ভয়ঙ্কর ঘটনা। যোগী রাজ্যে ঘটলে এতক্ষণ নিন্দার ঝড় বয়ে যেত! মারধরের পরে বাড়ির তিন তলার ছাদ থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রনেতাকে খুনের ঘটনা ঘটলো মমতা ব্যানার্জির এই বাংলায়।
রাজ্য সরকার পরিচালিত নিউটাউনের আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিভিন্ন কাজে দীর্ঘদিন ধরেই ছাত্ররা ক্ষুব্ধ। ছাত্রদের স্বার্থে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন এই কলেজের সদ্য প্রাক্তন ছাত্র হাওড়া জেলার আমতার যুবক আনিস খান। এই কারণে আনিস অনেক দিন ধরেই শাসকদলের বিষ নজরে। তাঁকে মারার হুমকিও দেওয়া হচ্ছিল। ফলে বেশ কয়েক মাস তিনি বাড়ি ছাড়া ছিলেন। শুক্রবারই তিনি বাড়ি ফেরেন। এরপরেই তাঁর উপরে হামলা হয়। জনপ্রিয় ছাত্রনেতা আনিস ভাঙ্গরের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকীর দল আইএসএফ- এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
বামফ্রন্টের মন্ত্রী আব্দুস সাত্তারের সময় নিউটাউনের বিরাট এলাকা নিয়ে গড়ে ওঠে মুসলিমদের শিক্ষার জন্য এই অগ্রণী বিশ্ববিদ্যালয়টি। মমতা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেও উন্নয়ন হয়েছে। নতুন বাড়িও হয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের খেলার মাঠের জন্য যে জমি নির্দিষ্ট করা ছিল, তা রাজ্য সরকার স্বাস্থ্য দফতরকে দিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। আনিস এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। ছাত্রদের এককাট্টা করেন। আন্দোলন শুরু হয়। এছাড়া ছাত্র বৃত্তি বৃদ্ধি, ছাত্র – ছাত্রীদের জন্য হোস্টেল ও অন্যান্য দাবিতেও আনিস আন্দোলনের প্রথম সারিতে ছিলেন। এমনকি অনশনও করেন। এনআরসি-এর বিরুদ্ধে যখন দেশ এবং বাংলা জুড়ে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন হচ্ছিল, আনিস খান সেই আন্দোলনেরও প্রথম সারিতে ছিলেন। কিন্তু তিনি কোনও দিনই তৃণমূল করেননি!
২০২১ এর ভোটে বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোটের একমাত্র জয়ী প্রার্থী ভাঙ্গরের নওশাদ সিদ্দিকী। জয়ের পরে বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সমর্থকদের উপরে হামলা হয়। বিশেষ করে ভাঙ্গরে। বহু সমর্থক ঘরছাড়া হন। আনিসও ঘরছাড়া ছিলেন। শুক্রবার তিনি বাড়ি ফিরেছেন খবর পেয়ে চারজন যুবক পুলিশের পোশাক পরে তাঁর বাড়ি আসে। তারা আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে আনিসের বাবাকে নিচে আটকে রেখে বাড়ির উপরে উঠে যায়। সেখানেই আনিস ছিলেন। মারধরের পরে তিন তলার ছাদ থেকে তাঁকে ছুঁড়ে ফেলে দিলে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয় বলে পরিবারের অভিযোগ।
পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে থানা থেকে কোনও পুলিশ আনিসের বাড়ি যায়নি। তাহলে কে বা কারা গিয়েছিল? সন্দেহের তীর তৃণমূলের দিকেই। কারণ, বার বার তৃণমূলের একাংশ তাঁকে প্রাণে মারার হুমকি দিচ্ছিল। আশা করা যায়, সঠিক তদন্ত হলেই সত্যি প্রকাশিত হবে। যদি মমতা চান তবেই আনিসের হত্যাকারীরা শাস্তি পাবে। না হলে পাবে না।
মমতা যদি বিরোধী নেত্রী হতেন রাজ্যে আজ আগুণ জ্বলে যেত। হয়তো তিনি বনধ ডাকতেন। বিরোধী সিপিআইএম বা কংগ্রেসের সেই ক্ষমতা নেই। প্রধান বিরোধী দল বিজেপি এমনিতেই মুসলিম বিরোধী। এনআরসি বিরোধী এক আন্দোলনকারীর মৃত্যু হলে তাদের কিছু যায় আসে না। তাছাড়া বাংলায় সম্প্রতি বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলন যেভাবে পুলিশ দিয়ে দমন করা হচ্ছে, তা অনেক বিজেপির রাজ্যেও হয় না। আমি খবরটি প্রথম জানি এপিডিআর-এর নেতা মানবাধিকার কর্মী আলতাফ আহমেদের ফেসবুক পোস্ট থেকে।
সব মিলিয়েই খুবই দুঃসময় বাংলার। আনিসের মৃত্যু সেই বেদনায় আরও অভিঘাত সৃষ্টি করলো।