জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর বিভাগের বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ) আয়কর আদায়ের ক্ষেত্রে সংশোধিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি, ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমে যাওয়া, আদালতে মামলা, অব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে লোকসান, মার্চেন্ট ব্যাংকের আয় হ্রাসসহ বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে এলটিইউ বিদায়ী অর্থবছর (২০২০-২১) পার করেছে। গত ছয় বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো কর আদায়ের লক্ষ্য অর্জন করেছে এলটিইউ। করদাতাদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন, উৎসে করের মনিটরিং বৃদ্ধি, বকেয়া আদায়ে জোর, দাবিনামা সৃষ্টি ও আদায়, অপ্রদর্শিত অর্থ থেকে কর আদায় আর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্বনিত প্রচেষ্টা, প্রয়াসের ফলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন এলটিইউ’র কর্মকর্তারা।
এলটিইউ সূত্রে জানা গেছে, এবারের হিসাবটি সাময়িক হিসাব। চূড়ান্ত হিসাব পেতে আরও দুই সপ্তাহের মতো সময় লাগবে। এ বিষয়ে এলটিইউ কমিশনার ইকবাল হোসেন বলেন, অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, চূড়ান্ত হিসাবে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ কিছুটা বাড়ে।
বর্তমানে এলটিইউতে ব্যাংক-বিমা, উৎপাদন, গণমাধ্যম, মোবাইল ফোন অপারেটর, ওষুধ খাতসহ ২৮১ কোম্পানি আছে। এ ছাড়া এসব কোম্পানির ৯৮৭ জন পরিচালকও এলটিইউতে ব্যক্তিগত আয়কর দেন।
এলটিইউ এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছর এলটিইউকে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয় ২৪ হাজার ৪৫৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা। পরে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয় ২৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে গতকাল পর্যন্ত আদায় হয়েছে ২৪ হাজার ১১ কোটি টাকা। রাজস্ব আদায় প্রবৃদ্ধি ১৫ দশমিক ২৩ শতাংশ। এ বছর লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি আদায় হয়েছে ১১ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত ছয় বছরের মধ্যে দুইবার এলটিইউ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে। এর মধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছর লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১১ কোটি টাকা কোটি বেশি আদায় হয়েছে। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছর লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ২৭ কোটি টাকা বেশি আদায় হয়েছে।
অপরদিকে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ২০ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ঘাটতি ছিল ৫ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২১ হাজার ৪১২ কোটি টাকার বিপরীতে আদায় হয় ১৭ হাজার ৪২২ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি পাঁচ দশমিক ৬৮ শতাংশ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৭ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকার বিপরীতে আদায় হয় ১৪ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি দুই দশমিক শূন্য পাঁচ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১৯ হাজার ৭৮০ কোটি টাকার বিপরীতে আদায় হয় ১৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি শূন্য দশমিক ৮১ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১৪ হাজার ৪১৬ কোটি টাকার বিপরীতে আদায় হয় ১৪ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
এলটিইউ কমিশনার মো. ইকবাল হোসেন বলেন, ‘করোনা সংকটে ব্যবসা-বাণিজ্য শ্লথগতি থাকলেও আমরা কর আদায়ের লক্ষ্য অর্জন করেছি। এনবিআর চেয়ারম্যান ও এনবিআরের সার্বিক দিকনির্দেশনায় এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। এছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংবলিত প্রচেষ্টা আর প্রয়াস আর করদাতাদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের ফলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হয়েছে। আর করদাতারা সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে সব সময় এগিয়ে এসেছে।’
তিনি বলেন, ‘উৎসে কর্তনে মনিটরিং বৃদ্ধি করার ফলে উৎসে কর্তন যে কোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে। এছাড়া বকেয়া ও দাবিনামা সৃষ্টি থেকে ভালো রাজস্ব আহরণ হয়েছে। অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করা থেকে প্রায় শত কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। এলটিইউতে থাকা প্রায় সব খাতে মনিটরিং বৃদ্ধির ফলে রাজস্ব আগের তুলনায় বেড়েছে।’
এনবিআর সূত্রমতে, দেশের ৫৮ খাত থেকে উৎসে আয়কর আহরণ করে এনবিআর। উৎসে করের বেশিরভাগ অর্থ আসে ব্যাংক, বিমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ বেশ কয়েকটি খাত থেকে। উৎসে আয়করের বেশিরভাগ জোগান দেয় এলটিইউ। কর ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে ফাংশনাল পদ্ধতি প্রবর্তনের লক্ষ্যে ২০০৩ সালের নভেম্বরে এলটিইউ গঠন করা হয়। যুক্তরাজ্যের ডিএফআইডির সহায়তায় আরআইআরএ প্রকল্পের আওতায় এনবিআরের অধীনে সিআইসি ও এলটিইউ গঠিত হয়।
এলটিইউতে মোট করদাতার সংখ্যা এক হাজার ১৫৯ এবং কোম্পানি করদাতা ৪৩৯। এর মধ্যে ৬২টি ব্যাংক, পাঁচটি মোবাইল কোম্পানি, ৩৯টি লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি, ৪৭টি মার্চেন্ট ব্যাংকিং, ৪৮টি সাধারণ বিমা, ৩২টি জীবন বিমা, ১২টি ফার্মাসিউটিক্যালস, পাঁচটি টোব্যাকো ম্যানুফ্যাকচারিং, ২৭টি টেক্সটাইলস, ১৪টি গার্মেন্ট, ৯টি মাল্টিপল প্রোডাক্টস, ৭৪টি ম্যানুফ্যাকচারিং, ৬৫টি অন্যান্য কোম্পানি। আর ব্যক্তি করদাতা ৭২০।