খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  আইপিএল নিলামে অবিক্রিত মোস্তাফিজুর রহমান, ভিত্তিমূল্য ছিলো ২ কোটি রুপি
  ইসকন নেতা চিন্ময় দাসকে বিমান বন্দরে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি
  কক্সবাজারের টেকনাফ সমুদ্র সৈকতে গোসলে নেমে নিখোঁজ দুই শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার
  সাবেক আইজিপি মামুনের ফের ৩ দিনের রিমান্ড

কলারোয়া হানাদারমুক্ত হয় ৬ ডিসেম্বর

কলারোয়া প্রতিনিধি

৬ডিসেম্বর সাতক্ষীরার কলারোয়ায় পাকিস্তানী হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলার দামাল ছেলেরা সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে হটিয়ে অবরুদ্ধ কলারোয়াকে হানাদারদের কবল থেকে মুক্ত করে স্বাধীন দেশের পতাকা উত্তোলন করে। ঐতিহাসিক ও গৌরব উজ্জ্বল এই দিনটি এবারেও কলারোয়াতে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে।

সূত্র মতে, মহান মুক্তিযুদ্ধে কলারোয়ায় ৩শ’৪৩ জন বীর সন্তান অংশ নেন। শহীদ হন ২৭জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। এর মধ্যে কলারোয়ার বীর সন্তান রয়েছে ৯জন। আর এ পর্যন্ত ৮টি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে। দীর্ঘ ৯ মাসের স্বাধীনতা যুদ্ধে কলারোয়ায় পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয় ৬টি স্থানে। প্রতিটি যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে পাকবাহিনীকে পরাজিত করেন। কলারোয়া অঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধা পরিচালনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে শতাধিক ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত প্রবাসী সংগ্রাম পরিষদ। এই সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে ছিলেন প্রাক্তন এমসিএ মমতাজ আহম্মেদ, ভাষা সৈনিক শেখ আমানুল্লাহ, সাবেক সংসদ বিএম নজরুল ইসলাম, যুদ্ধকালিন কমান্ডার মোসলেম উদ্দীন, শ্যামাপদ শেঠ, ইনতাজ আহম্মেদ, মোছলদ্দীন গাইন ও ডাঃ আহম্মদ আলী। কলারোয়া এলাকাটি ছিলো মুক্তিযুদ্ধের ৮নং সেক্টরের অধীনে।

পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম যুদ্ধ পরিচালনা করেন কলারোয়ার দুই বীরযোদ্ধা মোসলেম উদ্দীন ও আব্দুল গফ্ফার। এই দুই বীরযোদ্ধার নেতৃত্বে পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন কলারোয়ার বীর সন্তান গোলাম মোস্তফা, সৈয়দ আলী গাজী, আবুল হোসেন, আনোয়ার হোসেন ও আঃ রউফসহ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা। সাতক্ষীরার ভোমরা সীমান্তে সংগঠিত রক্তক্ষয়ী ওই যুদ্ধে ৬শতাধিক পাকিস্তানী সেনা নিহত হন। কলারোয়ায় হানাদারদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি বড় ধরণের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধেই ২৯ জন পাকিস্তানী সেনা নিহত হয়। শহীদ হয় ১৭জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। এর আগে ১৭ সেপ্টেম্বর কলারোয়ার সীমান্ত এলাকা কাঁকডাঙ্গা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের মুখে হানাদাররা সেখানকার ঘাটি ছাড়তে বাধ্য হয়।

অক্টোবরের শেষদিকে মুক্তিযোদ্ধারা যশোরের বাগআঁচড়ায় দুঃসাহসিক হামলা চালিয়ে ৭ পাক রেঞ্জারকে হত্যা করেন। কলারোয়ার খোরদো এলাকাও একই সাথে মুক্ত করেন মুক্তিযোদ্ধারা। বীর যোদ্ধাদের ধারাবাহিক সফল অপারেশনের মুখে কোনঠাসা হয়ে পড়ে পাক বাহিনী। কিন্তু পাক বাহিনী যখন বুঝতে পারে পরাজয় নিশ্চিত, তখন তারা ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর চেষ্টা করে। এরই অংশ হিসেবে ৫ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে কলারোয়ার বেত্রবতী নদীর লোহার ব্রীজ মাইন দিয়ে ধ্বংস করে তারা পালিয়ে যায়। এভাবে দীর্ঘ ৯ মাস বিভিন্ন স্থানে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের পর ৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানী সেনারা কলারোয়া ছাড়তে বাধ্য হয়। ৬ডিসেম্বর এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা কলারোয়াকে মুক্ত করেন। সাথে সাথে কলারোয়া থানা চত্বরে স্বাধীনদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। কলারোয়ার স্বাধীনচেতা মুক্তমনের মানুষ উড়ন্ত পাখির মত উড়তে থাকে।

ঐতিহাসিক ও গৌরবোজ্জ্বল দিনটি এবারও যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করবেন কলারোয়া উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল এবং কলারোয়ার বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান।

খুলনা গেজেট/ এসজেড




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!