করোনাভাইরাসের প্রকোপে এক প্রকার অচলাবস্থা বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে। মধ্য মার্চ থেকে বন্ধ সব ধরনের খেলাধুলা। বিভিন্নভাবে খেলাধুলার সাথে জড়িত অনেকেই বেকার হয়ে পড়েছেন। এরকমই কাজ হারিয়ে এক প্রকার অসহায় হয়ে পড়েছেন খুলনার ৩০টিরও অধিক ক্রিকেট একাডেমীর সঙ্গে জড়িত ক্রিকেট কোচ ও সংশ্লিষ্টরা। এসব কোচের আয়ের একমাত্র মাধ্যম ছিলো কোচিং করানো। তবে লকডাউনের ফলে বন্ধ এসব একাডেমী। বন্ধ হয়ে গেছে তাদের একমাত্র আয়ের পথও। ফলে অসহায় আর মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে তাদের। বিসিবি থেকে ক্রিকেটারদের আর্থিক সহায়তা দেওয়াতে, আশায় বুক বেঁধেছিলেন এসব ক্রিকেট কোচেরাও। তবে ক্রিকেট কোচদের জন্য এমন কোন সহায়তা আসেনি। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মাধ্যমে খুলনা জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে একবার সব কোচদের নাম নেওয়া হলেও সেখান থেকেও কোনও সহায়তা পাননি খুলনার কোনো কোচ। স্থানীয়ভাবে সেভাবে সহায়তা পৌঁছেনি তাদের অনেকেরই কাছে। অনেকে আবার লজ্জায় কারও কাছে সহায়তার হাতও পাততে পারছেন না।
খুলনা সার্কিট হাউজ মাঠের এমনই একটি একাডেমী ‘বেসিক ক্রিকেট একাডেমী’-র প্রশিক্ষক তৌহিদুল ইসলাম মুরাদ। নিজের অসহায়ত্বে কথা অকপটে বলে ফেললেন তিনি। এই প্রশিক্ষকের ভাষ্যে, ‘আমরা আসলে মাঠের লোক। মাঠে কাজ করেই আমাদের আয় করতে হয়। কবে মাঠে খেলা ফিরবে আবার কবে স্বাভাবিক জীবন যাত্রা ফিরবে তা নিয়ে আমরা অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি। মাঠে খেলোয়াড়দের কিছু শিখাতে পারলে তারা মাস শেষে আমাদের একটা বেতন দেয়, সেটা দিয়েই আমাদের সংসার চলে।’
অসহায় এসব কোচদের পাশে বিসিবির দাঁড়ানোটা নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করেন এই কোচ। তিনি আরও যোগ করেন, ‘বয়স ভিত্তিক ক্রিকেটারদেরকে তৃণমূল পর্যায় থেকে তৈরি করে আমরাই কিন্তু ঢাকায় পাঠাই। আমাদের হাত ধরেই কিন্তু এরা একদিন জাতীয় পর্যায়ে সুযোগ পায়। আমি মনে করি, এমন কোচদের খোঁজ নেওয়া বিসিবির দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। বিসিবি যেখানে দ্বিতীয় বিভাগের ক্রিকেটারদের পর্যন্ত সহযোগিতার হাত বাড়াতে পারলো, আমাদের বিষয়গুলোও দেখা উচিত।’
মুরাদের মতো আরেকজন ক্রিকেট কোচ মো: জহির উদ্দিন বাবর। খুলনা সাউথ বাংলা ক্রিকেট একাডেমীর প্রশিক্ষক তিনি। নিজের অসহায়ত্বের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘একাডেমীর মাধ্যমে খেয়ে পড়ে ভালোই ছিলাম। পরিবারের পাঁচ সদস্যের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি আমি। ক্রিকেট কোচিং করাতে গিয়ে অন্য কোন কাজও শেখা হয়নি বা করা হয়নি। গত তিন মাস ধরে খুবই অসহায় অবস্থায় দিন পার করছি।’
খুলনা জেলা ক্রিকেট কোচিং এসোসিয়েশনের সাাধারণ সম্পাদক মনোয়ার আলী মনু মনে করেন, ক্রিকেট গড়ার কারিগরদের পাশে থাকা উচিত সরকার, বিসিবি ও সমাজের বিত্তবানদের। তিনি বলেন, ‘অন্যান্য অনেক জেলায় ক্রিকেট কোচেরা বিভিন্নভাবে সহায়তা পেয়েছেন। কিন্তু খুলনা এখনও পায়নি। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মাধ্যমেও খুলনার ক্রিকেট কোচদের জন্য একটি আবেদন করা হয়েছিলো। সেখান থেকেও কোন সাড়া আসেনি। বিসিবির কাছে এই সব ক্রিকেট কোচেরা খেলোয়াড় তৈরী করে পাঠায়। এই সময়ে বিসিবি তাদের পাশে থাকবে সেটাই আশা করবো।’
খুলনা গেজেট/এএমআর