খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১০৮৩
  ১৬ ডিসেম্বর ঘিরে কোনো ধরণের হামলার শঙ্কা নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

কুকি-চিন আতঙ্কে ঈদে বুকিংশূন্য বান্দরবানের হোটেল-মোটেল

গেজেট ডেস্ক 

প্রতিবছর ঈদের ছুটিতে বান্দরবানের বিভিন্ন হোটেল-মোটেল আর রিসোর্টগুলোয় শতভাগ বুকিং হয়। তবে এবারের চিত্র খানিকটা ভিন্ন, ঈদের ছুটিতেও বেশিরভাগ হোটেল-মোটেলই পর্যটকশূন্য। এর নেপথ্যে গত ২ এপ্রিল বান্দরবানের কয়েকটি উপজেলায় পার্বত্য এলাকায় সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্যদের ব্যাংক হামলা, অস্ত্র ও টাকা লুটের ঘটনা। ওই ঘটনায় এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে জেলাজুড়ে।

এমন পরিস্থিতিতে এবার বুকিং হয়নি বেশিরভাগ হোটেল। আবার যেগুলোর বুকিং আগে থেকেই হয়েছিল, সেগুলোর বুকিংও বাতিল করছেন অনেকে। সবমিলিয়ে ঈদ, পয়লা বৈশাখ আর পার্বত্য এলাকার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের সাংগ্রাই উৎসবের দীর্ঘ ছুটিতেও বান্দরবানের হোটেল-মোটেলে পর্যটকদের আশানুরূপ বুকিং নেই।

বান্দরবানের অরণ্য হোটেলের মালিক মো. জসিম উদ্দীন বলেন, একসময়ের শান্তির জনপদ বান্দরবান গত কয়েক বছর ধরে নানা সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য অশান্ত হয়ে পড়েছে। এর ফলে আমরা যারা পর্যটন ব্যবসায় জড়িত, তারাও পড়েছি বিপাকে। পর্যটন নিষেধাজ্ঞা ছাড়াও করোনা, বন্যা মিলিয়ে পর্যটন সংশ্লিষ্টরা পড়েছি ক্ষতির মুখে। এ বছরও যখন পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে একটু বুকিং হতে শুরু করেছিল, ঠিক তখনই বান্দরবানের রুমায় ব্যাংকে হামলা, থানচিতে ব্যাংক লুট, গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। বলতে গেলে প্রায় সব বুকিংই এর ফলে বাতিল হয়েছে।

হোটেল হিলটনের ম্যানেজার মো. আক্কাস উদ্দীন বলেন, গত এক মাস ধরে আমাদের হোটেলে বুকিং শুরু হয়েছিল। সবকিছু ভালোই চলছিল, তবে হঠাৎ হামলার ঘটনার কারণে অনেক পর্যটক বুকিং বাতিল করেছে। আমরা প্রতিবারের মতো এ বছরও পর্যটকদের স্বাগতম জানাতে হোটেলগুলোকে সজ্জিত করে প্রস্তুত করেছিলাম। তবে এবার আশানুরূপ পর্যটক আসছে না।

প্রতিবার দীর্ঘ বন্ধে বান্দরবানের মেঘলা, নীলাচল, নীলগিরি, শৈলপ্রপাত, প্রান্তিক লেক, চিম্বুক, দেবতাকুমসহ বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র ভ্রমণ করে বিমোহিত হন পর্যটকরা। তবে এবার টানা সরকারি ছুটিতেও পর্যটকদের সাড়া পাচ্ছেন না জেলার পর্যটন সংশ্লিষ্ট পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরাও।

বান্দরবানের পর্যটকবাহী পরিবহনের চালক অমল চক্রবর্তী বলেন, আমরা প্রতিবছরের মতো এবারও গাড়িগুলোর ফিটনেস চেক ছাড়াও সুন্দর করে রং লাগানো থেকে শুরু করে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। তবে এ বছর রুমা-থানচির ঘটনায় আমরা খুব হতাশ, পর্যটক আসবে কি আসবে না- সেটা নিয়ে চিন্তিত।

পর্যটকবাহী অপর একটি গাড়ির চালক রুবেল বলেন, আমার গাড়ি কয়েকদিনের জন্য বুকিং ছিল। তবে সেটাও বাতিল হয়েছে। খুব কষ্টের মধ্যে পড়ে যাচ্ছি। পর্যটক না আসলে আমরা কীভাবে চলবো সেটাই বুঝে উঠতে পারছি না।

এদিকে, পর্যটন ব্যবসায়ীদের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও বান্দরবান সম্প্রীতির জেলা। আর এই জেলাতে পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে। আবাসিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছর আমাদের বান্দরবানে ঈদ, পয়লা বৈশাখ, সাংগ্রাই- সবমিলিয়ে শতভাগ হোটেল-মোটেল বুকিং ফুল থাকে। তবে এ বছর যেগুলো বুকিং হয়েছিল, সেগুলোও বাতিল হচ্ছে। আমাদের সকল হোটেলগুলো নতুনভাবে সজ্জিত করে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আমরা পর্যটকদের স্বাগতম জানাই, রুমা-থানচি ব্যতীত বাকি ৫ উপজেলায় বেশকিছু পর্যটন স্পট আছে, সেখানে পর্যটকরা ভ্রমণ করতে পারবেন।

অন্যদিকে, বান্দরবানের পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন বলেন, ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি বান্দরবান জেলা পুলিশও পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে। যেকোনো বিষয়ে পর্যটকদের যেকোনো সহায়তায় জেলা পুলিশ সবসময় প্রস্তুত আছে।

সার্বিক বিষয়ে বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ্‌ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, বান্দরবান একটি পর্যটন নগরী। এখানে প্রায় ৭৪টি পর্যটন স্পট আছে। সেই ৭৪টি কেন্দ্রের মধ্যে রুমা এবং থানচি উপজেলায় কয়েকটি পর্যটন কেন্দ্র। বাকি প্রায় ৭০টি বান্দরবান সদর, লামা, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি, রোয়াংছড়ি- এসব উপজেলায়। তাছাড়া অনেকসময় নানা কারণে পর্যটকরা সেইসব দুর্গম এলাকায় যেতে পারেন না।

তবে বান্দরবানের নীলাচল, নীলগিরি, শৈলপ্রভাত, চিম্বুক, মেঘলা, প্রান্তিক লেক, মিরিঞ্জা, আলী সুরঙ্গ, মারাইতংসহ বেশকিছু পর্যটন স্পটে বেশিরভাগ পর্যটক ভ্রমণ করেন জানিয়ে তিনি বলেন, পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য প্রস্তুত বান্দরবান। এছাড়া পর্যটকদের নিরাপত্তায় জেলা প্রশাসন ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সবসময় প্রস্তুত।

পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, প্রায় সময় সন্ত্রাসীদের এমন কার্যক্রমে গত দুই বছর ধরে পর্যটনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে আবারও পর্যটনবান্ধব বান্দরবানে পর্যটকদের আমেজ ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনের স্থায়ী পদক্ষেপ জরুরি।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!