খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১০৮৩
  ১৬ ডিসেম্বর ঘিরে কোনো ধরণের হামলার শঙ্কা নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

কাবিনের টাকাসহ তালাক না দেওয়ায় বাবুকে হত্যা করা হয় : আদালতে স্ত্রীর স্বীকারোক্তি

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

‘কাবিনের দেড়লাখ টাকাসহ তালাক না দেওয়ায় স্বামীকে হত্যা করা হয়। পরে সুযোগ বুঝে লাশ গাছে ঝুলিয়ে রাখি।’ কালিগঞ্জে নিহতের স্ত্রী সাবিনা খাতুন বুধবার বিকালে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব কথা বলেন। এদিকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারকৃত সাবিনার ভাই পুলিশ সদস্য আরিফ হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা।

সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের নীলকণ্ঠপুর গ্রামের আবিদ হোসেন মোল্লা ওরফে বাবু (২৭) নামের এক ব্যক্তিকে সোমবার রাতে নির্যাতন চালিয়ে হত্যার পর লাশের গলায় ওড়না পেঁচিয়ে বাড়ির পাশে পুকুর পাড়ে একটি গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়। পরে মঙ্গলবার সকালে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, আট মাস আগে একই গ্রাম নীলকণ্ঠপুরের মুক্তিযোদ্ধা আরশাদ আলী মোড়লের মেয়ে দুই সন্তানের জননী বিধবা সাবিনাকে বিয়ে করে ভাটা শ্রমিক আবিদ হোসেন মোল্লা ওরফে বাবু (২৭)। বিয়ের পর তিনি ভাটার কাজ ছেড়ে দিয়ে সৎ শ্যালক নুরুল মোড়লের সঙ্গে ঘুরে বেড়াতেন। বাড়িতে যাওয়ার জন্য বাবা মা বললেও শ্বশুর বাড়িতে থাকতো বাবু। একপর্যায়ে সাবিনা মাগুরা জেলায় কর্মরত এক বিজিবি কর্মীর সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলে। এ নিয়ে কাবিনের দেড় লাখ টাকা পরিশোধ করে সাবিনাকে তালাক দিতে বলে সাবিনা ও তার পুলিশ সদস্য ভাই আরিফ ও বোন শরিফা। কিন্তু বাবু তার স্ত্রীকে তালাক দিতে রাজী না হওয়ায় পরিবারের সদস্যরা মিলে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।

এরই অংশ হিসেবে গত রবিবার পাঁচ দিনের ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসে পুলিশ সদস্য আরিফ হোসেন। সোমবার (২ নভেম্বর) রাতের কোনো এক সময়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যার পর বাবুর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে বাড়ির পার্শ্ববর্তী পুকুর পাড়ে লেবু গাছের ডালে ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা বলে প্রচার দেওয়া হয়। মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) সকালেই আরিফ বাড়ি থেকে ফিরে গিয়ে তার কর্মস্থলে মাগুরা জেলার শালিখা থানাধীন হাজরাহাটি তদন্ত কেন্দ্রে যোগ দেন।

পুলিশ মঙ্গলবার দুপুরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাবিনাকে আটক করে। এ ঘটনায় নিহতের মা হোসনে আরা খাতুন বাদী হয়ে রাতে নিহতের স্ত্রী সাবিনা ও তার ভাই পুলিশ সদস্য আরিফ হোসেনসহ ১০ জনের নাম উল্লেখপূর্বক অজ্ঞাতনামা আরো পাঁচজনকে আসামি করে কালিগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সাবিনাকে জিজ্ঞাসাবাদে সে নিজে ও আরো চারজন হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।

পুলিশ সাবিনার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বুধবার তার বাড়ির পাশ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত খেঁজুরের কাটা, হাতুড়ি, প্লাস, রক্তমাখা জামা ও লুঙ্গি উদ্ধার করে। একই সাথে মাগুরা জেলার শালিখা থানাধীন হাজরাহাটি তদন্ত কেন্দ্রে কর্মরত সাবিনা খাতুনের ভাই পুলিশ সদস্য আরিফ হোসেনকে বুধবার আটক করে সাতক্ষীরায় আনা হয়।

মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা কালিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক জিয়ারত আলী জানান, গ্রেপ্তারকৃত সাবিনা খাতুন বুধবার সন্ধ্যায় ও তার ভাই মাগুরা জেলার শালিখা থানাধীন হাজরাহাটি তদন্ত কেন্দ্রে কর্মরত পুলিশ সদস্য আরিফ হোসেনকে বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। পুলিশ সদস্য আরিফ হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়েছে। এর আগে বুধবার বিকেলে সাবিনা খাতুন তার স্বামীকে হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কথা উল্লেখ করে সাতক্ষীরার বিচারিক হাকিম ইয়াসমিন নাহারের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেন।

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!