য কোনো ফোন কেউ করেনি। অবশ্য হাতেনাতে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রেফতার হওয়ার পরও অতি দ্রুত ঐ আসামীর জামিন হয়ে গিয়েছিল। আমি ছিলাম ঐ মামলার ‘ঠুটো জগন্নাথ’ তদন্তকারী কর্মকর্তা।
মনে মনে ভাবলাম, ঐ দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য চাচিমাকে ঘটনাটা একটু শেয়ার করি। ওসি সাহেবের অনুমতি নিয়ে চাচিমার সাথে দেখা করতে গেলাম। যাবার সময় ওসি সাহেব আমাকে বার বার সাবধান করে দিলেন। আমি সেদিন একটু ‘ভাবসাব’ নিয়ে চাচিমার বাসায় যেতেই তিনি আমাকে অস্বাভাবিক আদর করতে লাগলেন। তাদের দলের একজন লোক অবৈধ অস্ত্রসহ গতদিন আটক হয়েছিল তা তিনি আগেই জানতেন। তাঁদের নেতা যেকোন কিছুর বিনিময়ে বিষয়টি ম্যানেজ করতে তাঁকে নির্দেশ দিয়েছিলেন তাও জানালেন।
বিষয়টি নিয়ে কোন হৈচৈ বা খবরের কাগজে লেখালেখি বন্ধ করার কথাও বলে দিয়েছিলেন। চাচিমা তাঁদের নেতার সকল নির্দেশনা আমাকে বলার পর, একটা বড় টাকার বাণ্ডিল আমার হাতে দিয়ে বললেন- ‘এটা আমার নেতার পক্ষ থেকে তোমাকে দেওয়ার জন্য পাঠিয়েছে। পরে আরো দেবো। তুমি যেভাবে পারো সবকিছু ম্যানেজ কর। মোটরসাইকেলটিও আস্তেধীরে ফেরত দিও। ধৃত আসামীকে আমরা আদালতের মাধ্যমে যা করার করবো’।
আমি একটু হতভম্ব হয়ে গেলাম। টাকার বাণ্ডিল টেবিলে রেখে আমি বললাম- ‘চাচিমা, আমার টাকা লাগবে না। বরং আপনাদের অফিসে যে মোস্ট ওয়ান্টেড আসামী আশ্রয়ে আছে, তাকে আমাদের কাছে হস্তান্তরের ব্যবস্থা করলে এলাকার মানুষের উপকার হবে। আমাদের চাকরিটাও রক্ষা পাবে। আপনি আমার এই উপকার করলে আপনার দিকে আমি লক্ষ্য রাখবো। আইনের মধ্যে থেকে যতটুকু পারি উপকার করবো’।
পরদিন সকালে চাচিমা ফোন করে ওসি সাহেবকে একা সেই রাজনৈতিক দলের অফিসে যাবার জন্য অনুরোধ করলেন। তাঁর কথামতো ওসি সাহেব গেলেন। কিন্তু নিরাশ হয়ে ফিরে এলেন। ওসি সাহেবের ভাষ্য থেকে জেনেছিলাম, ঐ অফিসের বড় নেতা তাঁকে যথেষ্ট আপ্যায়ণ করেছিলেন; কিন্তু কোনো প্রকারে জাবেরকে হস্তান্তর করতে বা ধরিয়ে দিতে রাজি হননি। মোটরসাইকেল বা অস্ত্রসহ ধৃত আসামী সম্পর্কে কোন কথা বলেননি।
আমরাও ছিলাম নাছোড় বান্দা। আমাদের নিযুক্ত ছেলেটি ইতোমধ্যেই জাবেরের অত্যন্ত বিশ্বস্ত হয়ে গিয়েছিল। এমনকি কোন কোন রাতে জাবের তার এক বান্ধবীর বাসায় ছেলেটিকে নিয়ে যেতো। মধুবাজার এলাকায় একটি বাসায় জাবেরের বান্ধবী একা একা তার রক্ষিতা হয়ে বসবাস করতো। জাবেরের বান্ধবীর বাসা ভালভাবে চিনে নেবার পর ঐ ছেলেটি একদিন অফিস থেকে অনুমতি নিয়ে বের হয়ে আমাদেরকে সেই বান্ধবীর বাসা চিনিয়ে দিয়ে চলে গেল।
জাবের সাধারণত ভোররাতে তার বান্ধবীর বাসায় যেতো। সে জানতো ভোরবেলায় পুলিশ ঘুমাতে যায়। আমরা আগেই জাবেরের গতিবিধি জেনেছিলাম। আমাদের নিযুক্ত ছেলেটির কথামতো ভোররাতে জাবেরের বান্ধবীর বাসার চারদিকে সাদা পোশাকে অবস্থান নিলাম। ঠিক সময়মতো জাবের মোটরসাইকেলে করে এসে তার বান্ধবীর বাসায় ঢুকলো। সাথে সাথে আমরা চারদিক থেকে বাসা ঘিরে ফেললাম। জাবেরের পালাবার কোনো পথ খোলা ছিল না। সে ঘর থেকে বের হয়ে একপর্যায়ে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হলো।
আনন্দ
পুলিশের চাকরিতে কোন মামলার তথ্য উদঘাটন করার মধ্যে একটা অদৃশ্য তৃপ্তি আছে। সেটা আমরা সেদিন উপভোগ করেছিলাম।
কোনো কুখ্যাত অপরাধীর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা অনেক তৃপ্তিদায়ক।
এই ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের নেতাদের কর্মকাণ্ড জেনে পরবর্তী জীবনে উপকৃত হয়েছিলাম।
বেদনা
একজন কুখ্যাত অপরাধীকে পাকড়াও করার পরও তেমন কোনো শাস্তি দেওয়া যায়নি।
অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রসহ কুখ্যাত অপরাধীকে গ্রেফতার করে তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হলেও হয়তো সেই আসামি বেকসুর খালাস পেয়েছিল। কারণ ঐ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হলেও আমাকে কখনও সাক্ষ্য দিতে ডাকেনি।
মোটরসাইকেল ঐ মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত হলেও পরবর্তীতে কোর্টের আদেশে মোটরসাইকেল ফেরত দিতে হয়েছিল। চলবে…
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা, সোনামুখ পরিবার। (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, অব.)