ধান, গম, ফল থেকে শুরু করে সব ধরনের শাকসবজির প্রধান শত্রু বিভিন্ন প্রজাতির পোকামাকড়। ক্ষতিকর পোকার আক্রমণে ফলন কমে যায়, লোকসানের মুখে পড়েন কৃষক। এই ক্ষতি থেকে বঁাঁচতে অনেকটা বাধ্য হয়েই ফসলে কীটনাশক ব্যবহার করেন তারা। শাকসবজি, ফল থেকে সেই কীটনাশক প্রবেশ করে মানবদেহে। যার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবে নানান জটিল রোগে আক্রান্ত হয় মানুষ।
অথচ প্রাকৃতিকভাবে পোকা দিয়েই ক্ষতিকর এসব পোকা দমন করা সম্ভব। কিন্তু অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে প্রকৃতির উপকারী পোকাগুলোও এখন বিপন্নের পথে। এ অবস্থায় ফসলের ক্ষতিকর পোকা দমনে গবেষণাগারে ৫ প্রজাতির উপকারী পোকার দ্রুত উৎপাদন ও বংশবিস্তার প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোটেকনোলোজি ডিসিপ্লিনের গবেষক ও কীটতত্ববিদরা। এসব উপকারী পোকা দিয়েই যে কোনো ফসলের ক্ষতিকর পোকা দমন করা সম্ভব বলে তারা জানিয়েছেন।
গত বুধবার তাদের এই উদ্ভাবন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, কৃষি বিজ্ঞানী এবং কৃষকদের সামনে উপস্থাপন করা হয়। নতুন এই উদ্ভাবনকে স্বাগত জানিয়েছেন সবাই। কৃষকরাও স্বল্পমূল্যে প্রাকৃতিক বালাইনাশক পাওয়ার আশ্বাসে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোটেকনোলোজি ডিসিপ্লিনের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. শামীম আহমেদ কামাল উদ্দিন খান জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় ২০১৯ সালের শেষ থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারে উপকারী পোকার উৎপাদন বাড়ানোর কাজ শুরু হয়। কিন্তু করোনার কারণে দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ ছিলো। ২০২২ সালে পুনরায় এই কাজ শুরু হয়। চলতি বছর উপকারী পোকার বংশবিস্তার সফল হয়েছে।
তিনি বলেন, মাঠে একবার এই উপকারী পোকা ছেড়ে দিলে তারা নিজেরাই বংশবিস্তার করতে থাকবে। একপর্যায়ে খেতের সব ক্ষতিকর পোকা দূর হয়ে যাবে। এই পোকার কারণে ফসলের কোনো ক্ষতি হবে না।
প্রকল্পের খুলনা অঞ্চলের পরিচালক ও কীটতত্ববিদ অধ্যাপক ড. শিমুল দাস জানান, এ পর্যন্ত ৫ প্রজাতির পোকার সফল বংশবিস্তার ঘটানো সম্ভব হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে হ্যাব্রোব্রেকন হেবিটর, ট্রাইকোগ্রামা, জাপোনিকাম, ট্রাইকোগ্রামা প্রিটিসাম, ট্রাইকোগ্রামমা ইভানসেন্স এবং ট্রাইকোগ্রামমা চিলোনিস। এর মধে ট্রাইকোগ্রামা ফসলের ক্ষতিকারক সব ধরনের পোকার ডিম নষ্ট এবং হেব্রোব্রাকোন পোকার লার্ভা নষ্ট করে প্রাকৃতিকভাবে এর বংশ বিস্তার দমন করবে।
তিনি বলেন, প্রকৃতি থেকে কিছু উপকারী এনে গবেষণাগারে এগুলোর দ্রুত বংশবৃদ্ধির প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করা হয়েছে। গবেষণাগারে উৎপাদন করা পোকা বিনামূল্যে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হবে। একই সঙ্গে পোকা উৎপাদন প্রক্রিয়া কৃষিদের শিখিয়ে দেওয়া হবে, এতে কৃষক নিজেরাই ঘরে বসে এসব পোকা উৎপাদন করতে পারেন।
বুধবার দুপুরে গবেষণাগারে পোকা দেখতে যান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনা অঞ্চলের কৃষি অতিরিক্ত পরিচালক মোহন কুমার ঘোষ, খুলনা জেলার উপ-পরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন, অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মোসাদ্দেক হোসেনসহ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা।
কৃষিবিদ মোহন কুমার ঘোষ জানান, উপকারী পোকাগুলো পরিবেশবান্ধব। এদের তারা ফসল বা প্রকৃতির কোনো ক্ষতি হবে না। আর কৃষকদের বিষয়টি বোঝানো গেলে কীটনাশকের ব্যবহার শুন্যে নামিয়ে আনা সম্ভব।
কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে ডুমুরিয়া উপজেলার ১৫-২০ কৃষকও গবেষণাগারে পোকাগুলো দেখতে আসেন।
খর্নিয়া গ্রামের কৃষক দিদারুল ইসলাম জানান, আমরা তো বাধ্য হয়েই কীটনাশক দেই। এই পোকা যদি কার্যকরভাবে পোকা দমন করতে পারে তাহলে টাকা খরচ করে বিষ কিনবো কেন ?
খুলনা গেজেট/হিমালয়