কলারোয়ায় অন্যের বাড়ির আঙিনায় অস্ত্র রেখে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারীদের বাদ দিয়ে সোর্সের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার ঘটনার তীব্র বিরোধিতা করেছেন রাষ্ট্রপক্ষ। বিষয়টি জানার পর মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর মামলাটি পুনঃতদন্তের জন্য আদালতের নজরে নিয়ে আসেন। বিচারক শুনানী শেষে আদেশের অপেক্ষায় রেখেছেন।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ২৮ মে রাতে জেলার কলারোয়া উপজেলার একড়া গ্রামের বাছের সানার ছেলে দিনমজুর মুকুন্দ সানা সোর্স সেজে মোবাইল ফোনে র্যাব-৬ এর সাতক্ষীরা কোম্পানির দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে জানান, একড়া এলাকায় মাদক বিক্রি হচ্ছে। খবর পেয়ে ঝাউডাঙ্গা বাজারে টহলরত র্যাবের অভিযানিক দলটি তাৎক্ষণিক একড়া গ্রামের ওই স্থানে পৌঁছায়। সোর্স মুকুন্দ সানার সহায়তায় ওই গ্রামের নিমাই সানার বাড়ির পেছনে জনৈক শহিদুলের বসত বাড়ির সামনের ধানের খড়ের গাদার ভিতর থেকে একটি ওয়ান শুটার গান উদ্ধার করে র্যাব। কিন্তু ঘটনার বিষয়ে র্যাবের সন্দেহ হলে সোর্স পরিচয়দানকারি মুকুন্দ সানাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে আসল ঘটনা প্রকাশ করে র্যাবকে ।
ওইদিন অস্ত্রসহ মুকুন্দ সানাকে কলারোয়ায় থানায় সোপর্দ করে র্যাব। র্যাবের পরিদর্শক মেহেদী হাসান বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। কলারোয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হাফিজুল ইসলাম মামলাটির তদন্তের দায়িত্বভার গ্রহণ পূর্বক তদন্ত শুরু করেন। পুলিশও আটক মুকুন্দ সানাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে অন্যদের ফাঁসানোর পরিকল্পনার বিষয়টি জানতে পারে। এঘটনার পরদিন কলারোয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ নাসির উদ্দীন মৃধা আটক সোর্স মুকুন্দ সানাকে সাতক্ষীরা আদালতে নিয়ে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সালাহউদ্দীন এর খাস কামরায় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করান। সেখানে ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে অবৈধ অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া মুকুন্দ সানা তাকে ব্যবহারকারীদের সর্ম্পকে বিস্তারিত তথ্য জানায়।
এদিকে, গ্রেপ্তার মুকুন্দ সানার ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ওই এলাকার রুহুল আমীন, আব্দুর রাজ্জাক, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী তৌহিদ ও প্রতারণার দায়ে চাকুরিচ্যুত সেনা সদস্য একাধিক মামলার আসামি মোশারফসহ ৪জনের নাম উঠে আসে। কিন্তু মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখিত চারজনকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র সোর্স মুকুন্দ সানাকে অভিযুক্ত করে ১৮ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
দাখিলকৃত অভিযোগপত্রে মুকুন্দ সানাকে মাদক ব্যবসায়ী, অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারকারী, এলাকার ত্রাস সৃষ্টিকারী ও বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্স পরিচয়দানকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। একই সাথে ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে পরিকল্পনাকারী, অর্থ যোগানদাতা ও বিভিন্নভাবে সহয়তাকারী রুহুল আমীন, রাজ্জাক, তৌহিদ ও মোশারফের নাম আসলেও নানা কৌশলে তাদেরকে বাঁচাতে মুকুন্দ সানা আদালতে ১৬৪ ধারায় মিথ্যে জবানবন্দি দিয়েছেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।
অপরদিকে তদন্তকারী কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে যেসব ব্যক্তিকে সাক্ষী শ্রেণিভুক্ত করেছেন তাদের অধিকাংশই রাজ্জাক ও রুহুল আমীনের আত্মীয় স্বজন বলে অভিযোগ রয়েছে। আদালতে এই অভিযোগপত্র দাখিলের পর থেকে এলাকায় বিষয়টি নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
কলারোয়ার একড়া গ্রামের শহিদুল ইসলাম জানান, জমা জমি নিয়ে আপন ভাই ও চাচাতো ভাইদের সাথে বিরোধ থাকার জেরে তাকে এমন বিপদে ফেলার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। কিন্তু আদালতে শুধুমাত্র মুকুন্দ সানার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। পরিকল্পনাকারী ও অর্থযোগানদাতাদের বাদ দেওয়া হয়েছে।
কলারোয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাসির উদ্দীন মৃধা জানান, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারার প্রদত্ত জবানবন্দি সর্বক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য হবে না। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ গ্রহণযোগ্য হবে। কারণ ঘটনার সত্যতার উপর অভিযোগপত্র অনেকটাই নির্ভর করে। এছাড়াও অনেক সময় ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে পূর্ব শত্রুদের নাম বললেও তাদের বাবার নাম ও গ্রাম কোন কিছুই না থাকায় খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে সার্বিক বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ভাল বলতে পারবেন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এবিষয়ে কোন সমস্যা থাকলে তার দায় দায়িত্ব তাকেই নিতে হবে বলে জানান তিনি।
এবিষয়ে সাতক্ষীরা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আব্দুল লতিফ জানান, এই অস্ত্র মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা হওয়ার পর ৪ অক্টোবর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আমল গ্রহণের দিন ধার্য ছিল। বিষয়টি নজরে আসার তঞ্চকিপূর্ণ মনে হয়েছে। জুডিশিয়াল তদন্তের উপর পুলিশের না বোধক মন্তব্য এবং ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে জড়িত ৪জনের নাম আসলেও তাদের বাদ দিয়ে এবং পাশ কাটিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের বিষয়টি বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ এর নজরে এনেছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটির শুনানীও হয়েছে। বিচারক মামলাটি আদেশের অপেক্ষায় রেখেছেন।
খুলনা গেজেট/এসজেড