খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  মার্কিন শ্রম প্রতিনিধি দল ঢাকা আসছে আজ

করোনাভাইরাস মোকাবিলা বাড়তি ব্যয় ২ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা

গেজেট ডেস্ক

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং শিল্পের ঋণের সুদ ভর্তুকিতে সরকারের ২ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে।

এটি জাতীয় বাজেটের ৪১ শতাংশের সমান। বিপুল অঙ্কের মধ্যে টিকা কেনা ও বিতরণে খরচ হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা। সংকট মোকাবিলায় দ্রুত স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ এবং তাদের বেতনভাতা জোগানে ৪১০ কোটি টাকা ব্যয় হয়।

এছাড়া করোনার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ বাবদ ব্যয় হয় ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকা। পাশাপাশি প্রণোদনার ঋণের যে সুদ, সেটির অর্ধেক সরকার বহন করতে গিয়ে ভর্তুকি গুনতে হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদন থেকে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

জানতে চাইলে সাবেক সিনিয়র অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, করোনা মোকাবিলায় কয়েকটি খাতে যে খরচ হয়েছে, সেটি না করে উপায় ছিল না। বিকল্প কোনো পথও ছিল না। ওই সময় জীবন রক্ষা করা জরুরি ছিল। ব্যবসায়ীদের জন্য যে প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছে, এতে তারা উপকৃত হয়েছে। যে কারণে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অন্যান্য দেশের তুলনায় অর্থনীতির ক্ষতি বাংলাদেশে কম হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, শিল্প খাতে ঋণের সুদ ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে ভালো। তবে আগামী দিনে ভর্তুকি কমিয়ে আনতে হবে। সরকার অর্থের যে অতিরিক্ত জোগান দিয়েছে, পুনরায় কোনো ধরনের ধাক্কা না লাগলে পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারবে।

করোনাভাইরাস সবচেয়ে বেশি আঘাত হানে স্বাস্থ্য খাতে। এরপর ক্ষতির মুখে পড়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় অনেক শিল্পের উৎপাদন কার্যক্রম। বৈদেশিক বাণিজ্যেও ভাটা নেমে আসে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, চলমান করোনাভাইরাসের স্বাস্থ্যগত এবং অর্থনৈতিক মোকাবিলায় চারটি নীতি বা কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সরকারের ব্যয় বাড়ানো, প্রণোদনা প্যাকেজ গঠন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সম্প্রসারণ ও অর্থের জোগান বৃদ্ধি।

করোনা স্বাস্থ্য খাতের মতো অর্থনৈতিক খাতে মারাত্মক আঘাত করেছে। ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়।

এমন পরিস্থিতিতে সরকার নানা ধরনের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও ব্যবসায়ীদের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে নানা ধরনের ২৮টি আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে। এসব প্যাকেজের আওতায় ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে। এটি জিডিপির ৬ শতাংশের সমান।

সূত্র জানায়, ২০টি প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ৪০ হাজার ২২৯ কোটি টাকা সরাসরি দেওয়া হয়েছে চলতি বাজেট থেকে। অবশিষ্ট ৮টি প্যাকেজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধমে। এ অর্থের পরিমাণ ১ লাখ ৪৭ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় এসব অর্থ ঋণ দেওয়া হয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ২৪০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে। ঋণ নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সক্রিয় রেখেছে। প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বেতনভাতাও পরিশোধ করা হয়েছে। সরাসরি উপকৃত হয়েছেন ৬ কোটি ৬৭ লাখ ৬৫ হাজার ২৬৯ জন উদ্যোক্তা (ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড়)।

তবে প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থের ঋণের যে সুদ আসছে এর ৫০ শতাংশ সরকার নিজেই ভর্তুকি হিসাবে পরিশোধ করছে। বাকি ৫০ শতাংশ পরিশোধ করছেন উদ্যোক্তারা। ফলে এ খাতে সুদ ভর্তুকি হিসাবে সরকারকে গুনতে হচ্ছে ২০ হাজার কোটি টাকা। এটিও করোনাভাইরাস মোকাবিলায় অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সরকারের একটি ব্যয়।

এদিকে সার্বিক পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রত্যেক মানুষের জন্য টিকার ব্যবস্থা নিশ্চিত ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা মনে করেন, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সব ধরনের আর্থিক সহায়তা ও ছাড় করা হয়েছে। অর্থ সংকটে টিকা কেনায় যাতে বাধা না হয়, সেটি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বশেষ তথ্যমতে, ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ থেকে ২৯ কোটি ৬৪ লাখ ৮৪ হাজার ১২০ ডোজ টিকা সংগ্রহ করা হয়েছে।

এটি গত ১১ মার্চ পর্যন্ত ছিল ২২ কোটি ডোজ। এর মধ্যে কোভ্যাক্সের ২ কোটি ৯৭ লাখ ২০ হাজার, চীন থেকে ৭ কোটি ৭০ লাখ সিনোফার্ম ও ৭ কোটি ৫০ লাখ ১০ হাজার সিনোভ্যাক এবং ভারত থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৩ কোটি ডোজ টিকা সংগ্রহ করা হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, ২২ কোটি টিকা কেনা ও বিতরণে সরকারের ব্যয় হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা।

করোনাভাইরাসের কারণে দেশের স্বাস্থ্য খাতের সংকট পুরোপুরি ফুটে ওঠে। সারা দেশে দেখা দেয় নার্স ও চিকিৎসকের সংকট। রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় হাসপাতালগুলোর। এ পরিস্থিতিতে ৪ হাজার চিকিৎসক, ১৪০০ মিডওয়াইফারি, ৮১২৮ জন সিনিয়র নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়।

এই মিডওয়াইফারি ও সিনিয়র নার্সদের বেতনভাতা চলতি জুন পর্যন্ত প্রয়োজন হবে ২১৬ কোটি টাকা। আর চিকিৎসকের বেতন বাবদ গুনতে হবে ২৯ কোটি ১১ লাখ টাকা, যা প্রতিমাসেই পরিশোধ করা হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য ব্যয়সহ মোট প্রয়োজন ৪১০ কোটি ১১ লাখ টাকা।

উল্লিখিত খাত ছাড়াও করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সামাজিক নিরাপত্তা খাত সম্প্রসারণ করা হয়েছে। আরও বেশি মানুষকে এই সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। পাশাপাশি কৃষি খাতে দেওয়া হয়েছে নানা ধরনের সুবিধা।

কৃষকের সারের মূল্য অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার পরও আগের দামেই সার দেওয়া হচ্ছে তাদের। সরকার এক্ষেত্রে বড় ধরনের ভর্তুকি পরিশোধ করছে। জ্বালানি তেলের মূল্য একদফা সমন্বয় করলেও আর নতুন করে বাড়েনি।

খুলনয় গেজেট/এএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!