স্বাস্থ্য সংকটের বাইরে মহামারি করোনা আরও অনেক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার (২৪ মে) এশিয়া অঞ্চলের কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের এক সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
সভায় শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের বড় ছেলে প্রিন্স অব ওয়েলস চার্লস ফিলিপ আর্থার জর্জ এই সভা আহ্বান করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য টেকসই এবং প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধানের জন্য কমনওয়েলথ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কমনওয়েলথ সদস্য দেশ এবং ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের সভাপতি হিসেবে কপ-২৬ জলবায়ু সম্মেলনকে সামনে রেখে কয়েকটি ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
করোনা মহামারির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গোটা বিশ্ব অনিশ্চিত এক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের পরিস্থিতিও একই। স্বাস্থ্য সংকটের বাইরে এই মহামারি আরও অনেক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। যার জন্য আমার সরকার জীবন ও জীবিকাকে প্রাধান্য দিয়ে নীতি গ্রহণ করেছে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। মহান আল্লাহর রহমতে বাংলাদেশ এই মহামারির ক্ষতিকর প্রভাব প্রশমিত করে আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছে।
কার্যকর এবং দক্ষ উপায়ে আরও বেশি স্থিতিশীল ও উন্নত-সমৃদ্ধ জীবন গড়তে বিশ্বজুড়ে সবুজ ও টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সার্কুলার অর্থনীতিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত ফোরাম-সিভিএফের চেয়ারম্যান এবং জিসিএর দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক কার্যালয়ের হোস্ট হিসেবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর স্বার্থ রক্ষা এবং স্থানীয়ভাবে অভিযোজন সমাধান এবং নদী ভাঙনের কারণে বাস্তুচ্যুত হওয়া লোকদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করছি।
ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে কমনওয়েলথ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে জ্ঞান ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের বিধানসহ কার্বন নিরপেক্ষ প্রযুক্তির ওপর জোর দেওয়ার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
গৃহহীনদের আশ্রয় প্রদানের দিকে সবাইকে মনোনিবেশ করার জন্য অনুরোধ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, গৃহহীনদের আশ্রয় প্রদান করা দারিদ্র্য বিমোচন এবং সুবিধাবঞ্চিত জনগণের জলবায়ু ক্ষতি হ্রাসের সর্বোত্তম কৌশল। এ সময় তিনি অভিযোজনে সহায়তা করতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে জলবায়ু অর্থায়ন করতে বলেন।
জলবায়ুর ক্ষতি প্রশমন এবং অভিযোজনের ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশের প্রশংসিত হওয়ার কথা তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং সম্পদের সীমাবদ্ধতা থাকার পরও বাংলাদেশ বিশ্বে অ্যাডাপটেশন লিডার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বাংলাদেশ প্রতি বছর জলবায়ু প্রশমন ও অভিযোজন ব্যবস্থার জন্য নিজস্ব সম্পদ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করছে।
কার্বন নিঃসরণ কমানো এবং বৃক্ষরোপণসহ জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ ‘মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি ইনিশিয়েটিভ’ গ্রহণ করেছে। এই উদ্যোগের আওতায় বাংলাদেশ কম কার্বন নিঃসরণ করেই উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে ৪০ গিগা ওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন এবং ৩ কোটি বৃক্ষরোপণ করতে যাচ্ছি।