করোনা মহামারীর কারণে দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সেশনজটে পড়তে যাচ্ছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম চললেও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে দু’টি টার্ম পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের সম্মতিক্রমে ফেব্রুয়ারী থেকে পরীক্ষা নেয়ার পরিকল্পনা থাকলেও প্রায় ছয় মাসের সেশনজট তৈরি হবে।
তানভীর আহম্মেদ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি ডিসিপ্লিনের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। করোনার কারণে ১৮ মার্চ থেকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ না হলে চলতি বছরের ডিসেম্বরের ভিতরেই তার গ্রাজ্যুয়েশন সম্পন্ন হতো। শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় তার চতুর্থ বর্ষের দু’টি টার্ম পরীক্ষা এখনো অনুষ্ঠিত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী ফেব্রুয়ারী থেকে পরীক্ষা শুরু হলেও তাকে প্রায় ছয় মাসের সেশনজটে পড়তে হবে। আর যদি ফেব্রুয়ারীতে পরীক্ষা শুরু না হয়, তাহলে সেশনজটের মেয়াদ আরও বাড়বে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের উপস্থিতিতে ডিন, ডিসিপ্লিনগুলোর প্রধান ও প্রভোস্টদের এক আলোচনা সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, “১ ফেব্রুয়ারী থেকে সকল টার্মের পরীক্ষা শুরু করা যেতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে ডিসিপ্লিন প্রধানগণ সকল শিক্ষার্থীর নিকট থেকে হল না খুলে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন মর্মে সম্মতি নিয়ে বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবে।”
এ ব্যাপারে বাংলা ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী আশিক বিশ্বাস বলেন, ‘চাকরির বাজার কিংবা আমাদের বয়স কোনটাই থেমে নেই। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা দিতে চাই, কিন্তু হল খোলা রেখে।’
রসায়ন ডিসিপ্লিনের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রহমান অসিফ বলেন, ‘আমাদের ব্যাচের প্রায় ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী চায় না হল বন্ধ রেখে পরীক্ষা হোক। তা না হলে খুলনার বাইরের শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়বে।’
গণিত ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী আরাফাত বলেন, ‘পরীক্ষা হলে আমাদেরই ভালো হবে, তবে হল বন্ধ থাকলে অনেক সমস্যায় পড়তে হবে। সব ব্যাচের পরীক্ষা একসাথে অনুষ্ঠিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে থাকার মতো জায়গা পাওয়া যাবে না।’
এ বিষয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের প্রধান (সাময়িক দায়িত্ব) মামুন অর রশিদ বলেন, ‘করোনার কারণে স্থগিত পরীক্ষাগুলো অনুষ্ঠিত হওয়া চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত জরুরী। কারণ গ্রাজুয়েশন শেষ হলেই তারা বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। তবে সব ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীর সম্মতি এবং অসম্মতির উপর ভিত্তি করেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে, কবে থেকে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।’
সামাজিক বিজ্ঞান স্কুলের ডিন প্রফেসর তাছলিমা খাতুন খুলনা গেজেটকে জানান, ‘হল বন্ধ রেখে ফেব্রুয়ারী থেকে পরীক্ষা শুরু হবে কিনা সেটা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে শিক্ষার্থীদের মতামতের উপর। আমাদের শিক্ষার্থীরা যাতে সেশনজটে না পড়ে বা সেশনজট হ্রাস করতেই মূলত: বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ফেব্রুয়ারীতে পরীক্ষা নেওয়া যায় কিনা সে কথা ভাবছে। শিক্ষার্থীরা যদি হল বন্ধ রেখে পরীক্ষা দিতে আগ্রহী থাকে, আশা করি আমরা সম্পূর্ণ সুরক্ষা ব্যবস্থা মেনে পরীক্ষা নিতে পারবো।’
উল্লেখ্য, ১৯৯১ সালে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর পর সেশনজট মুক্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে দেশে বিদেশে খুলনা বিশ্ববিদ্যালযের একটা সুনাম আছে।
খুলনা গেজেট/এমএম