মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় বখাটেদের হামলায় আহত বাবার দুই পা কেটে ফেলতে হয়েছিল। ওই ঘটনায় করা মামলায় সাক্ষী ছিলেন পীর আলী নামের একজন। এ জন্য তাঁকে হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়। জীবন বাঁচাতে তিনি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। আজ সোমবার সকালে নিজ গ্রামের খালপাড় থেকে গলায় রশি বাঁধা অবস্থায় তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
পীর আলী (৩৫) ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার কাষ্টভাঙ্গা গ্রামের সামছুল ইসলামের ছেলে। তিনি কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। তিনি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে অপর প্রার্থী কামাল হোসেনের কাছে পরাজিত হন। কামাল হোসেন ওই দুই পা কাটা মামলার আসামি।
পীর আলীর মা মনোয়ারা বেগম অভিযোগ করেন, তাঁর ছেলেকে হত্যা করে গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তাঁর অনেক শত্রু ছিল, যাঁরা প্রায়ই হুমকি দিতেন।
কাষ্টভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা আবু সুফিয়ান বলেন, পীর আলী গতকাল রোববার রাত ৯টার দিকে গ্রামের একটি দোকান থেকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। এর পর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। আজ সকালে গ্রামের একটি খালের ধারে তাঁর লাশ পড়ে থাকতে দেখেন লোকজন। তাঁর গলায় রশি ছিল, যা একটি গাছের ডালের সঙ্গে বাঁধা। ডালটি ভেঙে মাটিতে পড়ে ছিল।
খবর পেয়ে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। কালীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মতলবুর রহমান বলেন, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পীর আলীর লাশ ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। লাশের গলায় রশি বাঁধা ছিল। এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা, তা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে।
২০১৬ সালের ১৬ অক্টোবর একদল সন্ত্রাসী হাতুড়ি, রড ও শাবল দিয়ে কাষ্টভাঙ্গা গ্রামের শাহানূর বিশ্বাসকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় এই হামলা চালানো বলে অভিযোগ করেন শাহানূর। পরে চিকিৎসার সময় শাহানূর বিশ্বাসের দুই পা কেটে ফেলতে হয়। এ ঘটনায় ঝিনাইদহ আদালতে একটি ও কালীগঞ্জ থানায় আরেকটি মামলা করা হয়। এতে কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক, ইউপি সদস্য ও নলভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা কামাল হোসেন, মাহবুবুর রহমান বিশ্বাস, আজম আলী, মোতালেব বিশ্বাস প্রমুখকে আসামি করা হয়।
ওই মামলায় সাক্ষী ছিলেন পীর আলী।
তাঁর কয়েকজন স্বজন বলেন, পীর আলীকে একটি পক্ষ প্রায়ই দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে আসছিল। এ জন্য তিনি ২০২১ সালের ৪ ডিসেম্বর কালীগঞ্জ থানায় একটি জিডি করেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, গ্রামের শাহানূর বিশ্বাসের পা হারানোর ঘটনায় করা মামলায় তিনি সাক্ষী। করোনার আগে এক দফা তিনি এই মামলায় সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আদালতে যান। সে সময় আসামিপক্ষ পথে বাধা সৃষ্টি করে। জীবননাশের হুমকির কারণে তিনিসহ অন্য সাক্ষীরা ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারছেন না।
এ সম্পর্কে ইউপি সদস্য কামাল হোসেন মুঠোফোনে বলেন, ওই জিডিতে তিনজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছিল। সেখানে তাঁর নাম ছিল না। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও, পীর আলীর সঙ্গে তাঁর ভালো সম্পর্ক ছিল। তাঁরা একসঙ্গে রাজনীতি করতেন।
খুলনা গেজেট/এএ