খুলনার কয়রা উপজেলার কয়রা সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্রে কামিল পরীক্ষার্থীদের নিকট থেকে মৌখিক পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাইয়ে দিতে দুই দফা টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। মৌখিক পরীক্ষায় ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন প্রাপ্ত বহিরাগত ও অভ্যন্তরীণ পরীক্ষকদের খুশি করতে দেওয়ার কথা বলে পরীক্ষার্থীদের থেকে এ টাকা নেওয়া হয়।
সরেজমিন শনিবার পরীক্ষা কেন্দ্রে যেয়ে দেখা যায়, কয়রা সরকারি মহিলা কলেজের প্রভাষক বাবুল আক্তার ও মোঃ ওলিউল্লাহ কামিল পরীক্ষার্থীদের নিকট থেকে মাথাপিছু তিনশ’ করে টাকা নিচ্ছেন। টাকা না দিলে তাদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে বাধা দিচ্ছেন। একপর্যায়ে পরীক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করলে কয়রা সরকারি মহিলা কলেজের প্রভাষক গোপাল চন্দ্র, অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম ও কয়রা উত্তরচক আমিনিয়া কামিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুল মালেক এর সাথে বাকবিতন্ড হয়। পরবর্তীতে পুলিশ এসে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং সেখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতিনিধি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার মো. মোহসিন হোসেন এসে টাকা নেয়া বন্ধ করেন। তবে তিনি চলে যাওয়ার পরে ফের টাকা নেয়া শুরু হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এর আগে পরীক্ষা চলাকালীন কয়রা উত্তরচক আমিনিয়া কামিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ মাসুদুর রহমানের নির্দেশে অফিস সহকারী কামরুল ইসলাম এ্যাসাইনমেন্টের খাতায় স্বাক্ষর ও মৌখিক পরীক্ষার জন্য জনপ্রতি পাঁচ শত টাকা নেন।
কামিল পরীক্ষার্থী আরাফাত ও একরামুল বলেন, আমরা কয়রা উত্তরচক আমিনিয়া কামিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। আমাদের মাদ্রাসা থেকে কোন প্রবেশপত্র দেয়া হয়নি। কয়রা সরকারি মহিলা কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঁচ শত টাকা দিয়ে প্রবেশপত্র সংগ্রহ করতে হয়েছে। পরবর্তীতে পরীক্ষা চলাকালীন মৌখিক পরীক্ষা ও এ্যাসাইনমেন্টের খাতা স্বাক্ষর বাবদ কলেজ কর্তৃপক্ষের সম্মতিতে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ আরও পাঁচ শত টাকা নিয়েছে। তখন অবশেষে মৌখিক পরীক্ষার দিন কলেজ কর্তৃপক্ষ ফের তিনশ’ টাকা করে নিতে চাইলে প্রতিবাদ করি। প্রতিবাদের ফলে কিছু পরীক্ষার্থীর নিকট থেকে টাকা না নিলেও অধিকাংশদের কাছ থেকে তিনশ’ টাকা করে নিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন পরীক্ষার্থী বলেন, মৌখিক পরীক্ষা ও এ্যাসাইনমেন্টের খাতা বাবদ অবৈধভাবে দুই দফায় আমাদের থেকে আটশ’ টাকা নিয়েছে। আমরা ভয়ে কোন প্রতিবাদ করতে পারিনি। নিরবে সব মেনে নিয়েছি।
ঝিনাইদহ সিদ্দিকীয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. রুহুল কুদ্দুস ও খুলনা নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মো. গোলাম মোস্তফা মৌখিক পরীক্ষায় ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোনিত বহিরাগত পরীক্ষক ছিলেন।
কয়রা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আমিনুর রহমান বলেন, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী পরীক্ষা পরিচালনা করছি। প্রবেশপত্র বাবদ টাকা নিয়ে পরীক্ষার যাবতীয় খরচ মেটানো হচ্ছে। মৌখিক পরীক্ষায় বহিরাগত পরীক্ষকদের কিছু দেয়ার জন্য মাদ্রাসা থেকে বলা হয়। না দিলে নাকি ভালো নম্বর দেন না। এজন্য মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাসুদ পরীক্ষা চলাকালীন টাকা তুলেছিল। তবে সেই টাকা থেকে মৌখিক পরীক্ষার খরচ দেওয়ার কথা থাকলেও এক টাকাও দেননি। অবশেষে বাধ্য হয়ে খরচ মেটাতে তিনশ টাকা করে উত্তোলন চেষ্টা করি। তবে বিশৃঙ্খলা হলে উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে টাকা উত্তোলন বন্ধ করে দেই। আর যাদের থেকে নেয়া হয়েছিল তাদের টাকা ফেরত দিব।
এ বিষয়ে মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাসুদুর রহমান বলেন, পরীক্ষা কেন্দ্রে আমার ঢুকা নিষেধ। কি হচ্ছে এ বিষয়ে আমি কিছু জানতে পারছি না। ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুল মালেক যোগসাজসে অনিয়ম করতেছেন। আমাকে বাদ দিয়ে বাইরের লোক দিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছেন কন্ট্রোলার। প্রবেশপত্র বিতরণের ক্ষমতাও আমাদের দেয়া হয়নি। কয়রা কলেজের অধ্যক্ষকে দিয়ে প্রবেশপত্র বিতরণ করানো হয়। সব বিষয় নিয়ে ভিসির কাছে লিখিত অভিযোগ করবো।
ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আক্তারুজ্জামান বলেন, মৌখিক পরীক্ষার প্রত্যেকটি পরীক্ষার্থীর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের মনোনিত বহিরাগত পরীক্ষকদের সম্মানী দেন। মৌখিক পরীক্ষার জন্য কোন ধরণের টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই।
তিনি আরও বলেন, মাসুদ হত্যা প্রচেষ্টা মামলার আসামি। সেই সব ঝামেলা করতেছেন। ওই মাদ্রাসায় দুটি গ্রুপিং রয়েছে। এজন্য পরীক্ষা পরিচালনার জন্য সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুল মালেককে সহযোগীতার কথা বলি। প্রবেশপত্র মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তাদের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে ডাউনলোড করবেন। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ কিভাবে পাসওয়ার্ড পেয়েছে এটা আমার জানা নেই। কলেজ ও মাদ্রাসার মধ্যে দ্বন্দ্ব হচ্ছে এই খবরে তদন্তের জন্য আমরা হাই পাওয়ারের কমিটি পাঠানোর ব্যবস্থা করতেছি। ওখানের ফাজিল ও কামিল পরীক্ষার কেন্দ্র বাতিলের সুপারিশ করেছি।
খুলনা গেজেট/এনএম