সাতক্ষীরার কলারোয়ায় এক কলেজ ছাত্রীকে অপহরণ করে ভারতে পাচারের হুমকির ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় শমন পেয়েও আদালতে হাজির না হওয়ায় ১০ আসামীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সোমবার (১১ মার্চ) বাদি পক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য শুনানি শেষে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট প্রণয় বিশ্বাস এ আদেশ দেন।
একইভাবে ওই কলেজ ছাত্রীকে পিটিয়ে জখম করে পিঠ বাঁচাতে হামলাকারির দায়েরকৃত মিথ্যে মামলায় বাদি হাজির না হওয়ায় সোমবার মামলা খারিজ করে দিয়েছেন সাতক্ষীরার একই আদালতের বিচারক।
সাতক্ষীরা জজ কোর্টের আইনজীবী এড. মোসলেম উদ্দিন জানান, বিরোধপূর্ণ জমিতে নারিকেল পাড়তে বাধা দিলে কলারোয়া উপজেলার গাজনা গ্রামের সহদেব রায় এর মেয়ে কলেজ ছাত্রী লিমা রায়কে গত ৯ জানুয়ারি বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পিটিয়ে জখম করেন কলারোয়া সদরের জুয়েলারী ব্যবসায়ি অমল রায়, তার স্ত্রী তৃপ্তি রায়, ছেলে অরিত্র রায়, গাজনা গ্রামের বিমল রায়, তার স্ত্রী ঝর্ণা রায়, ছেলে জয় রায়, সুধাংশু রায়, তার স্ত্রী চায়না রায়, ছেলে প্রান্ত রায় ও মোহনলাল রায় এর ছেলে দীপঙ্কর রায়। মারাত্মক জখম লিমা রায়কে কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পিঠ বাঁচাতে পরদিন অমল রায় বাদি হয়ে নির্যাতিত লিমা রায় ও তার মা রত্না রায় এর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
মামলার তদন্তভার উপরিদর্শক নুরুল ইসলামের উপর ন্যস্ত হলে তিনি ১৪ জানুয়ারি গাজনা গ্রামে যেয়ে ২৬ জানুয়ারি থানায় উপয়পক্ষকে আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসা করার জন্য জোর তাগিদ দিয়ে যান। ১১ জানুয়ারি তার পরিত্যক্ত ঘরে মাদক রেখে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করানোসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে ১৫ জানুয়ারি বিমল রায় সাতক্ষীরা নির্বাহী ম্যাািজষ্ট্রেট আদালতে লিমা রায়, তার মা রত্না রায় ও সহদেব রায় এর বিরুদ্ধে পিটিশন ১২২/২৪ নং মামলা দায়ের করেন।
এদিকে থানা মামলা না নেওয়ায় লিমা রায় এর মা রত্না রায় আমলী আদালত-৪ এ অমল রায়, তার স্ত্রী তৃপ্তি রায়, ছেলে অরিত্র রায়, বিমল রায়, ঝর্ণা রায়, ছেলে জয় রায়, সুধাংশু রায়সহ নয়জনের বিরুদ্ধে সিআর-৫১/২৪ নং মামলা দায়ের করেন। মামলার খবর পেয়ে বাড়িতে আসার কিছুক্ষণ পর অমল রায়, বিমল রায়, সুধাংশু রায়সহ তাদের পরিবারের সদস্যরা বাড়ির সামনে এসে মামলা তুলে না নিলে লিমাকে তুলে নিয়ে ভারতে পাচারের হুমকি দেন। এ ঘটনায় লিমার মা রত্না রায় গত ১৯ জানুয়ারি নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে পিটিশন ১৫০/২৪ নং মামলা দায়ের করেন। মামলায় অমল রায়, তার স্ত্রী তৃপ্তি রায়, ছেলে অরিত্র রায়, বিমল রায়, সুধাংশু রায়সহ ১০জনকে আসামী শ্রেণীভুক্ত করা হয়। আদালত সকল আসামীদের বিরুদ্ধে সমন জারির নির্দেশ দেন। সোমবার ধার্য দিনে পিটিশন ১২২/২৪ নং মামলার বাদি বিমল রায় হাজির না হলেও আসামী লিমা, তার মা রত্না ও বাবা সহদেব হাজির হয়ে জবাব শুনানি অন্তে মামলা খারিজের আবেদন জানালে বিচারক তা মঞ্জুর করেন।
অপরদিকে ১৫০/২৪ নং মামলার বিবাদী অমল রায়, বিমল রায়সহ ১০জন আসামীর মধ্যে কেউ হাজির না হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানার নোটিশ জারির নির্দেশ দেওয়া হয়।
এ ছাড়া সিআর-৫১/২৪ নং মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা পিবিআই এর পুলিশ পরিদর্শক সঞ্জয় দত্ত জানান, তিনি তদন্ত শুরু করেছেন। হাসপাতালে লিমার মেডিকেল সার্টিফিকেট চাওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের নভেম্বর মাসে বিমল রায় একইভাবে নির্বাাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে লিমা, তার বাবা ও মা এর বিরুদ্ধে মিথ্যা পিটিশন মামলা করেও ধার্য তারিখে আদালতে না আসায় তা খারিজ হয়ে যায়।
খুলনা গেজেট/এনএম