কণ্ঠের জাদুতে দীর্ঘদিন ধরে সবাইকে মুগ্ধ করে রেখেছেন সংগীত জগতের কিংবদন্তি শিল্পী রুনা লায়লা। ষাটের দশকে যাত্রা শুরুর পর থেকে আজ অবধি ছড়িয়ে যাচ্ছেন কণ্ঠের মায়াজাল, মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছেন কোটি শ্রোতাকে। উপমহাদেশের প্রখ্যাত এই কণ্ঠশিল্পীর ৬৮তম জন্মদিন আজ। ১৯৫২ সালের ১৭ নভেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন প্রখ্যাত এই শিল্পী।
মা অনিতা সেন আর মামা বিখ্যাত সংগীত শিল্পী সুবীর সেনের হাত ধরে সঙ্গীতের হাতেখড়ি। সংগীতময় পরিবেশে যার একটু একটু করে বেড়ে ওঠা। তিনি উপমহাদেশের বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা।
বাবা সরকারি কর্মকতা হওয়ার সুবাদে আড়াই বছর বয়সে রাজশাহী থেকে চলে যেতে হয় তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের মুলতানে। যার ফলে শৈশব কাটে পাকিস্তানের লাহোরেই। সেসময় মা, মামার পাশাপাশি দীক্ষা নেন উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত আর গজলে।
ছয় বছর বয়সে দর্শকের সামনে প্রথম গান গেয়ে মাত করেন কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা। মাত্র এগারো বছর বয়সে শুরু হয় সিনেমায় প্লেব্যাক। করাচিতে জুগনু চলচ্চিত্রে প্রথম গান করার মধ্য দিয়ে সিনেমার গানে রুনা লায়লার যাত্রা শুরু।
পাঁচ বছর পর, ১৯৭০ সালে বাংলাদেশ অর্থাৎ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে নজরুল ইসলাম পরিচালিত স্বরলিপি চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে প্রথম সিনেমায় গাওয়া গান। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে চলে আসার পর প্রথম তিনি গেয়েছেন সত্য সাহার সুরে ‘জীবন সাথী’ ছবিতে। এরপর একে একে সঙ্গীত ভুবনেই কেটে যায় পাঁচ দশক। জায়গা করে নেন উপমহাদেশেও।
বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতীয় ও পাকিস্তানি চলচ্চিত্রের অনেক গানে তিনি কণ্ঠ দিয়েছেন। এছাড়া চলচ্চিত্রের গানে পাঁচ দশক ধরে কণ্ঠ দিয়ে যাচ্ছেন। যার গান রূপ, রস, গন্ধ সব বয়সী শ্রোতাকে মুগ্ধ করে। আর তাঁর গানের তালে তালে নৃত্য, হাতের ভঙ্গিমা ও ফ্যাশনে তিনি তৈরি করেছেন স্বকীয়তা। ছোটবেলায় কত্থক, ভরতনাট্যম ও কথাকলি নাচও শিখেছেন তিনি।
পাঁচ দশকের সংগীতজীবনে লোকজ, পপ, রক, গজল, আধুনিক—সব ধাঁচেই কৃতিত্ব দেখিয়েছেন রুনা। বাংলা, হিন্দি, উর্দু, ইংরেজিসহ ১৮টি ভাষায় তাঁর কণ্ঠে গান শোনা গেছে। এ পর্যন্ত গানের সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি।
নব্বইয়ের দশকে মুম্বাইয়ে পাকিস্তানি সুরকার নিসার বাজমির সুরে একদিনে ১০টি করে তিন দিনে ৩০টি গানে কণ্ঠ দিয়ে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লেখান রুনা। সিনেমায় প্লেব্যাক করে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন ছয়বার।
১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ‘স্বাধীনতা দিবস’ পুরস্কারে ভূষিত করে। সংগীতের জন্য তিনি নিজের দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও নানা পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হন। সায়গল পুরস্কার’ দুবার নিগার পুরস্কার, দুবার গ্র্যাজুয়েট পুরস্কার এবং জাতীয় সংগীত পরিষদ স্বর্ণপদকও পেয়েছেন গুণী এই শিল্পী।
খুলনা গেজেট / এমএম