খুলনা, বাংলাদেশ | ১৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনে হামলায় ৩ পুলিশ বরখাস্ত, গ্রেপ্তার ৭
  ভারতীয় সব বাংলা চ্যানেল সম্প্রচার বন্ধ চেয়ে করা রিটের শুনানি বুধবার

কলারোয়া ও দেবহাটা হানাদার মুক্ত দিবস আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

আজ ৬ ডিসেম্বর, সাতক্ষীরার মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিগাঁথা ঐতিহাসিক কলারোয়া ও দেবহাটা হানাদার মুক্ত দিবস। একাত্তরের আগুনঝরা এই দিনে মুক্তিকামী বাংলার বীর সেনানীদের কাছে পরাজিত হয়ে কলারোয়া ও দেবহাটা ছেড়ে চলে যায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। সাথে সাথে হানাদার মুক্ত হয় সাতক্ষীরার কলারোয়া ও দেবহাটা উপজেলা। বিজয়ের পতাকা হাতে উল্লাসে ফেটে পড়ে মুক্তিকামী সাধারণ মানুষ। কলারোয়া ও দেবহাটার আকাশে ওড়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। মুক্তিকামী মানুষের উল্লাসে মুখরিত হয় পাকবাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞে ক্ষত-বিক্ষত কলারোয়া আর দেবহাটার সর্বস্তরের মানুষ খুঁজে পেয়েছিল দীর্ঘদিনের যুদ্ধ জয়ের আনন্দ।

সূত্রমতে, মহান মুক্তিযুদ্ধে কলারোয়ার ৩৪৩ জন বীরসন্তান অংশ নেন। এর মধ্যে শহিদ হন ২৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। কলারোয়া অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে প্রবাসী সংগ্রাম পরিষদ। কলারোয়া এলাকা ছিল মুক্তিযুদ্ধে ৮নং সেক্টরের অধীন। একাত্তরে কলারোয়া এলাকায় পাক-বাহিনীর আক্রমণে সর্বপ্রথমে শহিদ হন মাহমুদপুর গ্রামের আফছার সরদার। এরপর এপ্রিলে পাকবাহিনী কলারোয়ার পালপাড়ায় হামলা চালিয়ে গুলি করে মর্মান্তিকভাবে হত্যা করে ৯ জন কুম্ভকারকে। পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম যুদ্ধ পরিচালনা করেন কলারোয়ার ২ বীর যোদ্ধা প্রয়াত কমান্ডার মোসলেম উদ্দীন ও কমান্ডার আব্দুল গফফার।

জানা যায়, সাতক্ষীরার ভোমরা সীমান্তে সংঘটিত এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৬ শতাধিক পাকসেনা নিহত হয়। কলারোয়ায় পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি বড় ধরনের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এর মধ্যে ১৮ সেপ্টেম্বরের বালিয়াডাঙ্গা যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য। এই যুদ্ধে ২৯ জন পাকসেনা নিহত হয়। শহিদ হন ১৭জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। এছাড়া ১৭ সেপ্টেম্বর কলারোয়ার কাকডাঙ্গার যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচন্ড আক্রমণের মুখে পাকসেনারা কাকডাঙ্গা ঘাঁটি ছাড়তে বাধ্য হয়। এর আগে ২৭ আগষ্ট সমগ্র চন্দনপুর এলাকা পাকবাহিনী মুক্ত হয়। অক্টোবরের শেষ দিকে মুক্তিযোদ্ধারা কলারোয়ার পাশ্ববর্তী বাগআঁচড়ায় দুঃসাহসিক হামলা চালিয়ে ৭ জন পাক রেঞ্জারকে হত্যা করেন। খোরদো এলাকাও বীরযোদ্ধারা পাক বাহিনীমুক্ত করে ফেলেন।

কলারোয়ার বীরযোদ্ধাদের লাগাতার সফল অপারেশনের মুখে কোণঠাসা হয়ে পড়ে পাক বাহিনী। পাক হানাদাররা যখন বুঝতে পারলো যে তাদের পরাজয় নিশ্চিত ও আসন্ন তখন তারা ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পরিকল্পনা করে। এরই অংশ হিসেবে ৫ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১২ টা ১ মিনিটে কলারোয়ার বেত্রবতী নদীর লোহার ব্রীজ মাইন বিস্ফোরণে উড়িয়ে দিয়ে পাকসেনারা পালিয়ে যায়। বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধারা ভোর সোয়া ৫টার দিকে নৌকাযোগে নদী পার হয়ে এসে কলারোয়া বাজার নিয়ন্ত্রণে আনেন। এভাবে একেকটি সফল অপারেশনের মধ্য দিয়ে অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর কবল থেকে কলারোয়ার মাটিকে মুক্ত করেছিলেন ৬ ডিসেম্বরের এই দিনে।

অপরদিকে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সমগ্র দেবহাটা ছিল ৯নং সেক্টরের অর্ন্তভুক্ত। বাংলাদেশের ১১টি সেক্টরের মধ্যে ৯নং সেক্টরটি ছিল সর্ববৃহৎ। ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাস্টারের উদ্যোগেই ভারতের টাকীতে গড়ে তোলা হয় ৯নং সেক্টর। সেজন্য তাকে ৯নং সেক্টরের প্রতিষ্ঠাতা ও সাব সেক্টর কমান্ডারের খেতাব দেয়া হয়। সমগ্র দেবহাটা থানা ৯নং সেক্টরের অধীনে ছিল। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর জলিল।

শাহজাহান মাস্টারের নেতৃত্বেই এই অঞ্চলের যুবকেরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তিনি দেশ মাতৃকার টানে এলাকার যুবকদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের প্রেরণা যুগিয়েছিলেন। তখন দেবহাটা এলাকার খানজিয়া ক্যাম্প, দেবহাটা ক্যাম্প, টাউনশ্রীপুর ক্যাম্প, সখিপুর ক্যাম্প, পারুলিয়া ক্যাম্প, কুলিয়া বাজার ও পুষ্পকাটি ইটেরভাটাসহ বিভিন্ন এলাকায় পাক সেনারা ঘাঁটি গড়ে তোলে। দেবহাটার টাউনশ্রীপুর ফুটবল মাঠে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাক সেনাদের যুদ্ধ হয়। প্রায় ২ ঘন্টাব্যাপী যুদ্ধে পাকসেনারা পরাস্ত হয়। এই যুদ্ধে বহু পাক সেনা নিহত হয়। এক পর্যায়ে টাউনশ্রীপুরের সেনা ঘাটির পতন হয়। তবে পাক সেনারা দেবহাটা ছেড়ে যাওয়ার সময় শাহজাহান মাস্টারের বাড়ি আগুনে জ্বালিয়ে দেয়। এছাড়া ভাতশালাসহ বিভিন্ন যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাস্টার। ভাতশালা যুদ্ধের শেষের গুলিবিদ্ধ নিহত হয় মুক্তিযোদ্ধা গোলজার।

অক্টোবর মাসে পাকিস্থানী সেনারা খাঁনজিয়া ক্যাম্প ছেড়ে পলায়ণ করে। যাওয়ার সময় ওই এলাকায় বেশ কিছু এ পি মাইন পুতে রেখে যায়। যে মাইন অপসারণ করতে যেয়ে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওহাব শহীদ হন। পরে পারুলিয়া, সখিপুর ও কুলিয়া সহ বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধে পাক সেনারা পরাস্ত হয়। তারা চলে যাওয়ার সময় বহু মানুষের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয় এবং পারুলিয়া ব্রীজ ধ্বংস করে দেয়। এভাবে ৬ ডিসেম্বর দেবহাটা উপজেলা পাক হানাদার মুক্ত হয়।

এদিকে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও এই দিনটি স্মরণে কলারোয়া ও দেবহাটা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে পৃথক কর্মসুচি গ্রহণ করা হয়েছে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!