খুলনায় কিশোর ইয়াছিন ওরফে শুভ হত্যার দায়ে দুই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি তাদের প্রত্যেককে ৫ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। জরিমানার অর্থ ক্ষতিপূরণ বাবদ ভিকটিমের পরিবারকে দেওয়ার আদেশ দিয়েছে আদালত। অপরদিকে তিন আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে প্রমান করতে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দুপুরে খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. শরীফ হোসেন হায়দার এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওই আাদলতের বেঞ্চ সহকারী গনেশ কুমার দাস।
সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- খালিশপুর থানাধীন রায়েরমহল উত্তরপাড়ার বাসিন্দা শেখ শামসুর রহমানের ছেলে ইসরাফীল এবং সোনাডাঙ্গা থানার আন্দিরঘাট এলাকার বাসিন্দা শামসু শেখের ছেলে মিঠু।
খালাসপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- রায়েরমহল এলাকার বাসিন্দা আ: ছাত্তার মুন্সির ছেলে মো. আরেফিন মুুন্সি এবং একই এলাকার বাসিন্দা নুর মোহাম্মাদ নুরুর ছেলে আবুল কলাম আজাদ ওরফে ডিবি কালাম ও আ: ওহাব শেখের ছেলে মিরাজ।
এজাহার সূত্রে জানা গেছে, খালিশপুর থানাধীন বয়রা রায়েরমহল উত্তরপাড়া এলাকার বাসিন্দা শেখ শামসুর রহমানের বাড়িতে মাসিক এক হাজার টাকা চুক্তিতে কাজ করত ইয়াছিন ওরফে শুভ। ওই বাড়ির কাউকে কিছু না জানিয়ে শুভ ২০১০ সালের ৩১ জানুয়ারি বের হয়ে যায়। পরবর্তীতে সে তার চাচা মো. কাওছার শেখের বাড়িতে চলে যায়। রাতে সেখানে খাওয়া দাওয়ার পর ঘুমিয়ে থাকে।
পরদিন সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে সে চাচা বাড়ি থেকে বের হলে আন্দিরঘাটস্থ শামসুল হকের ছেলে মিঠু তাকে ভ্যান চুরি করার অপরাধে চড় থাপ্পড় মেরে শুভকে আটকিয়ে রেখে মোবাইল করে ইসরাফীলকে বয়রায় আসতে বলে। ইসরাফিল এবং কালাম শুভকে মারধর করে মোটরসাইকেল যোগে ডুমুরিয়ায় ঘেরের দিকে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে শুভর মা বিষয়টি জানতে পেয়ে বয়রায় মিঠুর কাছে জানতে পারে তার ছেলেকে মোটরসাইকেলযোগে ইসরাফিল এবং কালাম ধরে নিয়ে গেছে।
ঘেরে নিয়ে গিয়ে শুভর ভ্রু, মাথার চুল এবং গোফ কেটে দেয় ইসরাফিল। পরে সেখান থেকে বাড়ি নিয়ে গিয়ে শেকল দিয়ে খেজুর গাছে সাথে শুভকে বেঁধে রাখা হয়। শীতের রাতে বাইরে বেঁধে রাখার কারণে শুভ অসুস্থ হয়ে পড়ে। শুভ মাকে খবর দিয়ে ঘটনাস্থলে আসতে বলে ইসরাফিল। পরবর্তীতে মা নিলুফার কাছে দু’শত টাকা ধরিয়ে দিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয়। সেখানে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেলা ১১ টার দিকে শুভর মৃত্যু হয়। এরপর তার লাশ খালিশপুর থানাধীন রায়েরমহল এলাকার ব্যাংক কলোনীতে মামার বাড়িতে নেওয়া হয়।
২ ফেব্রুয়ারি এ ঘটনায় মৃত শুভর চাচা বাদী হয়ে খালিশপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন, যার নং ২। এ মামলায় ৪ জনকে আসামি করা হয়। একই বছরের ৯ আগস্ট তদন্ত কর্মকর্তা খালিশপুর থানার এসআই আলতাফ হোসেন ৫ জনকে আসামি করে আদলতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
খুলনা গেজেট/এএজে