খুলনা, বাংলাদেশ | ৩০ কার্তিক, ১৪৩১ | ১৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  রাজশাহীতে বাসচাপায় দুই মোটরসাইকেল আরোহীর নিহত
  ফ্যাসিবাদের শেকড় অনেক দূর ছড়িয়ে গেছে : আইন উপদেষ্টা

কলকাতায় রেল ভবনে আগুন, নিহত অন্তত ৯

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

স্ট্র্যান্ড রোডে পূর্ব রেলের নিউ কয়লাঘাট বিল্ডিংয়ে সোমবার সন্ধ্যার বিধ্বংসী আগুনে মৃত্যু হল ন’জনের। কলকাতা পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্র এ কথা জানিয়েছেন। মৃতদের মধ্যে রেলের ডেপুটি চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার পার্থসারথি মণ্ডল, দমকলের চার কর্মী, পুলিশের এক অফিসার এবং আরপিএফ-এর এক জন রয়েছেন। সকলকে রাত পর্যন্ত শনাক্ত করা যায়নি।

রাত ১টা নাগাদ এসএসকেএম হাসপাতালে ন’টি দেহের সব ক’টি এসে পৌঁছয়। হাসপাতালে মৃতদের কয়েক জনের পরিবারের লোকজন এসেও পৌঁছন। রেলের ডেপুটি সিসিএম পার্থসারথি মণ্ডলের দেহ শনাক্ত করেন তাঁর মেয়ে ও জামাই। পার্থবাবুর গাড়ির চালক সোমনাথ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘স্যর প্রতিদিনই সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা নাগাদ নীচে নেমে আসতেন। আজ আগুন লাগার কিছু ক্ষণ পর থেকেই স্যরকে ফোন করতে শুরু করি। কিন্তু ফোনে পাইনি।’’ পুলিশ আধিকারিক অমিত ভাওয়ালের দেহও রাতেই শনাক্ত হয়।

রাতে ঘটনাস্থলে পৌঁছে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘রেলের অনেক পুরনো ভবন। ভয়াবহ দুর্ঘটনা। আগুন নেভাতে আসা সাত জনের দেহ (তখনও অবধি) পাওয়া গিয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এখনও দু’জনের খোঁজ চলছে বলে পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন। তাঁরা (মৃতরা) লিফটে করে উঠতে গিয়েছিলেন। সেখানেই আগুন বিদ্যুতের ঝলকের মতো পুড়িয়ে দিয়েছে। খুবই দুঃখজনক। মৃতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপুরণ ছাড়াও পরিবারের এক জনকে সরকারি চাকরি দেওয়া হবে। সকলেই খুব লড়াই করে আগুন নিয়ন্ত্রণ করেছেন।’’

দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু জানিয়েছেন, তিনি রাতে দমকল ও পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে ১৩ তলায় উঠে নিজে মৃতদেহ দেখে এসেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘লিফটে উঠে ১৩ তলায় পৌঁছে লিফটের দরজা খোলার পরে আগুনে ঝলসে প্রায় পুড়ে যান তাঁরা। আমরা উপরে উঠে দেখি, লিফটের মধ্যেই পাঁচ জনের দেহ পড়ে রয়েছে। বাইরে পড়েছিল আরও দু’জনের দেহ। পোশাক দেখে বোঝা গিয়েছে, তাঁদের মধ্যে চার জন দমকলকর্মী। এ ছাড়াও এক জন আরপিএফ এবং একজন হেয়ার স্ট্রিট থানার এএসআই। একজন ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা যায়নি।’’ রেলের দুই কর্মী আহত হয়ে শিয়ালদহে বি আর সিংহ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বদ্ধ কোনও জায়গায় আগুন লাগলে সেখানে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গিয়ে বিষাক্ত কার্বন-মনোক্সাইড এর মাত্রা বেড়ে যায়। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, ওই সাত জন দমবন্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন। প্রশ্ন উঠেছে, যে বিল্ডিং-এ আগুন লাগে, সেই বিল্ডিং-এ আগুন লাগার পরেও কী ভাবে লিফট চালু থাকে? লিফট চালু থাকার অর্থ, সেখানে বৈদ্যুতিক সংযোগও ছিল। কিন্তু আগুন লাগার পরেই সংশ্লিষ্ট বিল্ডিং-এর বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার কথা। নয়তো, আগুন বিদ্যুতের লাইনে ছড়িয়ে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।

ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন, ‘‘এটা রেলের জায়গা। কিন্তু, তাঁদের কেউ আসেননি। সুজিত আমাকে জানিয়েছে, বিল্ডিং-এর নকশা চাওয়া হয়েছিল। সেটা পেলে আগুন নিয়ন্ত্রণে সুবিধা হতো। কিন্তু, সে ক্ষেত্রে সহযোগিতা মেলেনি। দুর্ঘটনা নিয়ে আমি কোনও রাজনীতি করতে চাই না।’’ দমকলমন্ত্রীও এ দিন জানিয়েছেন, কেন লিফট ব্যবহার করা হয়েছিল তা তদন্ত করে দেখা হবে।

পূর্ব রেলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে পুরো বিষয়টি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত করা হবে। এই অগ্নিকাণ্ডের পরে এ দিন সন্ধ্যার পরে প্রধানত পূর্ব রেলের সমস্ত ট্রেনের টিকিট বুকিং বন্ধ হয়ে যায়। প্রাথমিক ভাবে রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৩ তলায় এসি ফেটে আগুন লাগে। পাশের এলআইসি বিল্ডিং-এর ক্যান্টিন কর্মীরা প্রথম আগুন দেখতে পেয়ে চিৎকার করেন। তখন প্রায় ৫০০ জন রেলের অফিসে ছিলেন বলে রেল সূত্রে জানা গিয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে আগুন লাগে। তার চার ঘণ্টা বাদে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু, ততক্ষণে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গিয়েছে। সন্ধ্যা থেকেই ভিতরে অন্ধকারে বেশ কয়েক জন আটকে রয়েছেন বলে খবর ছড়ায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানান, কী ভাবে তাঁদের উদ্ধার করা সম্ভব, স্পষ্ট নয়। বার বার করে অফিসারেরা উপরে ওঠার চেষ্টা করেন। কিন্তু, রাত পর্যন্ত উপরে ওঠা যায়নি। সোমবার রাত পর্যন্ত দমকলের দু’টি যন্ত্রচালিত মই কাজে লাগিয়েও আগুন
নিয়ন্ত্রণে আসেনি।

প্রথমে বাড়ির সামনের অংশের কয়েকটি জানলায় দাউ দাউ আগুন দেখা গেলেও একটু বাদে বাড়ির চার ধারের জানলাগুলির দিকেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নেভাতে গিয়ে দমকল সদর শাখায় ‘লিডার’ পদের কর্মী মনোরঞ্জন মুদী আহত হন। অ্যাম্বুলেন্সে ওঠার সময়ে তাঁকে আফশোস করতে শোনা যায়, ‘‘দু’জন লোক ভিতরে আটকে রয়েছে, নিজে দেখেছি। ওঁরা নামতে পারছিলেন না।

খুলনা গেজেট/কেএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!