খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে একদিনের ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ২১৪
ধান-চাল সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হবার শঙ্কা

করোনার প্রভাব খাদ্য নিরাপত্তায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

মহামারী করোনার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে খাদ্য নিরাপত্তায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মহামারী, মিলারদের মজুদ ও কৃষকদের আপৎকালীন সংরক্ষণের কারণে এবার খুলনা অঞ্চলে সরকারি ধান চাল সংগ্রহে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না! প্রায় চার মাসে খুলনাতে লক্ষ্যমাত্রার ৩৩ শতাংশ ধান, ৬৪ শতাংশ আতপ চাল ও ৮৭ শতাংশ সিদ্ধ চাল সংগ্রহ করতে পেরেছে খাদ্য বিভাগ। নির্ধারিত সময়ের আর আছে মাত্র দশদিন; এরমধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের আশা ছেড়ে দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

খুলনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মুহাম্মদ তানভীর রহমান বলেন, ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ হাজার ১৫১ টন, এ পর্যন্ত (বৃহস্পতিবার) সংগ্রহ করা হয়েছে প্রায় ৩৩ শতাংশ। অর্থাৎ তিন হাজার ৩২৩ টন ৮৮০ কেজি ধান সংগ্রহিত হয়েছে। সিদ্ধ চাউল ৮৭ শতাংশ সংগ্রহিত হয়েছে; অর্থাৎ ১৭ হাজার ৯৪৮ টন লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে সংগ্রহিত হয়েছে ১৫ হাজার ৫১৬ মেট্রিক টন ৮৬০ কেজি। আর আতপ চাউলের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৭৭৩ টন, অর্জিত হয়েছে এক হাজার ৭৫৮ টন ১৮০ কেজি অর্থাৎ ৬৪ শতাংশ। চাল সংগ্রহ এ ক’দিনের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে আশাবাদী তিনি। তবে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না বলে সংশয় প্রকাশ করলেন এ কর্মকর্তা।
তিনি আরও বলেন, বিভাগের অন্যান্য জেলার তুলনায় খুলনায় সংগ্রহের আশাব্যঞ্জক। ধান ও চালের বাজার মাঝে-মধ্যেই অস্থিতিশীল হয়ে উঠে। যে কারণে অনেক কৃষক তাদের ফসল বেচতে এখনও দোটানায় ভুগছেন। করোনার প্রাদুর্ভাব কবে কাটবে তা নিয়ে সৃষ্ট আপৎকালীন আশঙ্কায়ও অনেক কৃষক ধান হাতছাড়া করছেন না।

খাদ্য বিভাগের সূত্রে জানা গেছে, ধানের নায্যমূল্য নিশ্চিত করতে এবছর সরকার সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেয়; আর মিলারদের কাছ থেকে চাল। দেশের নিরাপত্তা বিবেচনায় রেখে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও অঞ্চলভিত্তিক এ কার্যক্রম ২৬ এপ্রিল শুরু হয়। চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। সরকারি গুদামে এ খাদ্য শস্য মজুদ রাখা হয়- যা দিয়ে জনগণের আপৎকালীন খাদ্য সহায়তা, উৎসবকালীন সহায়তা, কাবিখা, কাবিটা, নানাপ্রকল্প বাস্তবায়ন এবং রেশনিং সরবরারহ করা হয়। মহামারী করোনার প্রাদুর্ভাবে কর্মহীন জনগোষ্ঠির খাদ্য সহায়তা ও বেঁড়িবাধ ভাঙনের উপকুলবাসীর সহযোগিতার জণ্যে এবছরের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান ছিল সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্য বিভাগ এবার সারাদেশে কৃষকের কাছ থেকে ৮ লাখ টন ধান এবং মিলারদের কাছ থেকে ১১ লাখ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। সময়সীমা ২৬ এপ্রিল থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। সে হিসাবে সংগ্রহকালীন ১২৭দিন। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অতিবাহিত হয়েছে ১১৬দিন। খাদ্য বিভাগে ধান সংগ্রহের পরিমাণ ৩৩ শতাংশ।

খুলনা আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্র জানান, বিভাগের ১০ জেলায় ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৯৬ হাজার ৮৪৫ টন, সিদ্ধ চাল এক লাখ ৩১ হাজার ৯২৮ টন এবং আতপ চাল ৮ হাজার ৭৯১ টন। প্রসঙ্গত্ব, সরাসরি কৃষকদের থেকে ধান সংগ্রহের উদ্দেশ্যে গত ১০ মে খুলনার দিঘলিয়া উপজেলায় মোবাইল অ্যাপস ‘কৃষকের হাসি’র উদ্বোধন করা হয়েছিল। যদিও কৃষক ও খাদ্য বিভাগ সময়োপযোগী এ সিদ্ধান্তের পুরোপুরি সুফল পায়নি।

খুলনার আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মাহবুবুর রহমান বলেন, এবার প্রতি কেজি ধান ২৬টাকা, সিদ্ধ চাল ৩৬ টাকা, আতপ চাল ৩৫ টাকা দরে ক্রয় করা হয়েছে। প্রত্যেক জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সংগ্রহের পরিমাণ কিছুটা কম। খোলা বাজারে ধান ও চালের দাম বেশি। যে কারণে কৃষক ও মিলারদের মধ্যে সরকারি খাদ্য গুদামে ধান-চাল দিতে আগ্রহ কম। এছাড়া করোনা পরিস্থিতির কারণে অধিকাংশ কৃষক নিজেদের উৎপাদিত ধানের একটা বড় অংশ সংরক্ষণ করেছে; আবার অসাধু মিলাররাও অবৈধ মজুদ করে থাকতে পারে। এসব কারণে ধান-চাল সংগ্রহ কিছুটা বিঘ্নিত হয়েছে।

খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ খুলনার সাধারণ সম্পাদক কাজী জাবেদ খালিদ বলেন, “কৃষি জমিতে অপরিকল্পিত শহরায়ন ও শিল্পায়নের কারণের খাদ্য শস্য উৎপাদনের সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে। এরপর প্রাকৃতিক ও মনুষ্য সৃষ্টি প্রতিবন্ধধকতা তো রয়েছেই। এরমধ্যে এবার করোনাকালীন সংকট। এসব কারণে খাদ্য নিরাপত্তা চরম হুমকির মুখে।”

খুলনা গেজেট/এআইএন




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!