খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২১ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে একদিনের ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ২১৪
আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে ‘পদ্মা সেতু’

কলকাতা থেকে ঢাকা, কমছে সময় ও দূরত্ব

গেজেট ডেস্ক

কলকাতা থেকে ঢাকার দূরত্ব দেড়শো কিলোমিটার কমছে! আগে ওপার বাংলার রাজধানী থেকে এপার বাংলার রাজধানীতে পৌঁছতে ৪০০ কিলোমিটার রাস্তা পেরোতে হত। জুন মাসের শেষের দিকে ২৫০ কিলোমিটার গেলেই চলবে।

নাহ্, ঢাকা উড়ে কলকাতার কাছে আসছে না! কলকাতার ভৌগোলিক অবস্থানও বদলাচ্ছে না। বদলাচ্ছে যোগাযোগের সেতু। পদ্মা নদীর উপর যে সেতু গড়ার স্বপ্ন দির্ঘদিন ধরে দেখে আসছে বাংলাদেশ।

পদ্মা নদীর সেই সেতু, যার নাম ‘পদ্মা ব্রিজ’ বা বাংলায় পদ্মা সেতু আগামী জুনেই খোলার কথা সর্বসাধারণের জন্য। সেতুটি পুরোদমে চালু হলে রেলপথে কলকাতা থেকে ঢাকা যেতে সময় লাগবে বড়জোর ৬ কিংবা সাড়ে ৬ ঘণ্টা।

এখন কলকাতা-ঢাকা মৈত্রী এক্সপ্রেস কলকাতা স্টেশন থেকে নদিয়া পেরিয়ে যায় গেদে। গেদে থেকে বাংলাদেশের সীমান্ত স্টেশন দর্শনা পার করে ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে পৌঁছয় ১০ ঘণ্টায়। ৪০০ কিলোমিটারের লম্বা রাস্তা।

পদ্মা সেতুর রেললাইন ধরে ঢাকা পৌঁছতে হলে কলকাতা থেকে বনগাঁ জংশন হয়ে হরিদাসপুর সীমান্ত দিয়ে বেনাপোল, যশোর, নড়াইল, ফরিদপুরের ভাঙ্গা হয়ে শুধু ২৫১ কিলোমিটার পথ যেতে হবে।

তা বলে যদি মনে করেন, কলকাতাকে ঢাকার কাছাকাছি আনতেই নদীর উপর সার সার পিলার গেঁথে প্রায় ১০ কিলেমিটার দীর্ঘ সেতু বানাচ্ছে বাংলাদেশ, তবে মস্ত ভুল হবে।

প্রায় ১০ হাজার কোটি বাংলাদেশি মুদ্রার ব্যয়বহর সামলে তৈরি করা এই পদ্মা সেতু বাংলাদেশের জাতীয় উৎপাদন (জিডিপি)কে এক ধাক্কায় ১.২ শতাংশ বাড়িয়ে দিতে পারবে বলে অর্থনীতি বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

তবে শুধু তা-ই নয়, পদ্মা সেতুর নকশায় বেশ কিছু বিরল বিশেষত্ব রয়েছে। যা গোটা দুনিয়ার কাছেও বাংলাদেশকে শ্রেষ্ঠত্বের খ্যাতি এনে দিয়েছে।

এটি আসলে দোতলা সেতু। এর একতলায় অর্থাৎ নদীর কাছাকাছি চলবে ট্রেন। সামান্য উপরে চার লেনের চওড়া রাস্তায় চলবে সব রকম গাড়ি।

নদীর কাছাকাছি হলেও রেল ব্রিজ থেকে জলের দূরত্ব থাকবে অন্তত ১৮ মিটারের। ফলে জলস্তর বাড়লেও এই ব্রিজের তলা দিয়ে পাঁচতলা সমান জাহাজের যাতায়াতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।

পদ্মা সেতুকে জলের মধ্যে ধরে রাখবে ৪০টি পিলার বা স্তম্ভ। প্রত্যেকটিই তৈরি হয়েছে মজবুত পাইল ইস্পাত দিয়ে। তবে এর পাশাপাশি এই পিলারের আর একটি বিশেষত্ব রয়েছে। জলের নীচে ১২২ মিটার পর্যন্ত গভীরে গিয়েছে এই পিলারের ভিত। পৃথিবীর আর কোনও দেশে আর কোনও সেতুর স্তম্ভ এত গভীরে নেই।

নিরাপত্তার আর একটি ব্যবস্থা পদ্মা সেতুর মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছে। পদ্মা সেতুর ভূমিকম্প প্রতিরোধ ব্যবস্থা বা ‘ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিং’ পৃথিবীর অন্য সব সেতুর চেয়ে অনেক বেশি। প্রায় ১০ হাজার টন। এই ক্ষমতায় এই সেতু রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পেও অনায়াসে টিকে যাবে।

২০১০ সাল থেকে সেতুটির পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ সরকার। প্রথমে এই সেতুর জন্য বিশ্ব ব্যাঙ্কের অর্থ সাহায্য করার কথা ছিল বাংলাদেশকে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বিশ্ব ব্যাঙ্ক বেঁকে বসে।

পদ্মা সেতু নিয়ে বাংলাদেশে বড় দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। নাম জড়ায় বহু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের। দুর্নীতির কারণ দেখিয়েই বিশ্ব ব্যাঙ্ক জানিয়ে দেয় তারা এই প্রকল্প রূপায়ণের কাজ থেকে সরে আসতে চায়। মাথায় হাত পড়ে বাংলাদেশের।

শেষে বাংলাদেশ সরকারই দায়িত্ব নিয়ে আসরে নামে। সেতু তৈরির টেন্ডার ডাকা হয়। আগ্রহ দেখায় একাধিক চিনা সংস্থা। তাদের মধ্যেই একটিকে পছন্দ করে বাংলাদেশ। গত প্রায় আট বছর ধরে তারাই তিলে তিলে তৈরি করেছে পদ্মা সেতুকে, যা আগামী জুনে সম্পূর্ণ হওয়ার কথা।

তবে বাংলাদেশ সরকার জানিয়েছে, জুনে পদ্মা সেতুর সড়ক পথ খুলে দিলেও রেলব্রিজটি শেষ হতে আরও ক’দিন সময় লাগবে।

সেতুটির সাজসজ্জার কাজ এর মধ্যেই প্রায় শেষের মুখে। সেতুতে সাধারণ আলোর ব্যবস্থা ছাড়াও থাকছে ‘আর্কিটেকচারাল লাইটিং’। সেতুর সৌন্দর্যায়নের জন্য তৈরি করা হয়েছে একটি সংগ্রহশালাও। তাতে পদ্মা সেতু তৈরির বিভিন্ন উপকরণ প্রদর্শন করা হবে। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা।

খুলনা গেজেট/ টি আই




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!