অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ আর থাকবে কি না সে বিষয়ে নতুন কোনো নির্দেশনা নেই ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে। বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটের ঘোষণা অনুযায়ী কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ আগামী ৩০ জুন শেষ হবে।
বৃহস্পতিবার (৩ জুন) জাতীয় সংসদে ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। প্রস্তাবিত বাজেটের মূল প্রতিপাদ্য ‘জীবন ও জীবিকার প্রাধান্য, আগামীর বাংলাদেশ’।
কালো টাকা সাদা করার সুযোগের বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য (করনীতি) মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘বাজেটে যেহেতু নতুন করে ঘোষণা আসেনি, সেহেতু অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ আর থাকছে না।’
২০২০-২০২১ অর্থ-বছরের বাজেটে পুঁজিবাজার ও আবাসন খাতে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। ওই বাজেট প্রস্তাবনায় পুঁজিবাজার ও আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন হয়নি এমন জমি বা ফ্ল্যাট বৈধ করার সুযোগ ছিল।
এতদিন অতিরিক্ত ১০ শতাংশ হারে কর দিয়ে একজন বিনিয়োগকারী তার অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কিনতে পারতেন, যেখানে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার কোটি টাকা সাদা হয়েছে।
বর্তমানে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও অপ্রদর্শিত অর্থ অর্থনীতির মূলধারায় আনতে শর্ত সাপেক্ষে ১০ শতাংশ কর দিয়ে শেয়ার, স্টক, মিউচুয়াল ফান্ড, বন্ড, ডিভেঞ্চারে বিনিয়োগ করা যায়। এছাড়া, অপ্রদর্শিত স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি, নগদ টাকা, ব্যাংক আমানত, সঞ্চয়পত্র রিটার্ন প্রদর্শনের মাধ্যমে বৈধ করার সুযোগ রয়েছে। এজন্য অর্থবিলের মাধ্যমে আয়কর অধ্যাদেশে এ সংক্রান্ত একটি ধারা যুক্ত করা হয়েছে।
এদিকে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগের বিষয়ে নতুন করে ঘোষণা না দেওয়াকে সতর্ক সাধুবাদ জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
বৃহস্পতিবার (৩ জুন) প্রস্তাবিত বাজেট পেশের পর এক বিবৃতিতে এ সাধুবাদ জানায় সংস্থাটি। সৎ করদাতাদের প্রতি বৈষম্যমূলক ও অসাংবিধানিক এই সুবিধা যেন অন্য কোনো উপায়ে আয়কর অধ্যাদেশে রাখা না হয় সে বিষয়েও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে টিআইবি।
একইসঙ্গে কোভিড নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যখাতের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ খাতসমূহে বরাদ্দ বৃদ্ধিই নয়, সার্বিকভাবে বাজেট বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ নিশ্চিতে সুনির্দিষ্ট পথরেখা না থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, সব মহলের তীব্র আপত্তি ও প্রতিবাদ সত্ত্বেও চলতি বাজেটে অর্থমন্ত্রী কালো টাকা বৈধ করার যে ঢালাও সুবিধা দিয়েছিলেন, সেটি আসন্ন বাজেটে নতুন করে না রাখার সিদ্ধান্ত সরকারের বোধোদয় হিসেবে ধরে নেওয়া যেতে পারে।
তিনি বলেন, ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করে ৩৩ হাজার কোটি টাকা (যা মোট বাজেটের প্রায় ৭ শতাংশ) রাখা হলেও প্রয়োজনের তুলনায় এখনো তা অনেক কম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী দেশে চিকিৎসাসেবায় সরকারের ২৬ শতাংশ খরচের বিপরীতে দেশের এই হার জাতিসংঘের সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রস্তাবে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য লজ্জাজনক।
তিনি আরও বলেন, ক্রমাগত দুর্নীতি ও ন্যায়সঙ্গত ব্যয় সক্ষমতার অভাবে এ বরাদ্দও সঠিকভাবে ব্যয় না হওয়ার প্রবল ঝুঁকি আছে, যা থেকে উত্তরণে বাজেটে সুনির্দিষ্ট কোনো পথরেখা দেওয়া হয়নি, যা হতাশাব্যঞ্জক। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্বাস্থ্যখাতে প্রকাশিত অকল্পনীয় ও আকাশচুম্বী দুর্নীতির লাগাম টানতে এ খাতটি ঢেলে সাজানোর কোনো বিকল্প নেই।
করোনা মোকাবিলায় ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ এবং দেশে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে টিকা কার্যক্রমে সরকারের বিনিয়োগ ভাবনাকে সাধুবাদ জানিয়ে ড. জামান বলেন, করোনা মোকাবিলায় বরাদ্দ দেওয়াটাই যথেষ্ট নয়। এক্ষেত্রে অর্থ ব্যয় প্রক্রিয়া যেন স্বচ্ছতার সঙ্গে করা হয়। স্বাস্থ্যখাতে জেঁকে বসা দুর্নীতি যেন কোনোভাবেই সুযোগ নিতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। একইভাবে করোনোর টিকা সংগ্রহের ক্ষেত্রেও সরকার স্বচ্ছ ক্রয়প্রক্রিয়া অনুসরণ করবে এবং জনস্বার্থকে অগ্রাধিকার দেবে এমনটাই প্রত্যাশিত।
খুলনা গেজেট/ এস আই