খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এপ্রোচ সড়ক উন্নয়ন কাজ। কার্যাদেশ পাওয়ার ৮ মাস পরও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মূল সড়কের আধুনিকায়নের কাজ শুরু করতে পারেনি। প্রকল্পের আওতায় ধীরগতিতে চলছে সড়কের দু’পাশে ড্রেন নির্মাণের কাজ। বর্তমানে ড্রেন নির্মাণের কাজও বন্ধ রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে নির্মাণ কাজে এ বেহাল অবস্থার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও ক্ষুব্ধ। গত ৬ মাসে ড্রেন নির্মাণের কাজ হয়েছে মাত্র ৫৮০ মিটার। যা মূল কাজের ৩৯ শতাংশ। কাজের এ ধীরগতির কারণে গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি দিয়ে যাতায়াতকারী যানবাহনের চালক এবং পথচারীদের দুর্ভোগ হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সড়কের দু’পাশের ব্যবসায়ীরা। কার্যাদেশ অনুযায়ী ২০২৪ সালের ১২ জানুয়ারির মধ্যে এপ্রোচ সড়ক দৃষ্টিনন্দন ও আধুনিকায়নের কাজ সম্পন্ন করা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
সড়কের টাইলস এন্ড স্যানিটারি ব্যবসায়ী রেজোয়ান পারভেজ আকাশ খুলনা গেজেটকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ড্রেনের কাজ চলছে। দোকানের সামনে পানি, বালি, মাটি, কাঁদা ধুলা জমে থাকায় কাস্টমার আসতে পারে না। বেচা বিক্রি কমে গেছে। গত ৬ মাস থেকে এ অবস্থা চলছে। দোকান ভাড়া দিতে কষ্ট হচ্ছে। ব্যবসার মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। ড্রেনের কাজ চলছে খুব ধীরগতিতে। এ অবস্থা কতদিন চলবে আমরা জানিনা?
কুয়েট মেইন রোডের মোঃ শফিকুল ইসলাম নামে অপর ব্যবসায়ী বলেন, রাস্তার খনন কাজের চলমান প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সময়ের কাজ সময় করছে না। একবার ড্রেন করার জন্য খুঁড়ে রাখলো প্রায় তিন মাস। এখন ড্রেনের উপর স্লাপ দিচ্ছে না। দূর্ঘটনার ভয়ে স্লাপ ছাড়া ড্রেনের উপর দিয়ে কাস্টমার দোকানে আসছে না। গত ৮ মাস ধরে এই রোডে আমরা সাধারণ ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আমরা কার কাছে অভিযোগ দিবো?
আকাশ এবং শফিকুল ইসলামের মতো সড়কের অধিকাংশ ব্যবসায়ী কাজের এই ধীরগতির কারণে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
কাজের এই ধীর গতির কারণ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ার মোঃ আশরাফ আলীর কাছে। তিনি খুলনা গেজেটকে বলেন, প্রশস্ততায় সড়কের জায়গা আছে মোট ৫৭ ফুট। ড্রেনসহ সড়কের উন্নয়ন কাজও করতে হবে ৫৭ ফুট। ড্রেনের বাইরে সড়কের কোন জায়গা নেই। কাজের শুরু থেকে আমাদের এই জটিলতা ভোগ করতে হচ্ছে। কাজে ধীর গতির এটা একটা বড় কারণ। এছাড়া বৃষ্টির কারণে আমাদের কাজে অনেক ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে।
কেসিসি’র প্রধান প্রকৌশলী (চঃদাঃ) মশিউজ্জামান খান খুলনা গেজেটকে বলেন, কুয়েট এপ্রোচ রোড উন্নয়ন প্রকল্পের এ পর্যন্ত ৩৯ শতাংশ কাজ হয়েছে। মূল সড়কের উন্নয়ন কাজ এখনো শুরু হয়নি। সড়কের দু’পাশে ড্রেনের কাজ চলমান আছে। এ পর্যন্ত ৬৮০ মিটার ড্রেনের কাজ হয়েছে।
তিনি বলেন, কাজে ধীর গতিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি রয়েছে। কাজের গতি বাড়ানোর জন্য বারবার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আমাদের অফিস থেকে সতর্ক করে সর্বোচ্চ চিঠি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ঢাকার পিডি (প্রজেক্ট ডাইরেক্টর) অফিস থেকে কেন শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না এ সংক্রান্ত কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) কর্তৃপক্ষের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে এলজিইডি ও কেসিসি’র যৌথ উদ্যোগে দ্বিতীয় নগর অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সড়কটি আধুনিকায়নের কাজ চলছে। প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা খুলনা সিটি কর্পোরেশন চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি মাহবুব ব্রাদার্স প্রাঃ লিঃ নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান করে।
কার্যাদেশ অনুযায়ী খুলনা-যশোর মহাসড়কের ফুলবাড়িগেট হতে গভঃ ল্যাবরেটরি হাইস্কুল পর্যন্ত ১ হাজার ১৮৫ মিটার সড়ক আধুনিকায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ২২ কোটি ৮৪ লাখ ৫৪ হাজার ২৩০ টাকা। গভরমেন্ট অফ বাংলাদেশ (জিওবি) এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) কাজটিতে অর্থায়ন করছে।
প্রকল্পের আওতায় খুলনা-যশোর মহাসড়কের কুয়েট রোডের প্রবেশদ্বারে আধুনিক ট্রাফিক আইল্যান্ড ও গাড়ি পার্কিং এর সুব্যবস্থা থাকবে। কুয়েট রোডের প্রবেশদ্বার হবে ৬০ ফুট প্রশস্ত। ২ লেন বিশিষ্ট সড়কটির প্রত্যেক লেন প্রশস্ত হবে সাড়ে ২২ ফুট। সেই হিসেবে মূল এপ্রোচ সড়কটি প্রশস্ত হবে ৪৫ ফুট। সড়কের মাঝখানে রোড ডিভাইডারসহ দুই পাশে পানি নিষ্কাশনে থাকবে ৫ ফুট প্রশস্ত ড্রেন। ড্রেনের উপর দিয়ে জনসাধারণের চলাচলের জন্য ফুটপাতের ব্যবস্থা রয়েছে। কুয়েট প্রধান ফটকের সামনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় নির্মিত হবে দৃষ্টিনন্দন আইল্যান্ড।
চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি এপ্রোচ সড়ক উন্নয়ন কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন কেসিসি মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক।
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে সিটি মেয়র কার্যাদেশ অনুযায়ী নির্ধারিত সময় ২০২৪ সালের ১২ জানুয়ারীর মধ্যে এপ্রোচ রোডের উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
খুলনা গেজেট/এনএম