খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ পৌষ, ১৪৩১ | ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ব্রাজিলে দুর্ঘটনায় বাসে আগুন, পুড়ে নিহত ৩৮

কাঁচা বাজার যেন লুটপাটের ময়দান, দেখার কেউ নেই

রামপাল প্রতিনিধি

ভোগ্যপণ্যের বাজার যেন এখন ‘ছাইচাপা আগুন’। ছাইচাপা আগুন যেমন ধিকি ধিকি বাড়তেই থাকে, ঠিক তেমনি বাজারেও সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। নিত্যপণ্যের বাজারের এই ‘আগুন’ কোনোভাবেই নেভানো যাচ্ছে না। উল্টো প্রতিদিনই বাড়ছে বাজারের পণ্যমূল্য বৃদ্ধির উত্তাপ। মাস দেড়েক আগে সরকার যেসব পণ্যের মূল্য বেঁধে দিয়েছিল সেগুলোর দামও এখন দ্বিগুণ বেড়ে গেছে।

বাজারে দেশি পেঁয়াজের কেজি এখন ১৩০-১৪০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি ১০০-১১০ টাকা। আর আলুর কেজি এখন ৭০ টাকায় ঠেকেছে। সবজির বাজারেও ১০০ টাকার নিচে মিলছে না কোনো সবজি।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়ীরা বাজারকে লুটপাটের ময়দান হিসেবে নিয়েছে। যে যার মতো পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে, আর লুটে নিচ্ছে দেশের মানুষের পকেটের টাকা। আর উচ্চ পণ্যমূল্যের চাপে একেবারে চিড়েচ্যাপ্টা দশা ভোক্তার।

এ বিষয়ে প্রেসক্লাব রামপালের সভাপতি এম এ সবুর রানা বলেন, ‘দেশের মানুষ আর কত সহ্য করবে। পণ্যমূল্য বাড়তে বাড়তে মানুষের সহ্য ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। ব্যবসায়ীরা যে হারে পণ্যমূল্য বাড়িয়েই যাচ্ছে, আর দেশের মানুষের পকেট কাটছে তাতে মনে হয়-ভোগ্যপণ্যের বাজার যেন ব্যবসায়ীদের কাছে এখন লুটপাটের ময়দান। যখন যে পণ্যের ব্যবসায়ীর ইচ্ছে হলো সে দাম বাড়াচ্ছে। কারও কাছে কোনো জবাবদিহিতা নেই। মনে হচ্ছে যেন দেশের ভোগ্যপণ্যের বাজার এক অসহায় এতিম। দেখার কেউ নেই-ভোগ্যপণ্যের বাজার কেমন চলতে সেটি খোঁজ নেওয়ারও যেন কেউ নেই। এভাবে তো আর চলতে পারে না। উচ্চ পণ্যমূল্যের কারণে দেশের সাধারণ মানুষ এখন নীরবে ঢুকরে কাঁদছে।’

আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দাম এক মাস ২০ দিন আগে বেঁধে দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে এ সময়ের ব্যবধানে এসব পণ্যের দাম কমেনি বরং বেড়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ তিন পণ্যের দাম বেঁধে দিয়েছিল গত ১৪ সেপ্টেম্বর। মন্ত্রণালয়েরই বাজারদর মনিটরিং প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত দেড় মাসের ব্যবধানে বাজারে আলু, ডিম ও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। সরকার যে সময় দাম বেঁধে দিয়েছিল-তখন ওই তিন পণ্যের যে দাম ছিল, এখন দাম হয়ে গেছে তার চেয়েও দ্বিগুণ।

জানা যায়, সরকার গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেঁধে দিয়েছিল ৬৫-৬৬ টাকা। সে সময় দেশের বাজারে দেশি পেঁয়াজের কেজি ছিল ৮০ টাকা। আর ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি ছিল ৬০ টাকা। অথচ দেড় মাস পর এখন দেশের বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম উঠেছে ১৩০-১৪০০ টাকায় এবং ভারতীয় পেঁয়াজের দাম উঠেছে ১০০-১১০ টাকায়।

বুধবার রামপালের বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে পেঁয়াজের দাম।

এ বিষয়ে ফয়লা বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী শরিফ মোল্লা বলেন, ‘বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কম। স্থানীয় মোকাম পর্যায় থেকে আমরা চাহিদা মাফিক পেঁয়াজ পাচ্ছি না। মূলত সরবরাহ ঘাটতির কারণেই দাম বাড়ছে পেঁয়াজের। এ ছাড়া ভারতেও পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। তার প্রভাবেই এখন বেশি বাড়ছে দাম। সামনের দিনগুলোতে পেঁয়াজের দাম আরও বাড়বে।’

পেঁয়াজের মতোই আলুর দামও বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। গত মাসে যখন সরকার দাম বেঁধে দেয় প্রতি কেজি ৩৫-৩৬ টাকা, তখনও বাজারে আলুর কেজি ছিল ৫০-৫৫ টাকা। এখন আলুর কেজি হয়েছে ৬৫-৭০ টাকা। আলুর দামও এখন প্রতিদিন বাড়ছে বলে জানিয়েছেন আলু ব্যবসায়ীরা।

কাঁচা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে গোল বেগুন ১০০-১১০ টাকা এবং লম্বা বেগুন ৮০-১০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। করলা, কচুমুখী, বরবটি, টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকা। আর ঢেঁড়স, পটোল, ঝিঙা, চিচিঙ্গা ৮০-১০০ টাকা বিক্রি হতে দেখা গেছে। কম দামের মধ্যে মুলার কেজি ৫০-৬০ টাকা আর পেঁপে ৪০-৫০ টাকা।

বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজি প্রতি ১০ টাকা বেড়ে ১৭০-২০০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এ ছাড়া সোনালি মুরগির কেজি ৩৩০-৩৪০ টাকা, লেয়ার মুরগির কেজি ৩০০-৩২০ টাকা হয়েছে। নতুন করে এসব পণ্যের দাম এমন সময় বেড়েছে, যখন বাজারে প্রায় সব ধরনের শাকসবজি ও মাছের দাম আগেই বেড়ে রয়েছে।

এতে বাজার করতে এসে ক্রেতার নাভিশ্বাস উঠছে। নতুন করে বেড়ে যাওয়া পণ্যের দাম নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষদের ওপর আরও চাপ বাড়িয়েছে। ফলে বাজারের তালিকায় কাটছাঁট করতে হচ্ছে তাদের। অধিকাংশ মানুষ অস্বাভাবিক বাজার দরে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

অন্যদিকে প্রতি কেজি চাষের মাছের দাম এখন ২০-৫০ টাকা বেড়েছে। আর দেশি মাছগুলোর দাম যেন আকাশছোঁয়া, বিক্রি হচ্ছে আগের তুলনায় কেজিপ্রতি ১০০-২০০ টাকা বাড়তিতে। কম আয়ের মানুষরা সবচেয়ে বেশি কেনে পাঙাশ, চাষের কই ও তেলাপিয়া জাতীয় মাছ। বাজারে এসব মাছের কেজি এখন ২৪০-৩০০ টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া রুই, কাতলা, কালিবাউশ ও মৃগেল মাছ বিক্রি হচ্ছে আকারভেদে ৪০০-৪৫০ টাকায়। যা কয়েক সপ্তাহ আগে তুলনায় ২০-৫০ টাকা বেশি বলে জানিয়েছেন মাছ বিক্রেতারা।

বাজার ঘুরে আরও দেখা গেছে, সরকারি নির্ধারণকৃত দামের থেকেও কেজি প্রতি ২৬ টাকা বাড়িয়ে সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। সরকার নির্ধারিত বেঁধে দেওয়া দামে ডিমও বিক্রি হচ্ছে না।

বিক্রি হচ্ছে না কেন জানতে চাইলে ডিম বিক্রেতারা বলেন, আমরাই প্রতি পিস ডিম ১২ টাকা ৫০ পয়সায় কিনে আনি। এসব ডিমের কয়েকটি ভেঙে বা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ১৫ টাকার নিচে বিক্রি করা সম্ভব হয় না। ১৫৫ টাকা ডিমের ডজন কিনে কিছু তো লাভ করতেই হবে। আমরা যদি কম দামে কিনতে পারতাম তা হলে কম দামে বিক্রী করতে পারতাম। আমাদের হাতে আসলে কিছুই নেই।

এদিকে চালের দামও বেড়েছে কেজিতে ২-৩ টাকা। বাজারে মোটা চালের কেজি ৫৬-৫৮ টাকা, মিনিকেট চালের কেজি ৭৮-৮০ টাকা এবং নাজিরশাইল চালের কেজি ৮০-৮৫ টাকা। আমাদের হাতে আসলে কিছুই নেই।

এদিকে চালের দামও বেড়েছে কেজিতে ২-৩ টাকা। বাজারে মোটা চালের কেজি ৫৬-৫৮ টাকা, মিনিকেট চালের কেজি ৭৮-৮০ টাকা এবং নাজিরশাইল চালের কেজি ৮০-৮৫ টাকা।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!