পদ্মা সেতু আজ রোববার জনসাধারণের জন্য অর্থাৎ যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়ায় কারণে-অকারণে গোপালগঞ্জের অনেকেই ঢাকা-গোপালগঞ্জ-ঢাকা যাতায়াত করছেন। দীর্ঘ বছরের যে কষ্ট আর বঞ্চনা সয়েছেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ সে দুঃখ কষ্টের লাঘব হয়েছে।
দেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা গতকাল শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে এই সেতু উদ্বোধন করায় মনের খুশিতে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের অনেকেই কোন কাজ না থাকলেও ঢাকায় গিয়েছেন। আবার অনেকেই ঢাকা থেকে বাড়িতে এসেছেন, আবার বিকেলে ফিরে যাবেন। ইতিহাসের স্বাক্ষী হতে তাদের এই যাওয়া-আসা।
অনেকেই মটরসাইকেলে করে ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জে এসেছেন, আবার ঢাকার দিকে রওনা হয়েছেনও অনেকেই। এমনিতেই গোপালগঞ্জবাসীর মধ্যে পদ্মা সেতু চালু হওয়া নিয়ে একটা আলাদা অনুভূতি, আলাদা আনন্দ বয়ে যাচ্ছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মস্থান এই গোপালগঞ্জ। জাতির পিতার মেয়ে শেখ হাসিনার দৃঢ় মনোবলের কারনে আজ খরস্রোতা পদ্মার বুকে নির্মিত হয়েছে এই অঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু। যদিও এখন আর পদ্মা সেতু স্বপ্ন নয়, স্বপ্ন আজ বাস্তবে রুপ নিয়েছে জাতির পিতার কন্যার হাত ধরে।
আজ রোববার ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ হয়ে বাগেরহাট যাচ্ছিলেন মটরসাইকেলে করে মোহাম্মেদ হোসেন। স্থানীয় পুলিশ লাইনস এলাকায় সকাল সাড়ে ৮টায় আলাপ কালে খুলনা গেজেটকে বলেন, আমি খুবই আনন্দিত, উদ্বেলিত। বাধাহীনভাবে ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জে এসে পৌছেছি। এটি একদিন আগেও সম্ভব হয়নি। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক দৃঢ় মনোবলের কারণে এটি সম্ভব হয়েছে।
পুরান ঢাকার বাসিন্দা ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ আসা অপর মটরসাইকেল আরোহী অপু মিয়া বলেন, আগামী কোরবানীর ঈদে যারা বাড়ি আসবেন তাদেরকেও ঝামেলা পোহাতে হবেনা। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের জন্য কষ্ট করতে হবেনা বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, এখন ইচ্ছা করলেই যখন খুশি তিনিসহ অন্যরা ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জের বাড়িতে আসতে পারবেন আবার যেতেও পারবেন।
শাহানাজ পাভিন নামের ইমাদ পরিবহনের এক যাত্রী বলেন, আমি ঢাকা থেকে ৫টা ১০ মিনিটের গাড়িতে রওনা দিয়েছি। মাত্র ৭ মিনিট সময় লেগেছে পদ্মা ব্রিজ পার হতে। যেখানে গোপালগঞ্জ পৌছাতে ৪ থেকে ৫ ঘন্টা সময় লাগতো। সেখানে মাত্র ৩ঘন্টায় গোপালগঞ্জে পৌছেছি। এখন ইচ্ছা করলেই যখন খুশি তিনিসহ অন্যরা ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জের বাড়িতে আসতে পারবেন, আবার যেতেও পারবেন।
অন্যদিকে, গোপালগঞ্জ থেকে আজ রোববার সকালে যারা ঢাকা যাচ্ছেন, তাদের মধ্যেও উচ্ছাসের কমতি নাই। আজ প্রথম দিনই তারা বাসে করে ঢাকায় যাচ্ছেন এই ভেবে যে, তাদের সারাজীবনের স্বপ্ন পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে তারা ঢাকা যেতে পারছেন।
তানজিমা তাসনিম নামের এক যাত্রী তাঁর স্বামীর সাথে খুলনা থেকে ঢাকায় যাচ্ছিলেন “ফাল্গুনী” পরিবহনে করে।তিনি বলেন, আগে খুলনা থেকে ৭/৮ ঘন্টায় ঢাকায় যেতে হতো। আর এখন আমরা ফেরিঘাটের সেই কষ্টকে ভুলে অর্ধেক সময়ের মধ্যে ঢাকায় পৌছাতে পারবো। আমাদের এটা এক আনন্দের বিষয়। এ আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না।
খুলনা থেকে ঢাকাগামী ইমাদ পরিবহনের ড্রাইভার সেলিম মিয়া এবং টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেসের ড্রাইভার স্বপন আহম্মেদ বলেন, এখন আর আমাদেরকে বেশী সময় ব্যয় করে ঢাকায় যেতে হবে না। আগে যদি দুই ট্রিপ দিতে পারতাম, তাহলে এখন তিন ট্রিপ দিতে পারবো। আমাদের যেমন সুবিধা হয়েছে, তেমনি যাত্রীদেরও সুবিধা হয়েছে।
অন্যদিকে, আজ ২৬ জুন বিকাল ৩টায় স্থানীয় পৌর পার্কে স্থানীয় শিল্পীদের অংশগ্রহণে আনন্দ উৎসব ও সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকা থেকে আগত কন্ঠশিল্পী ক্লোজআপ ওয়ান তারকা রাজীব ও চ্যানের আই তারকা ইমরানের পরিবেশনায় সঙ্গীতানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়া, আগামীকাল ২৭ জুন পৌর পার্কে উপজেলার শিল্পীদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও রাত ৮ টায় যাত্রাপালা “রূপবান” প্রদর্শিত হবে।