সাতক্ষীরায় দ্রুত ঝাজ কমতে শুরু করেছে কাঁচা মরিচের। ভারতীয় কাঁচা মরিচ আমদানির একদিন পরেই সাতক্ষীরার বাজারে কাঁচা মরিচের দাম কমে এসেছে অর্ধেকে। সোমবার (৩ জুলাই) শহরের সুলতানপুর বড়বাজারে ভারতীয় আমদানিকৃত কাঁচা মরিচ পাইকারি ২৫০ টাকা ও খুচরা ৩০০ টাকা এবং দেশী জাতের কাঁচা মরিচ পাইকারি ২০০ টাকা ও খুচরা ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যা রবিবার ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
সোমবার সকাল ৬টার দিকে সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বড়বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, ভারতীয় আমদানিকৃত কাঁচা মরিচ পাইকারি ৩৫০ টাকা ও দেশী জাতের কাঁচা মরিচ পাইকারি ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু বেলা বাড়ার সাথে সাথে এই দাম আরও কমতে শুরু করে। একপর্যায়ে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ভারতীয় আমদানিকৃত কাঁচা মরিচ পাইকারি ২৫০ টাকা এবং দেশী জাতের কাঁচা মরিচ পাইকারি ২০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। বাজারে সরবরাহ বাড়ার সাথে সাথে দামও কমতে থাকে। ফলে বাজারে ভারতীয় কাঁচা মরিচ খুচরা ৩০০ টাকা এবং দেশী জাতের কাঁচা মরিচ ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশে এ যাবতকালের রেকর্ড করা দামে বিক্রি হওয়া কাঁচা মরিচের দাম হঠাৎ কমে যাওয়ায় ক্রেতা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন।
বাজারে কাঁচা মরিচ কিনতে আসা শহরের পলাশপোল এলাকার সিরাজুল ইসলাম জানান, আমি প্রতিদিন সকালে প্রায়ই বাজারে আসি টাটকা সবজি কেনার জন্য। সোমবার সকালে প্রথমে এসে পাইকারি বাজার থেকে ভারতীয় আমদানিকৃত কাঁচা মরিচ ৩২০ টাকা কেজি দরে কিনেছিলাম। কিন্তু পরে জানতে পারলাম ওই মরিচ ২৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, নিত্য পণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়িদের কারসাজি আছে। অনেকে ইচ্ছা করে সংকট সৃষ্টি করে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করেন। কিন্তু অন্য ব্যবসায়িরা যখন বাজারে ওই পণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি করেন তখন আবার দাম কমে যায়।
মাঝখানে কিছু অসাধু ব্যবসায়ি সংকটের সুযোগ নিয়ে ক্রেতাদের ঠকিয়ে বেশি লাভ করেন। সোমবার বাজার থেকে কাঁচা মরিচ কেনার ক্ষেত্রে ঠিক একই ঘটনা ঘটেছে। তিনি নিত্য প্রয়োজনী দ্রব্যের মূল্য সহনশীর পর্যায় রাখতে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানান।
সাতক্ষীরা শহরের কাটিয়া কলেজ রোড এলাকার বাসিন্দা আবু সাইদ জানান, আমার এই ৬৫ বছর বয়সে কাঁচা মরিচ সর্বোচ্চ ৩০০ থেকে সাড়ে ৩৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখছি। কিন্তু এবারই প্রথম দেখলাম সাতক্ষীরার বাজারে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে। দেশের অন্য অনেক জায়গায় আরও বেশি দামে বিক্রি হয়েছে শুনেছি। তবে সোমবার শহরের সুলতানপুর বড়বাজারে গিয়ে দেখি কাঁচা ঝাল প্রকার ভেদে ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ রোববার এই ঝাল ৬০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বড়বাজারের পাইকারি সবজি ব্যবসায়ি রওশন আলী জানান, বাজারে পণ্যের সংকট থাকলে তার দামও বেড়ে যায়। আবার সরবরাহ বৃদ্ধির সাথে সাথে দাম কমতে থাকে। রোববার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৭ ট্রাক কাঁচা মরিচ আমদানি হয়েছে। রাতেই কিছু কাঁচা মিরচ সুলতানপুর বড় বাজারে আসে। এই মরিচ গুলো আজ খুব সকালে বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। পরে কাঁচা মরিচ বেশি পরিমাণ আসায় দামও কমে যায়। আগামীকাল থেকে দাম আরও কমে যাবে।
বাজারের খুচরা সবজি ব্যবসায়ি ইসমাইল হোসেন জানান, আজ ভোরে পাইকারি বাজারে কাঁচা মরিচের দাম বেশি ছিল। সরবরাহ বাড়ার সাথে সাথে দাম কমে যায়। আমি একটু দেরিতে ভারতীয় আমদানিকৃত কাঁচা মরিচ ২৫০ টাকা এবং দেশী জাতের মরিচ ২০০ টাকায় কিনেছি। এখন খুচরা আমদানিকৃত কাঁচা মরিচ ৩০০ টাকা এবং দেশীটা ২৫০ টাকায় বিক্রি করছি। তবে সকালে অনেকে বেশি দামে কাঁচা মরিচ কিনে লোকসানের মুখে পড়েছেন বলে জানান তিনি।
এদিকে কাঁচা মরিচের ঝাজে নাকাল ছিল সাতক্ষীরাসহ পুরো দেশবাসী। গত কয়েক দিনের ব্যবধানে সাতক্ষীরার বাজারে কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে বিক্রি হয় ৫৫০ ও ৬০০ টাকা কেজি দরে। রোববার (২ জুলাই) থেকে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় কাঁচা মরিচ আমদানি শুরু হওয়ায় দ্রুত বাজারে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এদিন মাত্র ৭ ট্রাক ভারতীয় কাঁচা মরিচ আমদানি হওয়ায় এক লাফে দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে। এভাবে আমদানি অব্যহত থাকলে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে দাম চলে আসবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়িরা।
ভোমরা স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম খান জানান, রোববার শুরুতেই ভারত থেকে ৭ ট্রাক কাঁচা মরিচ আমদানি হয়েছে। আমাদের যথেষ্ট এলসি ও আইপি পারমিশন আছে। আজ থেকে প্রতিদিন প্রায় ২০/২৫ ট্রাক কাঁচা মরিচ এই বন্দর দিয়ে ঢুকবে। সকালে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি বাজারে ইতিমধ্যে কাঁচা মরিচরে দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে। এভাবে আমদানি অব্যহত থাকলে আগামী ২/১ দিনের মধ্যে কাঁচা মরিচের বাজার স্থিতিশীল অবস্থা চলে আসবে।
প্রসঙ্গত, বর্ষা মৌসুমে দেশি কাঁচা মরিচের উৎপাদন কমে গেছে। পাশাপাশি ব্যবসায়ি সিন্ডিকেটের কারসাজিতে দেশি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি সাড়ে ৫শ’ টাকা থেকে ৬শ’ টাকা পর্যন্ত।
খুলনা গেজেট/এনএম