খুলনা, বাংলাদেশ | ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৬শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  ইরানে ভয়াবহ বিস্ফোরণে আহত বেড়ে ৫৬১, জরুরি অবস্থা জারি
  ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দলেই যোগ দিতে হবে, এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই: উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

কলারোয়া মুক্ত দিবস আজ

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

আজ ৬ ডিসেম্বর, রোববার কলারোয়া মুক্ত দিবস। একাত্তরের আগুন ঝরা এই দিনে কলারোয়া এলাকা পাক হানাদার বাহিনী মুক্ত হয়। কলারোয়ার আকাশে ওড়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। মুক্তিকামী মানুষের উল্লাসে মুখরিত হয় পাকবাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞে ক্ষত-বিক্ষত কলারোয়া। সূত্রমতে, মহান মুক্তিযুদ্ধে কলারোয়ার ৩৪৩ জন বীর সন্তান অংশ নেন। এর মধ্যে শহিদ হন ২৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা।

কলারোয়া অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে প্রবাসী সংগ্রাম পরিষদ। কলারোয়া এলাকা ছিল মুক্তিযুদ্ধে ৮নং সেক্টরের অধীন। একাত্তরে কলারোয়া এলাকায় পাক-বাহিনীর আক্রমণে সর্বপ্রথমে শহিদ হন মাহমুদপুর গ্রামের আফছার সরদার। এরপর এপ্রিলে পাকবাহিনী কলারোয়ার পালপাড়ায় হামলা চালিয়ে গুলি করে মর্মান্তিকভাবে হত্যা করে ৯ জন কুম্ভকারকে। পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম যুদ্ধ পরিচালনা করেন কলারোয়ার ২ বীর যোদ্ধা কমান্ডার মোসলেম উদ্দিন ও আব্দুল গফফার। কলারোয়ায় পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি বড় ধরনের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এর মধ্যে ১৮ সেপ্টেম্বরের বালিয়াডাঙ্গা যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য। এই যুদ্ধে ২৯ জন পাকসেনা নিহত হয়। শহিদ হন ১৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা।

এছাড়া ১৭ সেপ্টেম্বর কলারোয়ার কাকডাঙ্গার যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচন্ড আক্রমণের মুখে পাকসেনারা কাকডাঙ্গা ঘাঁটি ছাড়তে বাধ্য হয়। এর আগে ২৭ আগষ্ট সমগ্র চন্দনপুর এলাকা পাকবাহিনী মুক্ত হয়। অক্টোবরের শেষ দিকে মুক্তিযোদ্ধারা কলারোয়ার পাশ্ববর্তী বাগআঁচড়ায় দুঃসাহসিক হামলা চালিয়ে ৭ জন পাক রেঞ্জারকে হত্যা করেন। খোরদো এলাকাও বীরযোদ্ধারা পাক বাহিনীমুক্ত করে ফেলেন। কলারোয়ার বীর যোদ্ধাদের লাগাতার সফল অপারেশনের মুখে কোণঠাসা হয়ে পড়ে পাক বাহিনী। পাক হানাদাররা যখন বুঝতে পারলো যে তাদের পরাজয় নিশ্চিত ও আসন্ন তখন তারা ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পরিকল্পনা করে। এরই অংশ হিসেবে ৫ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে কলারোয়ার বেত্রবতী নদীর লোহার ব্রিজ মাইন বিস্ফোরণে উড়িয়ে দিয়ে পাকসেনারা পালিয়ে যায়। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধারা নৌকাযোগে নদী পার হয়ে এসে কলারোয়া বাজার নিয়ন্ত্রণে আনেন। সময় তখন ভোর ৫ টা ১৫ মিনিট।



এভাবে একেকটি সফল অপারেশনের মধ্য দিয়ে অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর কবল থেকে কলারোয়ার মাটিকে মুক্ত করেছিলেন আজকের এই দিনে। কলারোয়া থানা চত্বরে পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে সবুজের বুকে রক্তসূর্য খচিত স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা ওড়ান মুক্তিকামী বীরযোদ্ধা ও জনতা। শুধু মুক্তিযোদ্ধারা নন কলারোয়ার মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের কথা মানুষের স্মৃতিপটে আজও অমলিন। তাঁরা মেধাও প্রজ্ঞা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখেছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পাশপাশি তাঁদের প্রতিও জাতি জানায়, সশ্রদ্ধ সালাম। তাঁরা হলেন: সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রয়াত মমতাজ আহম্দে, তাঁর ভাই শহিদ এসএম এন্তাজ আলি, স্বর্গীয় শ্যামাপদ শেঠ, ভাষাসৈনিক প্রয়াত শেখ আমানুল্লাহ, বিএম নজরুল ইসলামসহ অনেকেই। মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব, আত্মত্যাগ ও সংগঠকদের সুচিন্তিত দিক নির্দেশনায় অবশেষে কলারোয়ার পবিত্র ভূমি পাক হানাদার বাহিনী মুক্ত হয় ৬ ডিসেম্বর।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা জানান, আজ রবিবার দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কলারোয়া উপজেলা কমান্ড গৃহীত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে: জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পতাকা উত্তোলন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও কলারোয়া মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে স্মৃতিচারণমূলক সভা ও দোয়ানুষ্ঠান।

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!