সাতক্ষীরার কলারোয়ায় সংঘটিত একই পরিবারের চাঞ্চল্যকর চার খুন মামলার একমাত্র আসামী নিহত শাহিনুরের ভাই রায়হানুলকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট দিয়েছে সিআইডি পুলিশ। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সিআইডি পুলিশের ইন্সপেক্টর সফিকুল ইসলাম রবিবার (২২ নভেম্বর) কলারোয়ার আমলি আদালতে এই চার্জশীট দাখিল করেন।
প্রসঙ্গতঃ গত ১৪ অক্টোবর রাতে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের খলসী গ্রামের শাহীনুর রহমান, তার স্ত্রী সাবিনা খাতুন, তাদের দুই শিশু সন্তান সিয়াম হোসেন মাহি (৯) ও তাসনিম সুলতানা (৬)সহ চারজনকে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যা করা হয়। ঘাতক এ সময় শাহিনুরের দুগ্ধপোষ্য শিশু মেয়ে মারিয়া সুলতানাকে (চার মাস) অক্ষত অবস্থায় রেখে যায়। ১৫ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) রাতে নিহত শাহিনুরের শাশুড়ি ময়না খাতুন বাদি হয়ে কলারোয়া থানায় অজ্ঞাতদের আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এদিকে একই পরিবারের চারজনকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যার পর কলারোয়া থানায় মামলা দায়ের হওয়ার পর রাতেই মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয় সাতক্ষীরা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি)। মামলার এজাহারে কোনো আসামির নাম না থাকলেও শুক্রবার নিহত শাহিনুরের ছোট ভাই রায়হানুল ইসলামকে এ মামলায় গ্রেপ্তার করে তদন্ত শুরু করে সিআইডি পুলিশ। তদন্তকালে পুলিশ এই হত্যাযজ্ঞের সাথে রায়হানুলের একক সম্পৃক্ততা খুঁজে পায়। পরে রায়হানুল হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জাবনবন্দি প্রদান করে।
আদালতে তার জবানবন্দিতে রায়হানুল স্বীকার করে যে, সে একাই তাদেরকে খুন করেছে। এর কারণ হিসাবে সে উলেখ করে যে, বেকার হওয়ায় তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে বাপের বাড়ি চলে যায়। এরপর থেকে সে ভাই ও ভাবীর পরিবারের সঙ্গে খাওয়া দাওয়া করতো। বেকার হওয়ার কারনে খাওয়া দাওয়া নিয়ে ভাই ও ভাবী তাকে প্রায়ই বকাঝকা করতো।
ঘটনার দিন সন্ধ্যায় খাওয়ার খোটা দিয়ে তাকে ব্যাপক গালমন্দ করে ভাবী সাবিনা খাতুন। তখনই সে ভাবীকে হত্যার পরিকল্পনা আটে। রাতে টিভি দেখার সময় বিদ্যুৎ বিল বেশি হবে বলে তাকে বকা দেয় বড় ভাই শাহিনুর। এসময় সে ক্ষুব্ধ হয়ে তাকেও হত্যার পরিকল্পনা করে। পরে সে কোমল পানীয়ের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে ভাই ও ভাবীকে খাওয়ায়। রাতে দরজা না লাগিয়ে বাইরের কলাপসিবল গেট লাগিয়ে শাহিনুরসহ পরিবারের সবাই ঘুমাতে যায়। রাতের শেষ ভাগে সে গাছ বেয়ে চিলে কোটা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে প্রথমে ঘুমন্ত ভাই ও ভাবীকে চাপাতি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে। ছেলে সিয়াম ও মেয়ে তাসনিম জেগে গেলে তাদেরকেও হত্যা করে রায়হানুল। পরে সে চাপাতি পুকুরে ফেলে গোসল করে ঘুমাতে যায়। পরে সে সিআইডি পুলিশসহ অন্যদের উপস্থিতিতে চাপাতি পানি থেকে তুলে দেয়। রায়হানুল বর্তমানে সাতক্ষীরা কারাগারে আটক রয়েছে ।
খুলনা গেজেট /এমএম/কেএম