যথাযোগ্য মর্যাদায় বুধবার কলকাতায় বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবসের ৫০ তম দিবস পালিত হল। এদিন সরকারি-বেসরকারী ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে দিনটি পালন করা হয়। গান – কবিতা – ভাষণ- সঙ্গীত- বসে আঁকো প্রতিযোগিতার মাধ্যমে মহান বিজয় দিবসকে স্মরণ করা হয়। তবে কলকাতায় সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান হয় কলকাতার বাংলাদেশ উপহাইকমিশন ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চল শাখা ফোর্ট উইলিয়ামের উদ্যোগে।
এদিন সকালেই কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন উপহাইকমিশনার তৌফিক হাসান । তার সঙ্গে ছিলেন উপহাইকমিশনের অফিসাররা । বিকেলে মহান বিজয় দিবসের মূল অনুষ্ঠানটি হয়। এখানে ঐতিহাসিক মুক্তিযুদ্ধ ও মহান বিজয় দিবস নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন কলকাতার উপহাইকমিশনের উপহাইকমিশনার তৌফিক হাসান ও কংগ্রেস নেতা দেবপ্রসাদ রায় ।
বক্তারা বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভারতের অবদান যেমন ব্যাখ্যা করেন, তেমনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান সম্পর্কে কথা বলেন। এদিন বাংলাদেশ উপহাইকমিশনের বঙ্গবন্ধু মঞ্চে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শোনানো হয়। দুই বাংলার শিল্পী-আবৃত্তিকার-কবিরা এদিন অনুষ্ঠান আকর্ষণীয় করে তোলে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতায় মিত্রশক্তি হিসেবে এগিয়ে এসেছিল ভারত। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নির্দেশে ভারতীয় সেনাবাহিনী অংশ নিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে। টানা নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে বলিদান হয়েছে অনেক প্রাণ। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে শহীদ হয়েছিলেন ভারতের বীরসেনারাও। গঠিত হয় বাংলাদেশ। বিশ্বের কাছে পরিচিতি পায় স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন ৩৯০০ ভারতীয় সেনা এবং আহত হন ১০ হাজার জন। ফলে এ দিনটি বাংলাদেশের সঙ্গে যথাযোগ্য মর্যাদায় সঙ্গে বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) স্মরণ করলেন ভারতীয় সেনাবাহিনী।
ভারতের পরিপ্রেক্ষিতে দিবসটিকে বিশেষভাবে স্মরণ করে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় শাখা তথা কলকাতা ফোর্ট উইলিয়াম। কারণ এখান থেকে ঢাকার দিকে এগিয়েছিল সেনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধের রসদ। এদিন সকালে ফোর্ট উইলিয়ামে ইস্টগেটে অবস্থিত ‘বিজয় সামারোখ’ শহীদ বেদিতে ফুল দেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর তিন বিভাগ, মুক্তিযোদ্ধা এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। দিবসটি উপলক্ষে ভারতীয় সেনাবাহিনী অভ্যর্থনায় সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) কলকাতায় এসেছেন ৫৯ জন বাংলাদেশি, যার নেতৃত্বে আছেন সংসদ সদস্য মহম্মদ আলি আশরাফ। কলকাতায় এসেছেন ১৩ জন মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারসহ ৫৯ জনের টিম।
ওই দিন সেনাবাহিনীর তরফে অতিথি অভ্যর্থনায় সোমবার ‘স্বাগত বিজয় দিবস’ নামে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজনও করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানটি হয়েছিল ফোর্ট উইলিয়ামের গ্র্যান্ড ডালহৌসি ব্যারেকের চত্বরে। ওই অতিথিদের স্বাগত জানান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় শাখার লেফটেন্যান্ট জেনারেল অনিল চৌহান ও পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ে। ভারত-বাংলাদেশের সম্প্রীতিসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয় সেনাবাহিনীর তরফে। তবে মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) বিজয় দিবসে আলি আশরাফ শহীদ বেদিতে ফুল দেওয়ার পর বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনী ভারতীয় নাগরিকদের অবদান ভোলার নয়। ভারতে এক কোটি শরণার্থী রাষ্ট্রের পাশাপাশি নয় মাসের যুদ্ধে সেনাবাহিনীর অবদান আমরা মনে রেখেছি। ভারত সবসময় আমাদের মিত্ররাষ্ট্র। ’
তার আগে শহীদ বেদিতে মালা দেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল সাইনুল হক। সবশেষে শহীদ বেদিতে মালা দেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় শাখার লেফটেন্যান্ট জেনারেল বিজয়ন অনিল চৌহান বলেন, ‘একাত্তরের এ দিনে বিজয় হাসিল করে বাংলাদেশ তৈরি হয়। ভারতীয় সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় মুক্তিযুদ্ধের এ দিনে ৯৩ হাজার পাকিস্তান সেনা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। ’ চৌহান জানান, ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আগামী বছর বিজয় দিবস ও মুজিববর্ষ উদযাপন করা হবে।
খুলনা গেজেট/এনএম